November 15, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, June 6th, 2022, 9:29 pm

দালাল চক্রের কাছেই থাকে রেলের সিংহভাগ টিকেট

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশ রেলওয়ের সিংহভাগ টিকেটই দালাল চক্রের হাতে চলে যায়। মূলত রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার কারণেই ট্রেনের টিকেট অনলাইনে এবং কাউন্টারে পাওয়া যায় না। ওই টিকেট কালোবাজারির হাতে পাওয়া যায়। বাধ্য হয়ে অনেক যাত্রী সেখান থেকে টিকেট কেনে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ রেলের টিকেট কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে যাত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। সেক্ষেত্রে রেল সংশ্লিষ্টদের অজুহাত- এনআইডি কার্ড দেখিয়ে প্রত্যেক যাত্রীর টিকেট কাটা বাধ্যতামূলক। তাই কালোবাজারিদের কাছ থেকে টিকেট কেনাও অপরাধ। বিভিন্ন উৎসবে চড়া দামের সাথে টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে শুধু বহিরাগতরাই জড়িত নয়, খোদ রেলেরও একটি সিন্ডিকেট জড়িত। যাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় টিকেট কালোবাজারি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেলের টিকেট কালোবাজারিতে ঢাকার পরই শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চল। সেখানে কালোবাজারিতে জড়িত কমপক্ষে একশ’ ব্যক্তি। যাদের সঙ্গে রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। তারাই রেলের টিকেট বিক্রির জন্য কালোবাজারিদের দিয়ে থাকে। রেলওয়ে স্টেশনের ভেতরে ও বাইরে, বিভিন্ন চায়ের দোকান এবং পানের দোকানে বিক্রি হয় টিকেট। টিকেট কালোবাজারিতে স্টেশনের বুকিং ক্লার্ক, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, রেলওয়ে পুলিশ, আনসার ও স্টেশন এলাকায় কর্মরত অসাধু রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত।
সূত্র জানায়, বাড়তি দামে বিক্রি হওয়া ট্রেনের টিকেটের সূত্র ধরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কালোবাজারির খোঁজে নেমেছে। টিকেট কালোবাজারি বন্ধে ইতোপূর্বে আরো অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের আরো বেশ কয়েকটি রেলস্টেশন থেকে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রেল ভবনে তালিকা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনে টিকেট কালোবাজারিদের তালিকা থাকার পরও তাদেরকে গ্রেফতার না করায় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় রেলওয়ে পুলিশ কর্মকর্তার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, অনলাইনে টিকেট কাটার নির্দিষ্ট সময় শুরুর পর দ্রুত সময়ের মধ্যে কালোবাজারিরা কাউন্টারে কর্মরতদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অধিকাংশ টিকেট কিনে নেয়। পরে সেগুলো উচ্চমূল্যে কালোবাজারে বিক্রি করা হয়। দেশের অধিকাংশ রেলস্টেশনেরই চিত্র এ রকম। রেল কর্মকর্তাদের আশীর্বাদেই চিহ্নিত টিকেট কালোবাজারি ও দালালরা দীর্ঘদিন ধরে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। সারাদেশে কমপক্ষে ৩শ’ দালাল রয়েছে যারা শুধু দুই ঈদেই টিকেট কালোবাজারি করে লাখ লাখ টাকা আয় করে। যার সিংহভাগ রেলের ছোট-বড় সবার পকেটে যায়। তাদের মধ্যে কমলাপুরেই ১২৩ চিহ্নিত দালাল সক্রিয়। তাদের বেশিরভাগই একাধিবার গ্রেফতার হলেও পরে জামিনে এসে ফের টিকেট কালোবাজারিতে জড়িয়ে পড়ে। কমলাপুর ছাড়াও ঢাকা বিমানবন্দর, টঙ্গী, গাজীপুর, নরসিংদী, ভৈরব, ময়মনসিংহ, আখাউড়া, লাকসাম থেকে চট্টগ্রামের স্টেশনগুলোতে রয়েছে ৯০ জন। বাকিরা পশ্চিমাঞ্চলের বড় বড় রেল স্টেশন ও জংশনে সক্রিয়। তাদের তালিকা সম্পর্কেও রেলভবনের নীতিনির্ধারকরা অবহিত।
এদিকে ভুক্তভোগীদের মতে, সারাদেশে রেল পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবসহ অন্যান্য সংস্থার যৌথ অভিযানেই দালালদের নির্মূল করা সম্ভব। বিক্ষিপ্তভাবে দু’চারজনকে ধরে লোক দেখানো ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে ওদের নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না।
এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, শুধু ব্ল্যাকার কেন, যে কোন ধরনের অনিয়ম ও দুনীতি সংক্রান্ত অভিযোগ পেলেই শাস্তি দেয়া হচ্ছে। ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। চিহ্নিত টিকেট কালোবাজারিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা হবে।