নিজস্ব প্রতিবেদক:
দিনকে দিন বেড়েই চলেছে আদালতে মামলার সংখ্যা। আদালতে যে হারে মামলা বাড়ছে সে তুলনায় নিষ্পত্তির হার কম। বিগত ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশের আদালতে দায়ের হয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৬৪৯টি মামলা। আর ওই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৫০৭টি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে দায়ের হয়েছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৯৬টি। এ সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৩৩টি।
শুধু উচ্চ আদালতে বর্তমানে বিচারাধীন মামলা রয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখের মতো। এর মধ্যে রিট ও পুরোনো মামলা বেড়েছে ২৮ হাজার। গত চার বছরে হাইকোর্টে মামলা বেড়েছে ১০ হাজারেরও বেশি। অধস্তন আদালতগুলোয় নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় ৩৭ লাখ মামলা। চার বছরে এই আদালতে মামলা বেড়েছে ৬ লাখের ওপরে। তবে মামলা বাড়েনি শুধু আপিল বিভাগে। গত চার বছর আগে যা ছিল তাই রয়েছে। নিষ্পত্তি এবং দায়ের প্রায় সমান। বর্তমানে উচ্চ আদালতে ৯৩৭টি ডেথ রেফারেন্স শুনানির অপেক্ষায় আছে। গত বছর একই সময়ে শুনানির অপেক্ষায় ছিল ৮৪৩টি। আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, উচ্চ ও নিম্ন আদালতে মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতায় তৈরি হয়েছে মামলাজট। ওই দুই আদালতে সারা দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪২ লাখের ওপরে, যা ২০১৯ সালে ছিল ৩৬ লাখ। গত চার বছরে মামলা বেড়েছে ৬ লাখের বেশি। যদিও মামলার ভার কমাতে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে এরইমধ্যে গঠন করা হয়েছে মামলা ব্যবস্থাপনা কমিটি। এরপরও মামলা পরিচালনা এবং নিষ্পত্তিতে হিমশিম খাচ্ছে বিচার বিভাগ। লাগাম টানা যাচ্ছে না কিছুতেই। এসব মামলার বিপরীতে হাইকোর্টে বিচারপতির সংখ্যা ৮৯ জন আর আপিল বিভাগে রয়েছেন ৬ জন। সারা দেশের জেলা, দায়রা জজ এবং ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারক আছেন প্রায় ২ হাজার।
সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে জনসংখ্যার আধিক্যের কারণেই দেশে আদালতগুলোয় মামলার সংখ্যা বাড়ছে। তবে তুলনামূলকভাবে বিচারাধীন মামলার বিপরীতে বিচারক সংখ্যাও অপ্রতুল। এ ছাড়া আমলাতান্ত্রিক ও আইনি জটিলতা এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির অভাবে মামলার জট হচ্ছে। এ জটের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা। মূলত যে হারে মামলার সংখ্যা বাড়ছে, সেই হারে বিচারক বাড়ছে না। আপিল বিভাগে একসময় দশের অধিক বিচারক ছিলেন, ছিল তিনটি বেঞ্চ। এখন মাত্র ছয়জন বিচারক। হাইকোর্টে একশর বেশি বিচারক ছিলেন। এখন তা চলে এসেছে সত্তরের কোঠায়।
মামলার বিবেচনায় হাইকোর্টে দেড়শ বিচারক থাকা প্রয়োজন। হাইকোর্টে বেশির ভাগ দ্বৈত বেঞ্চে (দুইজন বিচারক) মামলা শুনানি হয়। চলমান আইন সংস্কার করে একক বেঞ্চ করতে পারলে আদালতের সংখ্যা বাড়বে। এতে বাড়বে মামলা নিষ্পত্তির হারও। তবে গুরুত্বপূর্ণ মামলা বা সাংবিধানিক বিষয় জড়িত মামলার ক্ষেত্রে দ্বৈত বেঞ্চ রাখা যায়। এদিকে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, মামলাজট নিরসনে সুপ্রিমকোর্টের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক বার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে বেশ সফলতা এসেছে।
হাইকোর্টে গত বছর মামলা দায়ের হয়েছিল ৯১ হাজার ৫৭২টি। ওই বছর নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৭ হাজার ৪৭৪টি। হাইকোর্টে চলতি বছরের শুরু থেকে জুন পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়েছে ৫০ হাজার ৪৮৮টি। আর নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৬ হাজার ১২৫টি। গত বছর আপিল বিভাগে মামলা ছিল ৯ হাজার ১৬২টি। আর নিষ্পত্তি হয় ৫ হাজার ৪০৬টি।
চলতি বছরের জুন পর্যন্ত আপিল বিভাগে মামলা দায়ের হয় ৬ হাজার ১৪৪টি। আর নিষ্পত্তি হয় ৩ হাজার ৫৮২টি। ৮টি বিভাগের মামলা নিষ্পত্তি করতে ৮ জন বিচারপতিকে সভাপতি করে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত বছর অধস্তন আদালতে ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৯৫৭টি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়। ওই বছর নিষ্পত্তি হয়েছে ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৫২২টি মামলা। বর্তমানে ২২৪ জন বিচারক এজলাশ ভাগাভাগি করে কাজ করছেন। তবে তারা পূর্ণ কর্মঘণ্টার সদ্ব্যবহার করতে পারছেন না।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম