জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
চলমান বন্যায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও ড্রেনসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কুলাউড়া পৌরসভার। এই বন্যায় কুলাউড়া পৌরসভার ১৮ কিলোমিটার রাস্তা ও ১২ কি.মি. ড্রেন, ১ হাজার ঘর-বাড়ি, ১৮টি কালভার্ট, ১০টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, ২টি কাঁচা বাজার, অনেক মসজিদ, বিভিন্ন গো-বাদি পশুর খামার, পুকুর, বিভিন্ন অফিসের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছেন পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ। ৭ জুলাই রোববার দুপুরে পৌরসভার হলরুমে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান তিনি। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পৌর সচিব শরদিন্দু রায়, পৌর কাউন্সিলর মোঃ লোকমান আলী, সাইফুর রশীদ সুমন, জহিরুল ইসলাম খাঁন, আতাউর রহমান চৌধুরী ছোহেল ও সুলতানা বেগম লাইলী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পৌর মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ বলেন, গত ১৭ জুন থেকে কুলাউড়া উপজেলার অধিকাংশ এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়ে যায়। একইভাবে কুলাউড়া পৌরসভার একটি বড় অংশ বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে রাবেয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইয়াকুব তাজুল মহিলা ডিগ্রি কলেজে ২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়। পরবর্তীতে সী-বার্ড কেজি স্কুল ও বিএইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আরও ২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়। ওই ৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১১৯টি পরিবারের ৪০০ জন্য বন্যা দুর্গত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়া আরও ২৫০০ পরিবারের ১০ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়ে। একটানা ২১দিন যাবত মানুষজন বাসা-বাড়িতে ও বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট, রান্না বান্না করতে পারছে না, টয়লেট ব্যবহার করতে পারছে না।
বন্যায় কুলাউড়া পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড সম্পূর্ণ, ২নং ওয়ার্ডের আংশিক, ৩নং ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা, ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়। বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের রাস্তাÑঘাট, ঘর-বাড়ি, ড্রেন, কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, গো-বাদি পশুর খামার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে একটানা দীর্ঘদিন পানিবন্দি মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা। যতদিন যাচ্ছে এই সংকটে আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। সরকারি খাদ্য সহায়তা ও পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে ও পানিবন্দি মানুষের বাড়ীতে খাদ্য সহায়তা প্রদান চলমান রয়েছে। প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে মানুষ পানিবন্দি থাকার পরও বর্তমান পরিস্থিতিতে অনুমান করা হচ্ছে এটি আরও দীর্ঘায়িত হবে।
পৌর মেয়র বলেন, অতীতে কুলাউড়ায় বিশেষ করে পৌর এলাকায় বন্যা বা জলাবদ্ধতা এত দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আমরা লক্ষ্য করেছি, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বুড়িকিয়ারিতে (পিটাইটিকর) নামক স্থানে একটি বাঁধ নির্মাণের পর থেকে প্রতিবছর বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। এই বাঁধের কারণে হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার প্রায় শতাধিক গ্রামের কয়েক লক্ষাধিক মানুষ প্রতিবছর বন্যায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এতে মানুষের জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এমতাবস্থায় চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে বন্যাকবলিত দূর্ভোগগ্রস্থ মানুষের জন্য পুনরায় খাদ্য সহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তাÑঘাট, বাড়ি-ঘর, কালভার্ট ও অন্যান্য অবকাঠামো মেরামত ও পুনঃনির্মাণ করতে হবে। বন্যা-জলাবদ্ধতায় দূরীকরণে ফেঞ্চুগঞ্জের বুড়িকিয়ারিতে সেই বাঁধ অপসারণে কুলাউড়ার সংসদ সদস্য, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ও মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে স্থায়ী প্রদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
পৌর মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ বলেন, স্বল্প আয়ের পৌরসভার সংস্থাপন ব্যয়ভার মিটিয়ে বিদ্যমান ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, ড্রেন, কালভার্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা পুনরায় মেরামত করা পৌরসভার সক্ষমতার বাইরে। এত বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণে সরকারের উন্নয়ন সহায়তা তহবিল থেকে অনুদান ছাড়া কাজ করা বড় কঠিন হবে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি