April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, March 13th, 2023, 8:06 pm

তোশাখানা ইস্যুতে অনেকদিন ধরেই উত্তাল পাকিস্তান

অনলাইন ডেস্ক :

তোশাখানা ইস্যুতে অনেকদিন ধরেই উত্তাল পাকিস্তান। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গত বছর এ প্রশ্নে নির্বাচনে ৫ বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এসবের মধ্যেই গত ২০ বছর ধরে সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশিদের কাছ থেকে যেসব উপহার গ্রহণ করেছেন, সেসবের বিস্তারিত প্রকাশ করেছে পাকিস্তান সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে গত রোববার তোষাখানার বিস্তারিত হালনাগাদ করা হয়। তোশাখানা উপহার থেকে উপকৃত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, প্রয়াত সামরিক স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাফরুল্লাহ খান জামালি, সিনেট চেয়ারম্যান সাদিক সানজরানি, অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি, শেখ রশিদ আহমেদ, খুরশীদ কাসুরি, আবদুল হাফিজ শেখ, জাহাঙ্গীর তারিন, শাহ মেহমুদ কুরেশি এবং ডক্টর আতাউর রহমান। নথি অনুসারে, কয়েকটি উপহার ছাড়া বেশিরভাগই বিনামূল্যে রেখেছিলেন গ্রহীতারা। জারদারি এবং নওয়াজ শরিফ একটি করে বুলেটপ্রুফ গাড়ি পেয়েছিলেন। তোশাখানায় কিছু অর্থ জমা দিয়ে এই গাড়িগুলো তারা রেখে দিয়েছিলেন। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান এবং তার স্ত্রী পাঁচটি মূল্যবান হাতঘড়ি, অলঙ্কার এবং অন্যান্য জিনিসপত্র পেয়েছেন। পারভেজ মোশাররফ ও শওকত আজিজ এক পয়সা না দিয়েই শত শত বিদেশি উপহার নিজেদের কাছে রেখেছেন। বিদেশি গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত উপহারের বিনিময়ে এই সরকারি পদধারীরা; বিশেষ করে শাসকরা কোটি কোটি টাকার উপহার নিয়েছিলেন।
আসিফ আলী জারদারি
বিশদ বিবরণ থেকে জানা যায়, জারদারি ২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি একটি বিএমডব্লিও গাড়ি রেখেছিলেন। গাড়িটির মূল্য ২ কোটি ৭৩ লাখ রুপি নির্ধারণ করা হয়েছিল। সাবেক প্রেসিডেন্ট ৪০ লাখ রুপি এটির জন্য পরিশোধ করেছিলেন। ২০১১ সালের মার্চে ১০ লাখ রুপির একটি ঘড়ি এবং অন্যান্য কিছু আইটেমের জন্য এক লাখ ৫৮ হাজার ২৫০ রুপি পরিশোধ করেছিলেন তিনি। এর তিন মাস পর ১০ লাখ ২৫ হাজার রুপি মূল্যের একটি হাতঘড়ির জন্য পরিশোধ করেছিলেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ২১৯ রুপি। এ ছাড়া ২০১১ সালের অক্টোবরে ৩ লাখ ২১ হাজার রুপির বিনিময়ে ১০ লাখ রুপি মূল্যের একটি কার্টিয়ার হাতঘড়ি ও একটি বন্দুক রেখেছিলেন জারদারি।
নওয়াজ শরিফ
পিএমএল-এন সর্বোচ্চ নেতাকে ২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি উপহার দেওয়া হয়েছিল; যার মূল্য ছিল ৪০ লাখ ২৫ হাজার রুপি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নথি অনুসারে, ৬ লাখ ৩৬ হাজার রুপি দেওয়ার পরে এটি রেখে দিয়েছিলেন। শরিফ কোন ক্ষমতায় এটি গ্রহণ করেছিলেন, নথিতে তা উল্লেখ করা হয়নি।
ইমরান খান
ইমরান খান ৩০ লাখ ৮ হাজার রুপি মূল্যের একটি গ্রাফ ঘড়িসহ পাঁচটি মূল্যবান হাতঘড়ি পেয়েছেন। এর জন্য ২০১৮ সালের অক্টোবরে ৭ লাখ ৫৪ হাজার রুপি জমা করেছিলেন তিনি।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সাড়ে ৮ কোটি রুপি মূল্যের একটি গ্রাফ ঘড়ি, ৫৬ লাখ রুপি মূল্যের এক জোড়া কাফলিঙ্ক, ১৫ লাখ রুপির একটি কলমের জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ২ কোটি রুপি জমা দিয়েছিলেন ইমরান। এ ছাড়া ১৫ লাখ রুপি মূল্যের আরেকটি রোলেক্স ঘড়ির জন্য ২ লাখ ৯৪ হাজার রুপি তিনি জমা দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ঘড়ি এবং অন্যান্য কিছু আইটেমের জন্য ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৬০০ রুপি জমা দিয়ে ৯ লাখ রুপি মূল্যের আরেকটি রোলেক্স হাতঘড়ি রেখেছিলেন তিনি। পরের বছরের অক্টোবরে ৯ লাখ ৩৫ হাজার রুপি পরিশোধ করে ১৯ লাখ রুপির একটি ঘড়ি রেখেছিলেন ইমরান। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ২৪ লাখ রুপি জমা দিয়ে ৪৪ লাখ রুপি মূল্যের আরেকটি রোলেক্স ঘড়ি রাখেন তিনি। একই মাসে তার স্ত্রী বুশরা বিবি ৯০ লাখ রুপি জমা দিয়ে এক কোটি রুপি মূল্যের একটি নেকলেস, ২৪ লাখ রুপি মূল্যের একটি ব্রেসলেট, ২৮ লাখ রুপি মূল্যের একটি আংটি এবং এক লাখ ৮৫ হাজার রুপি মূল্যের এক জোড়া কানের দুল রেখেছিলেন।
আরিফ আলভী
প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির স্ত্রী সামিনা আলভি ১১ লাখ ১৯ হাজার টাকার একটি নেকলেস ২০১৯ সালের অক্টোবরে গ্রহণ করেছিলেন। এটির জন্য তিনি পরিশোধ করেছিলেন ৮ লাখ ৬৫ হাজার রুপি। প্রেসিডেন্ট নিজেই ১০ লাখ ২০ হাজার রুপির পরিশোধ করে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২৫ লাখ রুপি মূল্যের একটি রোলেক্স ঘড়ি রেখেছিলেন। সাবেকমন্ত্রী শেখ রশিদ ২০০৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ৩ হাজার ৪২০ রুপির পরিশোধ করে দুটি স্বর্ণমুদ্রাসহ কয়েক ডজন উপহার রেখেছিলেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুরশিদ এম কাসুরি ২০০৫ সালে বেশ কয়েকটি উপহার পেয়েছিলেন। এগুলো তিনি বিনামূল্যে রেখেছিলেন। সাবেক স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফ ২০১২ সালের নভেম্বরে ৮ লাখ ৯০ হাজার রুপি মূল্যের একটি গ্রাফ ঘড়িসহ বেশ কিছু উপহারের জন্য ২ লাখ ১৮ হাজার রুপি পরিশোধ করেছিলেন। সূত্র: দ্য ডন