নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের শত শত নদী দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। কোনোভাবেই তাদের থামানো যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে দেশের ৬৪ জেলায় ৬৩ হাজার ২৪৯ জন দখলদার চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু দখলদারদের উচ্ছেদ করা হলেও আবারো নতুন করে নদীর জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে। গত ৫০ বছরে দেশের প্রায় একশ’ নদী বিলীন হয়ে গেছে এবং আরো শতাধিক নদী মৃত্যুর প্রহর গুনছে। দখলের কারণে দেশের নদ-নদীগুলো তাদের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ভরাটের কারণে নদীগুলোতে পানি প্রবাহ কমে গেছে। ফলে ¯্রােতস্বিনী নদী পরিণত হয়েছে আজ সরু নালায়। বর্তমানে ছোট-বড় ৩ শতাধিক নদী বিলীন হতে বসেছে। পরিবেশবিদ, আইনবিদ এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ক্রমান্বয়েই দীর্ঘ হতে দীর্ঘতর হচ্ছে নদী দখলের তালিকা। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ২০১৯ সালের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী ৬৪ জেলায় ওই দখলদারের সংখ্যা ৬৩ হাজার ২৪৯ আর উচ্ছেদ হয়েছে ১৮ হাজার ৭৮২। উচ্ছেদের হার ২৯ দশমিক ৬৯ ভাগ। তার আগের বছরে দখলদারের সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৩৯০। এক বছরের ব্যবধানে ওই সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার বেড়েছে। যদিও নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, গোপালগঞ্জে উচ্ছেদ অভিযান হতাশাজনক। শক্তিশালী অবৈধ দখলদার ব্যবসা, শিল্প ও শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, বিদ্যুৎ সোলার প্লান্ট, ডকইয়ার্ড স্থাপনের মাধ্যমে ঢাকা ও ঢাকার চারপাশে জেলাসমূহের নদ-নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, ধলেশ্বরী, বালু, শীতলক্ষ্যা, বংশী, পুঙলী, মেঘনা ও পদ্মা নদীর জমি দখল করছে। তাছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কল্যাণ সমিতি সীমানা প্রাচীর দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। ঢাকা বিভাগের অবৈধ দখলদারের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৬ হাজার ৭৫৮ জন, নারায়ণগঞ্জ ৭৮৫, মুন্সীগঞ্জ ১১৭, গাজীপুর ১০৫, মানিকগঞ্জ ১৩৯৯, শরীয়তপুর ২৬১, কিশোরগঞ্জ ১২৩, নরসিংদী ২৫০, মাদারীপুর ৩৮৩, গোপালগঞ্জ ৫৪০, রাজবাড়ী ৪০৬, ফরিদপুর ১৮৩৪, টাঙ্গাইল জেলায় ১৭৮৮ জন রয়েছে। ওই সমস্ত জেলা থেকে ১ হাজার ৪৫২ জন অবৈধ দখলদারকে ও ৫ হাজার ৯৩৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশকে ১৩শ’ নদীর দেশ বলা হলেও বর্তমানে তা নেই। বর্তমানে দেশে দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ৭১০টি। তার মধ্যে ৩শ’ বড় নদী ও ৪শ’ শাখা-উপনদী রয়েছে। আর আন্তর্জাতিক নদী হিসাব পরিচিত ৫৭টি নদী। তার মধ্যে ভারত থেকে প্রবাহিত ৫৩টি নদী, বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবাহিত ১টি ও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত ৩টি। কিন্তু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ৪৫০টি নদীই অবৈধ দখলদারদের দ্বারা আক্রান্ত। তবে খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি নদী দখলদার। সেখানে দখলদারের সংখ্যা ১১ হাজার ২৪৫। ওওই বিভাগে ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৮৯০টি অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর নদী দখলদারের সংখ্যা সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে, ২ হাজার ৪৪ জন। তারা উচ্ছেদ করা হয়েছে ৫৭৬ জনের অবৈধ স্থাপনা। ঢাকা বিভাগে নদী দখলদারের সংখ্যা ৮ হাজার ৮৯০ এবং উচ্ছেদ করা হয় এক হাজার ৪৫২ জনের ৫ হাজার ৯৩৫টি স্থাপনা।
সূত্র আরো জানায়, এক সময়ে রাজধানী ঘিরে রাখা নদীগুলো প্রধান নৌপথ হলেও এখন দখল ও দূষণে জর্জরিত। কোথাও বালি ফেলে ভরাট করেছে প্রভাবশালী দখলদাররা। কোথাও আবার কলকারখানার রাসায়নিক বর্জ্যে নষ্ট করছে নদীর পানিসহ আশপাশের পরিবেশ। প্রভাবশালীদের লম্বা হাতে নদীগুলো দখলমুক্ত করতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগও ভেস্তে যাচ্ছে। নদী দখল রোধে উচ্চ আদালতের আদেশ কিছু বাস্তবায়িত হলেও অধিকাংশই উপেক্ষিত। দখল দূষণ রোধে উচ্চ আদালত গত ১০ বছরে অর্ধশতাধিক আদেশ দিয়েছেন। যার কিছু আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকিগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলছে। যদিও আইনজীবীদের মতে, আদালতের আদেশের পর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ৭০ ভাগই কার্যকর হয়েছে। তাছাড়া বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর রায়গুলোর কিছু কাজ বাকি আছে এবং বাস্তবায়ন হতে কিছু সময় লাগবে। তবে নদী দখলকারীকে সব ধরনের নির্বাচন ও ঋণ গ্রহণে অযোগ্য ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।
এদিকে এ প্রসঙ্গে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এএসএম আলী আকবর জানান, নদীর বেদখল মুক্ত জায়গা আর দখল হচ্ছে না। উচ্ছেদের পর পুনরায দখল হচ্ছে এমন রিপোর্ট নেই। বরং দিনে দিনে নদী দখল বেড়েছে। তাদের ঝেটিয়ে উচ্ছেদ করা হবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম