April 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, December 11th, 2022, 10:38 am

দলিল রেজিস্ট্রি না করে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেলেন সাবরেজিষ্টার!

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

কুলাউড়া সাবরেজিষ্টারকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখেন জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা জমি ক্রেতা বিক্রেতারা। শেষতক জমি রেজিস্ট্রি না করে তাঁর খাস কামরা থেকে উধাও হয়ে যান। দলিল রেজিস্ট্রি করতে না পেরে বিক্ষুব্ধ মানুষ হতাশ হয়ে ফিরে যান। তবে রোববার কিংবা পরবর্তি কর্মদিবসে আরও বড় ধরণের বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন মানুষ।

দলিল রেজিস্ট্রি করতে আসা মানুষ ও দলিল লেখকরা জানান, কুলাউড়া সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সাবরেজিস্টার মোশাররফ হোসেন চৌধুরী গত ১৬ নভেম্বর বদলি হয়ে গেলে বড়লেখা উপজেলার দায়িত্বরত সাবরেজিস্টার সাইফুল আলমকে কুলাউড়ার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি এর আগে আর অতিরিক্ত হিসেবে কুলাউড়ায় দায়িত্ব পালন করেননি। বৃহস্পতিবার প্রথম দায়িত্ব পালন করতে আসেন কুলাউড়ায়। প্রথম কর্মদিবসেই সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে দেন।

দলিল লেখকরা জানান, সকাল থেকে প্রায় আড়াইশ দলিল রেজিস্ট্রির জন্য জমা হয়। দেড়শতাধিক দলিল তিনি রেজিস্ট্রি করেন। কিন্তু বিকেলে নানা অজুহাতে ঝামেলা পাকান। দলিল রেজিস্ট্রিতে ভূমির ২৫ বছরের রেকর্ড লাগবে, ক্রেতা বিক্রেতার জাতীয় পচিয়পত্র হলে হবে না সাথে জন্মনিবন্ধন কার্ড লাগবে। এসব অযুহাতে দলিল রেজিস্ট্রি বন্ধ রাখেন।

এদিকে সকাল থেকে দলিল রেজিস্ট্রি করতে আসা জমির ক্রেতা বিক্রেতারা বিকেলে দলিল রেজিস্ট্রি বন্ধ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। পৌরসভার সোনাপুরের আব্দুল মনির জানান, আমার জমির সর্বশেষ নামজারি পর্যন্ত আপডেট। তারপরও রেজিস্ট্রি করতে রাজি নন সাবরেজিস্টার। সদর ইউনিয়নের বাগাজুরা গ্রামের জমশেদ আলী জানান, সকাল থেকে ছোট ছোট শিশু নিয়ে মহিলার এসেছেন দলিল রেজিস্ট্রিতে কিন্তু রাত ৭টা পর্যন্ত তারা অপেক্ষায়। কিন্তু সাবরেজিস্টার দলির রেজিস্ট্রি না করায় তারা অমানবিক কষ্ট নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বরমচাল ইউনিয়নের উত্তরভাগ গ্রামের শরীফ উদ্দিন জানান, এক প্রবাসীর কাছ থেকে তিনি জমি কিনবেন। কিন্তু শনিবার প্রবাসী চলে গেলে সেই জমি আর রেজিস্টারি কবে হবে তা সন্দিহান। সদর ইউনিয়নের বাগাজুরা গ্রামের কাতার প্রবাস মাসুক আহমদ জানান, আমি সারাদিন অপেক্ষা করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় দলিল রেজিস্ট্রি করতে না পেরে ফিরে গেছেন।

মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে বিকেল ৫টা থেকে সাবরেজিস্টার দলিল না করায় অবরুদ্ধ করে রাখে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। বিষয়টি জানতে পেরে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ একেএম সফি আহমদ সলমান সাবরেজিস্ট্রি অফিসে আসেন। তিনি বিক্ষুব্ধ মানুষকে শান্তনা দেন। এক পর্যায়ে উপস্থিত বিক্ষুব্ধ মানুষের উদ্দেশ্যে কথা বলে চলে যান। তিনি যাওয়ার পর পর উপস্থিত দলির লেখক কিংবা জমি ক্রেতা বিক্রেতাকে কিছু না বলে পেছন দরজা দিয়ে পালিয়ে যান সাবরেজিস্টার।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মাহমুদুর রহমান খোন্দকার জানান, সাবরেজিস্টার বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। কিন্তু কাউকে কিছু না বলে এভাবে চলে যাওয়াটা উচিত হয়নি। এদিন তিনি সব দলিল রেজিস্ট্রি করতে না পারলে পরবর্তী কর্মদিবসে করে দিবেন বলে উপস্থিত লোকজনকে বলে যাওয়া উচিত ছিলো। তিনি জেলা রেজিস্টারকে কমসময়ের মধ্যে কুলাউড়া একজন সাবরেজিস্টার দেয়ার জন্য জানাবেন।

কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ একেএম সফি আহমদ সলমান বিক্ষুব্ধ মানুষকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলেন, যেহেতু নিয়ম নীতির বাইরে কোন দলিল রেজিস্ট্রি করা সম্ভব নয়। উপস্থিত লোকজনকে পরবর্তী কর্মদিবসে তাদের দলিল রেজিস্ট্রি হবে বলে তিনি জানান।

এব্যাপারে সাবরেজিস্টার সাইফুল আলমের বক্তব্য জানতে তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ০১৭৫৬-৩৪ ৫২ ১৩ নাম্বারে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভি করেননি।