নিজস্ব প্রতিবেদক :
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দুর্নীতি ও ব্যর্থতার কারণে রূপগঞ্জে কারখানায় অগ্নিকা- ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। বিচারহীনতার কারণেই বারবার এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। রোববার (১১ জুলাই) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাসেম ফুড বেভারেজের সেজান জুস কারখানা পরিদর্শনে এসে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি উপস্থিত ছিলেন। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সরকারকে দায়ী করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, এসব তদারকি করার জন্য সরকারের যেসব সংস্থা আছে, তাদের দুর্নীতি ও ব্যর্থতার কারণেই এতগুলো প্রাণ ঝরে গেছে। কল-কারখানা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যদি নিয়মিত পরিদর্শনে আসতেন, তাহলে মালিকপক্ষের অনিয়ম ধরা পড়তো। কিন্তু তারা মলিকপক্ষের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে এসব পরিদর্শন না করে নীরবে বসে থাকেন। যে কারণে এরকম ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মালিকপক্ষও এ দুর্ঘটনার দায় কোনও ভাবে এড়াতে পারে না। মালিকপক্ষকে শুধু গ্রেপ্তার করলেই হবে না, শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মালিকসহ দায়ীদের কোনও বিচার হয়নি। এই বিচারহীনতার কারণেই বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। একজন মানুষ জীবনে যা আয় করতো, সে অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অগ্নিকা-ে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়ে জুনায়েদ সাকি বলেন, নিহতদের যাদের পরিবারে কাজের উপযুক্ত লোক আছে, তাদের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে যাদের সন্তান লেখা পড়া করে তাদের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার সময় যারা আগুন নেভাতে এসেছিলো, সেই নিহতদের স্বজন ও এলাকাবাসীর ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা জানাই। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে গণসংহতি আন্দোলনের কর্মীদের সমাবেশে পুলিশের হামলা চালিয়ে সমাবেশ প- করে দেয়ার নিন্দা জানান তিনি। জুনায়েদ সাকি বলেন, সরকারের প্রশাসন যন্ত্রের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ যে কাজ করে না, তারই উদাহরণ সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকা-। কারণ প্রশাসন যন্ত্র যদি সঠিকভাবে মনিটরিং করতো, তাহলে এ ঘটনা ঘটতো না। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্তব্যক্তিরা ফ্যাক্টরিগুলো থেকে মাসোহারা আদায় করেন বলেই তারা মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেন না। তাই কোনও অনিয়মও দূর হয় না। গত শনিবার বিকালে রূপগঞ্জে কারখানার আগুনে ৫২ জন নিহতের ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালিয়ে ব্যানার ছিনিয়ে নেয় এবং সমাবেশ প- করে দেয়।। প্রসঙ্গত, রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সেজান জুস কারখানায় বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় আগুনের সূত্রপাত হয়। কারখানার ছয় তলা ভবনটিতে তখন প্রায় চার শতাধিক কর্মী কাজ করছিলেন। কারখানায় প্লাস্টিক, কাগজসহ মোড়কিকরণের প্রচুর সরঞ্জাম থাকায় আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সব ফ্লোরে। প্রচুর পরিমাণ দাহ্য পদার্থ থাকায় কয়েকটি ফ্লোরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের ২০ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। শুক্রবার দুপুরে কারখানার ভেতর থেকে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে, আগুনে পুড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত ৫২ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
এলডিসি গ্রাজুয়েশনে বাংলাদেশের সুষ্ঠু উত্তরণে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস জাতিসংঘের
জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিয়ে ইউনূস-আইসিসির আলোচনা
দেশ সংস্কারে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র