May 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, February 20th, 2024, 8:36 pm

দুই পদকের উচ্ছ্বাস থাকলেও রয়েছে আক্ষেপ

অনলাইন ডেস্ক :

প্রস্তুতির কমতি, আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সীমাবদ্ধতা থাকার বিবেচনায় মহাদেশীয় পর্যায়ে সাফল্য পাওয়া বাংলাদেশের যেকোনো অ্যাথলেটের জন্য দারুণ ব্যাপার। এসব প্রতিকূলতার মাঝে এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ তাদের হাতে ধরা দিয়েছে দুটি পদক। জহির রায়হান জিতেছেন রুপা, মাহফুজুর রহমান ব্রোঞ্জ। অর্জনের পাশাপাশি আছে আক্ষেপও। গতবারের সোনাজয়ী ইমরানুর কোনো পদক পাননি এবার। ইরানের তেহরানে এবারের আসরে বাংলাদেশের দ্রুততম মানব ইমরানুরকে নিয়ে প্রত্যাশা ছিল তুঙ্গে। গতবার কাজাখস্তানের আসরে বিশ্বকে চমকে দিয়ে ৬০ মিটারে সোনা জিতে নিয়েছিলেন লন্ডন প্রবাসী এই অ্যাথলেট। উড়িয়েছিলেন দেশের পতাকা। এবার তিনি পারেননি; হয়েছেন চতুর্থ। চমক বরং দেখিয়েছেন জহির ও মাহফুজুর। ৪০০ মিটারে রুপা জিতেছেন জহির। মাহফুজুরের প্রাপ্তি হাই জাম্পের ব্রোঞ্জ; ২ দশমিক ১৫ মিটার উচ্চতায় লাফিয়ে তৃতীয় হয়েছেন তিনি।

গতবার ইমরানুরের সোনা জয় ছিল একমাত্র পদকপ্রাপ্তি। এবার সোনার হাসি মিলিয়ে গেলেও দুটি পদক পেয়েছে বাংলাদেশ। দশমিক ১৫ সেকেন্ডের জন্য জহিরের পদকের রং সোনালি হয়নি। তবে এ নিয়ে খুব একটা আক্ষেপ নেই বলে জানালেন তিনি। বরং ব্যক্তিগত দুঃসময়ের নানা বাঁক পেরিয়ে ফের পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসতে পেরেই খুশি ২২ বছর বয়সী এই অ্যাথলেট। “এই অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার নয়। এটা আমার প্রথম এশিয়ান ইনডোর চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা। আল্লাহর অশেষ রহমতে পদক অর্জন করতে পেরেছি, অনেক ভালো লাগছে। যেন আগামীতে আরও ভালো কিছু করতে পারি, সেই চেষ্টা করব।”

“সোনা জিততে পারিনি বলে আফসোস নেই। কেননা, এই পর্যায়ে আমার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছি। আশা করি, ভালো ট্রেনিং করতে পারলে আগামীতে আরও ভালো কিছু করতে পারব।” জহিরের অর্জন নিয়ে মিশ্র অনুভূতি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপির অ্যাথলেটিকস কোচ আব্দুল্লাহ হেল কাফির। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় তুষ্টি-আফসোস দুটোই জানালেন তিনি। বিশেষ করে ২০১৯ সালে ধর্ষণের অভিযোগে নিষিদ্ধ হওয়া এই অ্যাথলেটের এতদিন পর আন্তর্জাতিক পদক জয়ের মধ্য দিয়ে পাদপ্রদীপের আলোয় ফিরে আসাতেই বরং বেশি খুশি কাফি।

“ও পিছিয়ে পড়লেও বিশ্বাস ছিল পারবে, বের হয়ে যাবে। অল্পের জন্য যখন পারল না, তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। ভীষণ আফসোস হচ্ছিল। মোবাইলে দেখছিলাম, চিৎকার করছিলাম-জোরে দৌড়া, আরও জোরে দৌড়া।” “আমার জন্য এটা ভালো লাগার দিনও। যদি কাছ থেকে এই দৃশ্যটা দেখতে পারতাম, তাহলে আরও ভালো লাগত। আমি বলব যে, ও যে সময়টা পার করেছে, খুবই বাজে সময়ৃবাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে অ্যাথলেট হওয়া, তাদের সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে আমরা সবাই জানি, বাইরের দেশের কোনো অ্যাথলেটের সাথে আমাদের অ্যাথলেটদের তুলনা করাটা হবে খুবই অন্যায়।”

“এই প্রতিকূলতার মধ্যে জহিরের মতো ছেলেরা লড়াই করে যাচ্ছে, টিকে আছে, সেটাই অনেক। ওরা কখনও বিকেএসপিতে, কখনও আর্মি স্টেডিয়ামে অনুশীলন করে, এত প্রতিকূলতার মধ্যেও ও যে নিজেকে ধরে রাখছে, এটা ভালো লাগার বিষয়।” জহিরের প্রথম পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসা ২০১৭ সালে। কেনিয়ার নাইরোবিতে ওয়ার্ল্ড-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমি-ফাইনালে উঠে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। সেবার সেমি-ফাইনালে ৪৮ দশমিক ২২ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেমির হিটে পঞ্চম হয়ে ছিটকে পড়লেও দারুণ এক কীর্তি গড়েন শেরপুর থেকে উঠে আসা এই অ্যাথলেট।

১৯৯৮ সালে ওয়ার্ল্ড ইয়্যুথ গেমসে ১০০ মিটারে আব্দুল্লাহ হেল কাফির সেমি-ফাইনালে ওঠার পর প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের কোনো প্রতিযোগিতায় সেমিতে পা রাখেন জহির। কাফির বিশ্বাস আরেকটু উন্নত প্রশিক্ষণ, পুষ্টি, সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে তার জহিরের মতো উত্তরসূরিরাই হয়ে উঠতে পারে দেশের অ্যাথলেটিকসের সোনার ছেলে। “লম্বা সময় ট্রেনিং, বিদেশে অনুশীলন, আরেকটু পুষ্টিকর খাবার- এগুলো ওদের খুবই প্রয়োজন। এগুলো নিশ্চিত করতে পারলে ও দেশকে আরও অনেক কিছু দিতে পারবে। এর প্রমাণ কিন্তু সে রাখছে। ওয়ার্ল্ড জুনিয়রে সে সেমি-ফাইনালে উঠেছিল, বয়সও বেশি নয়, ওকে ঠিকঠাক পরিচর্যা করতে পারলে, প্রস্তুতির সুযোগ-সুবিধাগুলো দিতে পারলে ও অনেক ভালো কিছু করবে।” ইমরানুর থাকেন লন্ডনে। অনুশীলনও করেন সেখানেই। দেশে আসেন কেবল প্রতিযোগিতাগুলোয় অংশ নেওয়ার সময়। তার মতো আধুনিক ট্রেনিং পেলে জহির ওই দশমিক ১৫ সেকেন্ডের ব্যবধান ঘুচিয়ে দিতে পারত বলেই মনে করেন কাফি।

“অবশ্যই হতে পারত (জহির সোনা জিততে পারত)। ও যাদের সাথে লড়াই করেছে, তাদের সুযোগ সুবিধার দিকে তাকালে মানতেই হবে জহির ভালো করেছে। ওদের মতো ফ্যাসিলিটিজ পেলে ওর ফল ভিন্ন রকম হতেই পারত।” ৪০০ মিটারে ৪৮ দশমিক ১০ সেকেন্ড সময় নিয়ে দ্বিতীয় হন জহির। ৪৭ দশমিক ৯৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে এ ইভেন্টে সোনা জিতেন ইরানের সাজাদ আঘাই। প্রথমবার এই প্রতিযোগিতায় নেমে পদক পেয়েই তৃপ্ত জহির। “আমার একটা স্বপ্ন ছিল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো কিছু করা, সেটা করার খুব কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। ট্রেনিংয়ের ব্যাপারে বলব, অ্যাথলেটিকসে ভালো সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে অনুশীলনের। এগুলো ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এটা আমি, আপনি, সবাই জানি।”