November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, October 5th, 2023, 9:41 pm

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব ‘শান্তিপূর্ণ অঞ্চল’ তৈরি করতে পারে: মোমেন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বলেছেন, যৌথ শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য কৌশলগত অংশীদারিত্ব দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের মধ্যে সহযোগিতায় একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে পারে।

তিনি বলেন, ‘যদি আমরা ভাগ করে নেওয়া সমৃদ্ধির কথা চিন্তা করি, তবে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে এগোতে হবে।’

মোমেন বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার নীতি অনুসরণ করছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় তারা শান্তির সংস্কৃতি প্রচারের মাধ্যমে এ অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পক্ষে কথা বলছেন।

১১তম বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সংলাপ-২০২৩-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মোমেন বলেন, বাংলাদেশ ‘আত্মবিশ্বাস’ নিয়ে ‘এগিয়ে’ যাচ্ছে। ‘নিঃসন্দেহে ভারত এই অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ এবং বাংলাদেশ অবশ্যই নিজেকে এই অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে দাবি করতে পারে।’

তিনি বলেন, এই দুই প্রতিবেশীর অংশীদারিত্ব এই দেশগুলোর পাশাপাশি এই অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি আনতে গুরুত্বপূর্ণ।

মোমেন বলেন, ‘আমরা আমাদের যাত্রায় ভারতের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা ও সহায়তা জোরদার করার ওপর জোর দিচ্ছি।’

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, ভারত সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর প্রমুখ উপস্থিত ছিল।

ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিওনাল সার্ভে (বিএফআরএস) ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সংলাপ’ এবং ‘সিলেট-শিলচর উৎসব’ এই দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

মোমেন বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বর্তমানে একটি ‘গোল্ডেন চ্যাপ্টার’ বা ‘সোনালী আধ্যায়’-এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং ‘প্রতিবেশী কূটনীতির’ জন্য ‘রোল মডেল’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

দুই প্রতিবেশীর মধ্যে শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ ডায়ালগ, ট্র্যাক ওয়ান পয়েন্ট ফাইভ একটি সহায়ক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

১০ বছর আগে শুরু হওয়া সংলাপটি গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ এটি আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উভয় আলোচনাকে অন্তর্ভুক্ত করার পথ প্রশস্ত করেছে।

মোমেন বলেন, তারা একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতিকে সমর্থন করার জন্য শক্তিশালী ভৌত অবকাঠামো সহ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে চান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের আকাঙ্খা হল ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক, আধুনিক, উন্নত দেশে রূপান্তর করা এবং আমাদের জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ এবং দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করার ত্রিশ লাখ শহীদের স্বপ্ন পূরণ করা।’

মোমেন বলেন, তাদের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ফোকাস করতে হবে।

(i) অর্থনৈতিক সহযোগিতা: বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক একীকরণ সহজতর করা একটি প্রধান অগ্রাধিকার থাকা উচিত। আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি, বাণিজ্য বাধা হ্রাস এবং পারস্পরিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য বিনিয়োগের প্রচারের উপায়গুলো অন্বেষণ করতে হবে। কর্মের সবচেয়ে বাস্তব কারণ হবে ‘বাই-ব্যাক’ প্রকল্পের একটি সিরিজ স্থাপন করা, যেখানে ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন করবে এবং ভারতে এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে পুনরায় রপ্তানি করবে।

(ii) উন্নত সংযোগ: উন্নত সংযোগ আমাদের জন্য এবং সেইসঙ্গে অঞ্চলের জন্য অভূতপূর্ব সুবিধা নিয়ে আসবে। আমাদের উচিত রাস্তা, রেল ও জলপথের নেটওয়ার্কসহ সংযোগ প্রকল্পগুলোকে অগ্রসর করার দিকে মনোনিবেশ করা। যা আমাদের দুই দেশের মধ্যে পণ্য ও মানুষের চলাচলকে সহজতর করবে। আমাদের বিবিআইএন মোটর ভেহিকেল চুক্তি কার্যকর করার চেষ্টা করা উচিত। বাংলাদেশকেও ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় মহাসড়কের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

(iii) জ্বালানি সহযোগিতা: জ্বালানি হলো আরেকটি ক্ষেত্র; যাতে আমাদের দুই দেশ এবং এই অঞ্চলের জন্য দ্রুত অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য প্রচুর সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের নির্দিষ্ট তুলনামূলক সুবিধা এবং আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই সেক্টরগুলোতে আমরা কতটা ফলপ্রসূভাবে একে অপরের পরিপূরক হতে পারি তা আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে। এই বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগের পাশাপাশি, আমাদের জ্বালানি খাতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা ত্বরান্বিত করতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপালের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতার জন্য আলোচনা শুরু করেছি।

(iv) পানি খাতে সহযোগিতা: আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে, যা সুষম পানি ব্যবস্থাপনা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর সহযোগিতা অপরিহার্য করে তোলে। অভিন্ন নদী, বিশেষ করে তিস্তার জন্য পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এই ধরনের সহযোগিতা শুধু পানি সম্পদের দক্ষ ব্যবহারই নিশ্চিত করে না, বরং দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও সৌহার্দ্যও বৃদ্ধি করে। পরিশেষে, পানি খাতে একটি সহযোগিতামূলক পদ্ধতি আমাদের জনসংখ্যার সামগ্রিক কল্যাণে অবদান রাখবে।

(v) জন-মানুষের মধ্যে যোগাযোগ: বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই ঘনিষ্ঠ মিথস্ক্রিয়া উভয় দেশের নাগরিকদের একে অপরের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে সাহায্য করে, এইভাবে পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রচার করে। এটি বাণিজ্য, পর্যটন ও শিক্ষা বিনিময়কে সহজতর করে, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় ভিসা পাওয়া একটু কঠিন ও সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠেছে।

মোমেন বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য, বিশেষ করে চিকিৎসা রোগীদের জন্য ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, গবেষক ও থিঙ্ক ট্যাঙ্করা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও জোরদার করার উপায় ও উপায়ের ওপর আলোকপাত করবেন।

—-ইউএনবি