নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় বেশিরভাগ আসামিই সরকারি চাকরিজীবী। তবে আসামির তালিকায় বেসরকারি চাকরিজীবী, রাজনীতিবিদসহ অন্য পেশার লোকও রয়েছে। দুর্নীতিবাজদের দুদকের কড়া নজরদারিতে আনা হচ্ছে। সংস্থাটি গত সাড়ে পাঁচ বছরে ঢাকাসহ সারা দেশ ১ হাজার ৭৮২টি মামলা করেছে। ওসব মামলার আসামিদের অনেকেই মামলা থেকে রেহাই পেতে তদবির করছে। তবে যে হারে মামলা হচ্ছে, সে হারে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এর জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দায়ি। আবার কোনো কোনো মামলায় স্থগিতাদেশও দেওয়া হচ্ছে। ফলে ঝুলে যাচ্ছে বিচারপ্রক্রিয়া। দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত সাড়ে পাঁচ বছরে সারা দেশে ১ হাজার ৭৮২টি দুর্নীতি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১০২টি, ২০২২ সালে ৪০৬টি, ২০২১ সালে ৩৪৭টি, ২০২০ সালে ৩৪৮টি, ২০১৯ সালে ৩৬৩টি ও ২০১৮ সালে ২১৬টি মামলা হয়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিম্ন আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের ৩ হাজার ২৯৫টি মামলা বিচারাধীন। তার মধ্যে ২ হাজার ৮৬৭টি মামলার বিচার কার্যক্রম চলমান থাকলেও উচ্চ আদালতের আদেশে ৪২৮টি মামলার বিচার স্থগিত রয়েছে।
দুদকের মামলায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন, অর্থ পাচার, ঘুষ নেওয়া, জালিয়াতি ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ বেশি করা হচ্ছে। বিভিন্ন বিচারিক আদালতে এখনো প্রায় তিন হাজার মামলা বিচারাধীন। উচ্চতর আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে আরো বেশ কিছু মামলা। ওসব মামলা কবে শেষ হবে তা সংশ্লিষ্টরা বলতে পারছে না। তবে কোনো মামলার একাধিক আসামি থাকলে যেকোনো একজন আসামির আবেদনে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ আসছে। স্থগিতাদেশ আসার পর কমিশনকে অবহিত করা হয়। স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়া হয়। এভাবে বেশ কিছু পুরনো মামলা সচল হয়েছে।
সূত্র জানায়, অনেক দিন ধরেই দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে অভিযোগ আসছে। কিছুকিছু অভিযোগ আমলে নেওয়া হচ্ছে। নেতাদের মধ্যে কেউ সংসদ সদস্য, কেউ সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও জেলা-উপজেলার নেতা। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব, অধস্তন কর্মচারী ও সাবেক আমলা রয়েছেন।
অভিযুক্তদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, আয়কর রিটার্নের কপি, ব্যাংকের হিসাব বিবরণী, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের ক্রয়-বিক্রয়ের দলিল এবং তাদের ওপর নির্ভরশীলদের চাকরি বা ব্যবসা অথবা অন্য উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়ের বিবরণীসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ড তদন্তের পর কারোর বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। কারোর বিষয়ে বিস্তর তদন্ত চলছে। আসামিরা নিজেদের বাঁচাতে নানা কায়দায় তদবির করছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও কালক্ষেপণ করছে। সাক্ষীরা ঠিকমতো আদালতে আসছে না। উচ্চতর আদালতেও একই অবস্থা। তারপরও আশা করা হচ্ছে দ্রæত সময়ে মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হবে। সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দুর্নীতির মামলা আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। সব পেশার লোকের বিরুদ্ধেই দুদকে অভিযোগ আসছে। নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইতে সরকারি কর্মকর্তা, বর্তমান ও সাবেক এমপিদের কেউ সরাসরি দুদক কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করছে। কেউ কেউ দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও দেখা করার চেষ্টা করছে। প্রভাবশালী রাজনীতিকদের মাধ্যমে চাপও দেওয়া হচ্ছে। রাজনীতির বাইরের লোকজনদের মাধ্যমেও তদবির চলছে।
এ বিষয়ে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন জানান, দুদক দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী যার বিরুদ্ধেই অভিযোগ আসে দুদক গভীরে গিয়ে তদন্ত করে মামলা করে। অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হয় না।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম