নিজস্ব প্রতিবেদক:
থানায় রোদ-বৃষ্টিতে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার যানবাহন। নানা জটিলতায় ওসব যানবাহনের বেশির ভাগের মালিককেও পাওয়া যায় না। ফলে নষ্ট হচ্ছে শত শত যানবাহন। সড়ক দুর্ঘটনা, চোরাই পণ্য, মাদকদ্রব্য বহনসহ বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশ মোটরসাইকেল, ট্রাক, বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ইত্যাদি যানবাহন জব্দ করে। আর জব্দ করার পর মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওসব যানবাহন অযত্নে থানা চত্বরে পড়ে থাকে। একপর্যায়ে সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে মালিকের না আসা, আদালতের নির্দেশনা ছাড়া ওসব যানবাহন নিলামে বিক্রি করতে না পারা এবং থানা কর্তৃপক্ষও জব্দ যানবাহন সম্পর্কে আদালতকে কিছু অবগত না করার কারণেই মূলত থানায় জব্দ যানবাহন নষ্ট হচ্ছে। ডিএমপি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিভিন্ন অভিযোগে জব্দ করা যানবাহন ডিএমপির বিভিন্ন থানা চত্বরের বেশির ভাগ অংশ দখল করে রেখেছে। ওই কারণে থানা চত্বরে চলাচলের জায়গাও সংকুচিত হচ্ছে। জব্দ করা ওসব গাড়ি রাখার কোনো ছাউনি না থাকায় খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। আর ওসব যানবাহনের মালিক না আসায় যানবাহনগুলো বছরের পর বছর থানা চত্বরে পড়ে থাকলেও আইনি জটিলতায় বিক্রিও করা যায় না। মামলার আলামত হিসেবে এগুলো রাখতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, থানা চত্বরে অযত্নে খোলা জায়গায় পড়ে থাকা যানবাহনের বেশির ভাগ চেনারও উপায় নেই। ডাম্পিং ও থানা চত্বরে কতসংখ্যক যানবাহন রয়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে তারও সঠিক তথ্য নেই। তবে থানাভেদে কমবেশি ৩০ থেকে ৪০টা রয়েছে। কর্তৃপক্ষের ধারণা, ওসব যানবাহনের দাম কয়েকশ কোটি টাকা হবে বলে। আদালতের নির্দেশনা না পাওয়ায় ওসব যানবাহন নিলামে বিক্রিও করা যাচ্ছে না। ফলে অনেক যানবাহনই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে মাটিতে দেবে যাচ্ছে। কিছু যানবাহনের যন্ত্রাংশ খুলে পড়ছে, চুরিও হয়ে যাচ্ছে। তবে কোনো দুর্ঘটনায় পর মালিক যদি গাড়ি ফিরে পেতে চায় তবে আদালতে আবেদন করে। আবেদনের পর আদালত থানা পুলিশকে মালিকানার তথ্য যাচাই করে প্রতিবেদন দিতে বলেন। পুলিশ প্রতিবেদন দিলে জব্দ করা গাড়ি মালিককে ফেরত দেয়া যায় কি না ওই নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যানবাহনের মালিক আদালতে আবেদন করেন না।
সূত্র আরো জানায়, কোনো থানা এলাকায় জব্দ করা গাড়ি রাখার জায়গা না থাকলে থানা কর্তৃপক্ষ আদালতকে অবহিত করলে সেগুলো নিলামে বিক্রি কিংবা ধ্বংস করার নির্দেশনা দিতে পারেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে থানা কর্তৃপক্ষ সেটি করছে না। বিগত ২০০৬ সাল পর্যন্ত জব্দ করা যানবাহনের ডাম্পিং স্টেশন ছিল শাহবাগ থানার আঙিনা। পরে সেটি বাতিল করা হয়। তারপরও সেখানে কয়েক হাজার গাড়ি পড়ে আছে। জায়গার অভাবে একটির ওপর রাখা হয়েছে আরেকটি গাড়ি। কোনটি কত বছর আগের তাও কর্তৃপক্ষের জানা নেই। জব্দ করা যানবাহনের বেশির ভাগের বৈধ কাগজপত্র নেই অথবা চোরাই। মামলার আলামত হিসেবে যানবাহনগুলো বছরের পর বছর থানা চত্বরে পড়ে থাকছে। আর কাগজপত্র না থাকলে কিংবা আদালতে মামলা থাকলে নিষ্পত্তির জটিলতায় বেশির ভাগ মালিক যোগাযোগ করে না। ফলে আদালতের নির্দেশনা না আসায় জব্দকৃত যানবাহন মালিককে ফেরত দেয়া যায় না।
এদিকে এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) হাফিজ আল আসাদ জানান, থানায় পড়ে থাকা গাড়িগুলো মামলার আলামত। আদালতের নির্দেশে ওসব গাড়ির নিষ্পত্তি করা হয়। এর বাইরে কিছু করার নেই। যেসব গাড়ির মালিক পাওয়া যায় না, সেগুলোর নিলাম হলে বিক্রি করা যায়।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক