অনলাইন ডেস্ক :
তীব্র শীতের মধ্যেই তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধসে পড়া হাজারো ভবনের নিচে আটকা পড়াদের জীবিত উদ্ধারে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। সোমবার ভোররাতের ওই ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। ধ্বংসযজ্ঞের যে ধরন, তাতে এই সংখ্যা এখনকার কয়েকগুণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পে সম্ভবত শিশুই কয়েক হাজার মারা পড়েছে, বলেছেন জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা।
ভূমিকম্পের প্রায় ৬০ ঘণ্টা পরেও চলছে উদ্ধারকাজ। এখনো বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া বিরূপ আবহাওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। সময় যত যাচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা লোকদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কাও তীব্র হচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্কবার্তা দিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কের গাজিয়ানটেপ শহরে সব দোকানপাট বন্ধ। বিস্ফোরণে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তীব্র শীতের মধ্যে উষ্ণ থাকতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে বেঁচে যাওয়া বাসিন্দাদের। মিলছে না পেট্রলও। প্রায় ১০০ লোক কম্বল মুড়ি দিয়ে রাত কাটিয়েছেন স্থানীয় একটি বিমানবন্দরের টার্মিনালে। ছোট ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে বিমানবন্দরটিতে যাওয়া জাহিদে সুৎকু বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেন, আমরা ভবন ধসে পড়তে দেখেছি। তাই জানি, আমরা কতটা ভাগ্যবান। কিন্তু এখন আমাদের জীবন খুবই অনিশ্চিত। আমি কীভাবে এই বাচ্চাদের দেখভাল করবো? কাহরামানমারাস শহরে আলী সাগিরোগ্লু নামে এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের কাছে জরুরি সেবা পাওয়া নিয়ে হতাশাপ্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি আমার ভাইকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনতে পারছি না। আমার ভাগনেকে ফেরাতে পাচ্ছি না। চারদিকে দেখুন, এখানে কোনো সরকারি কর্মকর্তা নেই। তিনি বলেন, আমি গত দুদিনে এখানে কোনো সরকারি লোক দেখিনি। বাচ্চারা ঠান্ডায় জমছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে নিয়োজিত উদ্ধারকর্মীরা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকেপড়া লোকদের বের করে আনতে যত দেরি হবে, তাদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা তত কমে আসবে বলে জানিয়েছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটির জরুরি সেবা বিশেষজ্ঞ ড. রিচার্ড এডওয়ার্ড মুনের মতে, পানি এবং অক্সিজেনের স্বল্পতাই ভুক্তভোগীদের বেঁচে থাকার পথে প্রধান বাধা। তিনি বিবিসি’কে বলেছেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীর থেকে দৈনিক ১ দশমিক ২ লিটার পর্যন্ত পানি বেরিয়ে যেতে পারে। এটি ঘটতে পারে প্র¯্রাব, নিঃশ্বাস, জলীয় বাষ্প এবং ঘামের মাধ্যমে। স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্ক-সিরিয়ায় আঘাত হেনেছিল ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পটি। ফলে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকেপড়া লোকদের শরীর থেকে এরইমধ্যে প্রচুর পানি বেরিয়ে গেছে। এই অবস্থায় একজন মানুষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানিয়েছেন ড. রিচার্ড। তার ওপর, সিরিয়া-তুরস্কে এখন চলছে শীতকাল। একজন গড়পড়তা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীর উষ্ণ থাকার ক্ষমতা না হারিয়ে সর্বনিম্ন ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। কিন্তু যখন শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়, তখন গল্প ভিন্ন।ড. রিচার্ড বলেন, ওই মুহূর্তে শরীরের তাপমাত্রা মূলত পরিবেশের তাপমাত্রাকে অনুসরণ করে। এবং এটি যে হারে ঘটতে পারে তা নির্ভর করবে ব্যক্তির উষ্ণ থাকা বা ভূগর্ভে কতটা আশ্রয়ে থাকছেন তার ওপর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হতভাগ্য অনেকেই হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২