নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাসসেবার আওতায় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প-কারখানা স্থাপনে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সেখানে জ্বালানি হিসেবে ব্যাপক হারে গ্যাসের চাহিদা বাড়বে। কিন্তু ওই চাহিদা পূরণে এখনো গ্যাস সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস সঞ্চালন অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প এলাকাগুলোয় গ্যাসের বৃহৎ সঞ্চালন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার এক বিনিয়োগ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বৃহৎ ৬টি প্রকল্পে বিভক্ত ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলা গ্যাস সংযোগের আওতায় আসবে। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবে। রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি জিটিসিএল ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিতরণ কোম্পানিগুলোকে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করে আসছে। বর্তমানে সংস্থাটি প্রকল্পগুলোয় বিনিয়োগের জন্য বিদেশী অর্থায়নের উৎস খুঁজছে। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পরিকল্পনা সফল হলে আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যেই সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব হবে। তাতে গোটা দক্ষিণাঞ্চলেই অর্থনীতির গতিচিত্রই পাল্টে যাবে। পরিকল্পনার অধীন ৬ প্রকল্পের মধ্যে ৪টি ২০২৫ সাল নাগাদ বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। আর বাকি দুটির মধ্যে একটি ২০২৯ ও অন্যটি ২০৩৪ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। ওই ৬ প্রকল্পের আওতায় মোট ৫৮২ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হবে। মূলত খুলনা, বরিশাল ও পদ্মার জাজিরা প্রান্তের ক্রমবর্ধমান শিল্পায়নকে ঘিরে ওই সঞ্চালন লাইন নির্মাণ পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, খুলনা ও বরিশাল বিভাগকে গ্যাস নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসতে পটুয়াখালীর পায়রা থেকে বরিশাল সদর পর্যন্ত এবং বরিশাল থেকে খুলনা পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণে গৃহীত প্রকল্পটিতে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আমদানীকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পায়রা বন্দরে রিগ্যাসিফিকেশনের মাধ্যমে বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলে বিতরণ করা হবে। সেজন্য পায়রা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার এবং বরিশাল থেকে খুলনা পর্যন্ত ১০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। ২০২২ সালে শুরু করে ২০২৫ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখনো প্রকল্পে অর্থায়নের উৎস নিশ্চিত করা যায়নি। তাছাড়া ক্রস বর্ডার পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে আমদানীকৃত এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের জন্য সাতক্ষীরার ভোমরা থেকে খুলনা পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণে প্রস্তাবিত আরেকটি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকা। ইতিমধ্যে ওই প্রকল্পের রুট জরিপকাজ শেষ হয়েছে। ভারতের সঙ্গে জিআইএ সই হওয়া সাপেক্ষে প্রকল্পের কাজ জিটিসিএল শুরু করবে। ওই প্রকল্পে বিদেশী সহায়তার জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের সংশোধিত পিডিপিপি ইতিমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য মাদারীপুরের টেকেরহাটে বাণিজ্যিক হাব গড়ে তোলা হচ্ছে । সেখানে সরকারের শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ওসব শিল্প-কারখানায় গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য খুলনা থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে টেকেরহাট পর্যন্ত ৭৭ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করবে জিটিসিএল। ১ হাজার ১৭৭ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত ওই প্রকল্পে অর্থায়নে জিটিসিএল বিদেশী উৎস খুঁজছে। ইতিপূর্বেই ইআরডি থেকে সংশ্লিষ্ট এক দাতা সংস্থার অনুবিভাগে অর্থায়নের জন্য এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া ঢাকার সঙ্গে গ্যাস সঞ্চালন নেটওয়ার্ক তৈরির লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া এবং পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে টেকেরহাট পর্যন্ত সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণের আরেকটি প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে জিটিসিএল। ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সরকার ওই প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। তাছাড়া, ফরিদপুর ও মাদারীপুরে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে ১১৫ কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা তৈরি করেছে জিটিসিএল। দীর্ঘমেয়াদি ওই পরিকল্পনায় ১ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে টেকেরহাট থেকে বরিশাল পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। গ্যাসপ্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জিটিসিএল। তাছাড়া ভোলা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৬০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের আরেকটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে জিটিসিএল। আগামী ১০ বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে জিটিসিএল। আর তার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪ কোটি টাকা।
এদিকে দেশের জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় সরকার বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে খুলনা অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে খুলনা পর্যন্ত দীর্ঘ একটি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু গ্যাস সংকটে ওই সঞ্চালন লাইন সক্রিয় করা যায়নি।
অন্যদিকে এ বিষয়ে জিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী রুখসানা নাজমা ইছহাক জানান, গ্যাসপ্রাপ্তি সাপেক্ষে দেশের যে কোনো প্রান্তে সঞ্চালন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর জিটিসিএল। ওই লক্ষ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর জন্য বেশকিছু প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। অর্থায়ন নিশ্চিত হলে আশা করা যায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিটিসিএল কাজ সম্পন্ন করতে পারবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি