অনলাইন ডেস্ক :
অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হলো মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে স্টেডিয়ামের বাইরে। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের ম্যাচ। দলটির অধিনায়ক বিসমাহ মারুফ টিম বাস থেকে নামতেই দেখা গেল, তার কোলে লাল পোশাকে ফুটফুটে এক শিশু। সন্তান নিয়েই মাঠে এসেছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক। তার সতীর্থ ঠেলছেন বেবি ট্রলি। পাকিস্তান জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি স্ত্রী ও মায়ের দায়িত্বও ভালোভাবে সামাল দিচ্ছেন বিসমাহ। মহামারি ও বায়ো-বাবলের কারণে সন্তান নিয়ে মাঠে আসার বিষয়টি বিতর্কিত হতে পারে, কিন্তু প্যারেন্টাল পলিসি অনুযায়ী আইসিসি এই সুবিধা দিয়েছে। বিসমাহ বলেছেন, ‘একটি বাচ্চার মাকে প্রয়োজন। আমি যদি আমার ক্যারিয়ার চালিয়ে যেতে চাই, প্রশ্ন উঠতে পারে আমার বাচ্চা কোথায় যাবে? এবং যদি আমি মাঠে থাকি তাহলে কে বাচ্চার দেখভাল করবে? একজন ন্যানিকে ভাড়া করা এবং তাকে নিয়ে সব জায়গায় ঘোরাঘুরি করা ব্যয়বহুল। একজন নারী ক্রিকেটার হিসেবে আমাদের ওত বিলাসিতা করার সুযোগ নেই। আমাদের চুক্তি আমাদের বাঁচিয়ে রাখে এবং তা দিয়ে জীবন যাপন করি, কিন্তু প্যারেন্টাল পলিসি ছাড়া, সন্তান নিয়ে খেলে যাওয়া খুব কঠিন।’ ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে মায়ের দায়িত্ব পালন করতে হয়। পাশাপাশি ফিটনেস, ব্যাটিং ও অধিনায়কত্বও নিয়েও ভাবতে হয়। কীভাবে সামলান বিসমাহ? বললেন, ফাতিমা খুব ভালো বাচ্চা, যে কি না রাতে দুই বা তিনবারের বেশি জাগায় না মাকে।
বিসমাহ বললেন, ‘আমি চেষ্টা করি যেন প্র্যাকটিসে যাওয়ার আগে ফাতিমা না জেগে যায়। যদি সে জাগে আমার মা ও ফাতিমা দুজনেই আমাদের সঙ্গে থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়, আমি প্র্যাকটিস থেকে ফিরে তার সঙ্গে দেখা করি। যতক্ষণ আমাকে না দেখে, ততক্ষণ স্বাভাবিক আচরণই করে। কিন্তু আমি যখন সামনে আসি তখন আমাকে ছাড়তে চায় না। সবসময় সে সঙ্গে থাকতে চায়। শুকরিয়া যে সে খুব ভালো মেয়ে। ১০-১১টার মধ্যে সে ঘুমিয়ে যায়। সে ওত সমস্যা তৈরি করে না যতটা আমি অন্য বাচ্চাদের ব্যাপারে শুনি।’
পাকিস্তানের এই ব্যাটসম্যান চলতি বিশ্বকাপে খেলতে আসা আট মায়ের একজন। তবে প্রথম পাকিস্তানি হিসেবে মাতৃত্বের পর জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন। যে দেশে বেশিরভাগ নারী ক্রিকেটারের বিয়ের পরই ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়, সেখানে বিসমাহর গল্প অন্যরকম। তারও একই শঙ্কা জেগেছিল। কিন্তু সৌভাগ্যবশত পরিবারের সমর্থনে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি, ‘আমি আমার পরিবারের সমর্থন পেয়েছিলাম, বিশেষ করে আমার স্বামীর বিশ্বাস আমি অন্য মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারি যারা মা হওয়ার পরও খেলতে চায়।’ ছয় মাস বয়সী ফাতিমার উপস্থিতি পাকিস্তানের বিশ্বকাপ ক্যাম্পকে মাতিয়ে রেখেছে। দলকে উজ্জীবিত করে রেখেছে সে। অধিনায়কের বিশ্বাস, এটি তাদের জন্য ইতিবাচক দিক, ‘সঙ্গে একজন বাচ্চা আছে, এটা দলের জন্য ভিন্ন এক শক্তি, প্রত্যেকে চিন্তামুক্ত থাকে। যখন আপনি একটি জিনিস নিয়েই ভাবতে থাকেন, তখন সেটি চাপ তৈরি করে। কিন্তু একজন বাচ্চা পাশে থাকলে অহেতুক দুশ্চিন্তা থাকে না। আমার দলেও সেই অবস্থা, তারা আমাকে অনেক সহায়তা করছে কেউ বাচ্চাকে কোলে নিয়ে কিংবা ব্যাগ নিয়ে। এটি আমাদের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।’
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা