May 3, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, January 6th, 2024, 8:16 pm

দুবলার চরের শুঁটকি শ্রমিকরা যেভাবে ভোট দেন

বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সুন্দরবনের দুবলার চরে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে চান শুঁটকি পল্লীর জেলেরা। সেখানে অবস্থানরত কয়েক হাজার জেলে ভোট উৎসবে যোগ দিতে বাড়ি উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকালের জোয়ারে কয়েক হাজার জেলে তাদের নৌকা নিয়ে উপকূলের উদ্দেশে রওনা হন। ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে চান এসব জেলেরা।

শুঁটকি মৌসুমে দুবলার চরে আসা জেলেদের মধ্যে প্রায় ৯ হাজারের অধিক জেলে ভোট দিতে বাড়ি ফিরে গেছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।

ইউএনবির এই প্রতিবেদক সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বাগেরহাট জেলার সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের আওয়াতাধীন দুবলার চরে নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুম চলে। আলোরকোল, মাঝের কেল্লা,নারিকেল বাড়িয়া ও শ্যালার চর নিয়ে গঠিত দুবলার চর।

শুঁটকি মৌসুমে বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার জেলে ওই চরগুলোতে অবস্থান করেন। অস্থায়ী ঘর বেঁধে জেলেরা ৪ মাসের জন্য পল্লী গড়ে তোলেন। জেলেরা সাগর থেকে মাছ আহরণ, কাটা-বাঁছা এবং শুকানোসহ নানা কাজে এই সময় ব্যস্ত থাকেন।

মৌসুম শেষ হলেই সাধারণত জেলেরা বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য জেলেরা তাদের নিজ নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। এসব জেলেদের বাড়ি বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, রামপাল, মোড়েলগঞ্জ, মোংলা, খুলনা সদর, কয়রা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, সাতক্ষীরা সদর, আশুশুনি, চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ বিভিন্ন উপজেলায় বলে জানা গেছে।

দুবলার চর থেকে বিভিন্ন জেলেরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা শুঁটকি মৌসুমে দুবলার চরে আসেন। এখানে আসার পর তারা সার্বক্ষণিক মাছ আহরণ, কাটা-বাছা ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু এ বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে তাদের মধ্যে এক ধরনের নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়। পছন্দের প্রার্থীর জন্য সাগর মোহনায় জেলেদের মধ্যে তারা প্রচার চালান। ভোট দিতে যাওয়ার জন্য জেলেরা একে অপরকে উৎসাহিত করেন।

বাগেরহাট জেলার রামপাল, মোংলা, খুলনা জেলার দাকোপ এবং সাতক্ষীরা এলাকার বেশ কয়েকজন জেলের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে কথা হলে তারা জানান, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে চান। বিভিন্ন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে তাদের পছন্দের প্রার্থীও রয়েছেন। কোনো কোনো প্রার্থীর জন্য তাদের সমর্থন রয়েছে।

ভোট উৎসবে যোগ দিতে তারা নৌকা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। শনিবার সকালের মধ্যে অনেকে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসবেন। রবিবার ভোট দেওয়ার পর সোমবার তারা আবার নৌকা নিয়ে দুবলার চরের উদ্দেশে রওনা হবেন।

জেলেরা আরও জানান, তাদের প্রত্যাশা তারা যাকে ভোট দিবেন তারা নির্বাচিত হয়ে সংসদে তাদের কথা বলবে। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আর আগামী সরকার চাল-ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখবে এমন প্রত্যাশা জেলেদের।

দুবলার চর জেলে টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার মো. খলিলুর রহমান বলেন, ১০ হাজারের বেশি জেলে শুঁটকি মৌসুমে দুবলার চরে আসে। এখানে আসার পর জেলেরা সাগর থেকে মাছ আহরণ, কাটা-বাছাসহ শুকানোর কাছে ব্যস্ত ছিল। নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পর সেখানে অবস্থানরত জেলেদের অনেকেই তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ প্রার্থীর পোস্টারও ঝুলিয়েছেন দুবলার চরে। ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য গত ২ দিন আগে থেকে জেলেরা অনুমতি প্রাপ্ত নৌকা নিয়ে তাদের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। সর্বশেষ শুক্রবার সকালের জোয়ারে বেশকিছু জেলে নৌকা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে দুবলার চর ছেড়ে গেছে।’

ভোট দেওয়ার জন্য সব মিলিয়ে ৯ হাজারের অধিক জেলে দুবলার চর থেকে বাড়ি ফিরেছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

ফরেস্টার মো. খলিলুর রহমান আরও বলেন, ‘দুবলার চরে এখন প্রায় ১ হাজার জেলে রয়েছে। ওই জেলেরা দুবলার চরে জেলেদের মালামাল পাহারা দিচ্ছেন।’

যেসব জেলে ভোট দিতে গেছেন তারা সোমবার আবার দুবলার চরে ফিরে আসবেন বলে তিনি জানান।

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এ বছর জেলেদের মধ্যে বেশি উৎসহ দেখা গেছে। ভোট দেওয়ার জন্য শতকরা ৯০ শতাংশ জেলে তাদের নৌকা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে ফিরে গেছেন।

বর্তমানে যে কয়েকজন জেলে দুবলায় অবস্থান করছেন তাদের মধ্যে এক থেকে দেড়শ’ জেলে ভোটার থাকতে পারেন। বিগত কোনো সংসদ নির্বাচনে এত সংখ্যক জেলে দুবলার চর থেকে ভোট দিতে বাড়ি ফেরেননি বলে তিনি জানান।

সুন্দরবন বিভাগ জানায়, গত বছর ৩ নভেম্বর থেকে এই চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি মৌসুম। যা চলবে মার্চ পর্যন্ত। বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে ১৬টি বহরদ্দারের মাধ্যমে ১০ হাজারেরও বেশি জেলে, মহাজন, শ্রমিক ওই সব চরে যান।

১ হাজার ৩৫টি অস্থায়ী ঘর করে জেলেরা ওইসব চরে অবস্থান করেন। সেখানে জেলেরা সাগর থেকে বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার পর সেগুলো শুঁটকি তৈরির জন্য প্রক্রিয়াজাত করেন।

—-ইউএনবি