নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রগাধিকারভুক্ত (ফাস্টট্র্যাক) প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প। ১২শ’ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৪ সালে পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে পারবে মাতারবাড়ি প্রকল্প। কয়লা আমদানির সুবিধার্থে গভীর সমুদ্র বন্দর দুই-এক বছরের মধ্যে চালু হবে বলেও জানান তারা। সরকারের ব্যয়বহুল প্রকল্পগুলোর মধ্যেও এটি একটি। এরইমধ্যে মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। পাশাপাশি মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে সাড়ে তিন বছর। প্রকল্প অনুমোদনের পর ৭ বছর চলে গেছে। এখন পর্যন্ত বাস্তব অগ্রগতি ৪৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৪৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর আগে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ২০১৪ সালে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। কয়লা আমদানির জন্য গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি, চ্যানেল খনন, কয়লা খালাসের জেটি এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে। বাংলাদেশ ও জাপানের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ করছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। করোনা সংকটের মধ্যেও থেমে নেই কাজ। এরইমধ্যে গভীর সমুদ্রবন্দরের জেটিতে ভিড়েছে তিনটি বিদেশি জাহাজ। কর্মকর্তারা জানান, ৪৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন ২০২৪ সালের জানুয়ারী ও দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসবে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গভীর সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়নের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং গভীর সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়নের জন্য অনেক বড় অবদান রেখেছে যা দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা ও তেল পরিবহনের জন্য ১৪.৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ২৫০ মিটার চওড়া এবং ১৮.৫ মিটার গভীর সমুদ্র বন্দরের জেটি নির্মাণ কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় ১২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লা ও তেল পরিবহনের জন্য ১৪.৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ২৫০ মিটার চওড়া এবং ১৮.৫ মিটার গভীর চ্যানেলসহ আনলোড জেটি নির্মাণাধীন রয়েছে। আমদানী করা কয়লা লোড-আনলোড জেটি, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, টাউনশীপ, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প-শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খান জানান, মাতারবাড়ি নতুন করে গভীর চ্যানেল তৈরি করা হবে। মূল ব্যয় হবে এই খাতেই। এর আগে ছিল ছোট পরিসর, এখন বড় পরিসরে হবে কাজটি। আমরা জানি গুলশানে হলি আর্টিজান হামলার পরে অনেক জাপানি তাদের নিজের দেশে চলে যায়। প্রকল্পে অনেক জাপানি নাগরিক কাজ করবেন তাদের জন্য একটা নিরাপত্তা বলয়ের আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। এই আবাসনের মধ্যে সব কিছু থাকবে। এসব কারণেই মূলত প্রকল্পের সময়-ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়। ‘মাতারবাড়ি ২দ্ধ৬০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট’ সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে- দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে ২দ্ধ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ, মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর উন্নয়নে সহায়তা করা। এ ছাড়া ২০২৪ সালের মধ্যে মানসম্পন্ন ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ, এবং জ¦ালানি সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। ১ হাজার ৬০৮ দশমিক ৪৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ৩৫০ মিটার প্রস্থ ও ১৮ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার চ্যানেল, সি-ওয়াল সহ আনুষঙ্গিক ফ্যাসিলিটিস নির্মাণ। এ ছাড়া পাওয়ার প্ল্যান্ট এরিয়া ও টাউনশিপের জন্য ভূমি উন্নয়ন, জেটি, কোল ইয়ার্ড ও চিমনি নির্মাণ, ১২’শ মেগাওয়াট ক্ষমতার আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্লান্ট ও আনুষঙ্গিক ফ্যাসিলিটিজ নির্মাণ। প্রকল্পের আওতায় পল্লী বিদ্যুতায়নের আওতায় ২৫/৪১ এমভিএ ক্ষমতার ১৩২/৩৩ কেভি সঞ্চালন উপকেন্দ্র, ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, ১০ এমভিএ ক্ষমতার ৩৩/১১ কেভি বিতরণ উপকেন্দ্র নির্মাণ, ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় টাউনশিপ নির্মাণ করা হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২৪ সালের মধ্যে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। মাতারবাড়ি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম