জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় মরুভূমির ফল সাম্মাম চাষ শুরু হয়েছে। সাম্মাম চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন সাম্মাম চাষী। উচ্চ মূল্যের নতুন ফল হিসেবে সাম্মাম চাষ নিয়ে তারা বেশ আশাবাদী।
অনেকে বলেন রকমেলন। আবার হানিডিউ মেলন নামেও অনেকে চেনেন। রসালো মিষ্টি ও পুষ্টিগুণে ভরপুর মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় ফল সাম্মাম পাকলে উপরটা হলুদ। ভেতরটাও গাঢ় হলুদ রঙের। একেকটি সাম্মামের ওজন দুই থেকে তিন কেজি।
প্রথমবারের মতো মরুভূমির এই ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেছেন দক্ষিণ সুরমার জালালপুর ইউনিয়নের রায়খাইল গ্রামের প্রবাস ফেরত হাব্বান মিয়া ও বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা জহির আলী। তারা ব্যক্তিগত ভাবে প্রথম বারের মত ১০০ শতক জায়গায় পরীক্ষামূলক ভাবে সাম্মাম চাষ শুরু করেছেন।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের রায়খাইল মীরগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাস দু’য়েক আগে থেকে চাষ করা জমিতে দুই ফুটের মত লতানো গাছগুলো মাচায় উঠার চেষ্টা করছে। পাশে বেশ কয়েকজন লোক পুরো জমিতে পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন।
আলাপকালে সাম্মাম চাষী জহির আলী জানান, ঢাকার একটি এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে বীজ সংগ্রহ করে এবার ১০০ শতাংশ জমিতে তরমুজ জাতীয় সাম্মাম বীজ বপন করেছেন। দেড় মাসের মধ্যেই ফল আসতে শুরু করে। তিন মাসের মধ্যেই পরিপক্ক হয় সাম্মাম ফল। এক জাতের সাম্মামের বাহিরের অংশ সবুজ আর ভিতরে লাল এবং আরেক জাতের সাম্মামের বাহিরের অংশ হলুদ আর ভিতরের অংশ লাল হলেও দুই ধরনের ফল খেতে মিষ্টি ও সু-স্বাদু।
তিনি জানান, দেশে সাম্মামের ব্যাপক চাহিদা। তার কাছ থেকে পাইকাররা ট্রাকে করে পাশের জেলা গোপালগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। শীতকাল বাদে বছরে চারটি মৌসুমেই এর ফলন পাওয়া যায়। চাহিদা বাড়ে রমজান মাসে।
তিনি বলেন, তরমুজ জাতের সাম্মাম ফল উৎপাদনে তেমন কোন বেগ পেতে হয়নি। বীজ রোপন থেকে পরিচর্যা উপর গুরুত্ব দিতে হয়েছে। এছাড়া সময় মতো জৈব সার দেয়া হয়। এভাবে তিন মাস যেতে না যেতেই সাম্মাম পরিপক্ক ফলে রূপ নেয়। এই ফলের বেশ চাহিদা রয়েছে। নতুন জাতের এই ফল চাষ করলে সবাই লাভবান হবে বলে তিনি মনে করেন।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা উপসহকারী কৃষি অফিসার শাহিদা সুলতান বলেন, ‘সাম্মাম মূলত মরু অঞ্চলের ফল। খেতে রসালো মিষ্টি হওয়ার পাশাপাশি এতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। আমাদের দেশে ফলটি সাম্মাম হিসেবে পরিচিতি পেলেও অনেকে এটাকে রকমেলন বা হানিডিউ মেলনও বলে। আমাদের দেশে এর খুব একটা চাষ হয় না। তবে অনেক কৃষক এখন বিদেশি এই ফল চাষে আগ্রহী হয়েছেন। জালালপুরে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ফলটির চাষ শুরু হয়েছে। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের উপ-পরিচালক কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, সিলেটের বেশ কয়েকটি এলাকায় বাণিজ্যিক ভাবে সাম্মাম চাষ শুরু হয়েছে। শসা এবং তরমুজের মতো অনেকটা সংকর জাতের এই ফল গাছে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম। ফলনও বেশ ভালো। খেতে সু-স্বাধু এই ফলের বেশ চাহিদা রয়েছে। এগুলো বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হবেন।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি