November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, November 14th, 2022, 9:10 pm

দুর্ভিক্ষের শঙ্কায় খাদ্যের মজুত বাড়ানোর উদ্যোগ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দুর্ভিক্ষের শঙ্কায় খাদ্যের মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা থেকে আগামী বছর বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কটের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে বিশ্বের অনেক দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। ওই ঝুঁকিতে বাংলাদেশও রয়েছে। সেজন্যই সতর্কতার অংশ হিসেবেই খাদ্য আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ ঘরে পর্যাপ্ত খাদ্য থাকলে বিশ^ অর্থনৈতিক বিপর্যয়েও বাংলাদেশে তেমন কোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হবে না। আর দেশেও খাদ্য উৎপাদন চাহিদার খুব কাছাকাছি। আর ঘাটতি থাকা বাকি খাদ্য আমদানি করে মজুত রাখতে পারলে দেশে খাদ্য সঙ্কটের কোনো শঙ্কা থাকবে না। ওই লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে খাদ্যের মজুত বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে ১০ লাখ টন চাল-গম আমদানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সরকারিভাবে আরো ৫ লাখ টন চাল আনা হচ্ছে। পাশাপাশি বেসরকারিভাবে ১৪ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সব মিলে সরকারের ২৯ লাখ টন চাল-গম আমদানির উদ্যোগ রয়েছে। পাশাপাশি আরো নতুন উৎস খোঁজা হচ্ছে। সুবিধামতো হলে আরো খাদ্যশস্য আমদানি করা হবে। সরকারের ওসব উদ্যোগের ফলে আপতত দেশে খাদ্যের কোনো সঙ্কটের আশঙ্কা নেই। বর্তমানে সরকারি খাদ্যশস্যের মজুত প্রায় ১৬ লাখ টন। তার মধ্যেই আবার শুরু হচ্ছে আমন সংগ্রহ কর্মসূচি। বেসরকারিভাবে ইতোমধ্যে ১৪ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ওই আমদানি প্রক্রিয়া আগামী মার্চ পর্যন্ত চলবে।
সূত্র জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধ, প্রাকৃতিক কারণে বিভিন্ন দেশে পর্যাপ্ত ফলন না হওয়া, অবরোধের কারণে খাদ্যের অবাধ প্রবাহ বিঘিœত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কট তীব্র হচ্ছে। বিশেষ করে যুদ্ধের কারণে ইউরোপের রুটির ঝুঁড়ি বলে খ্যাত ইউক্রেনে ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া পাকিস্তানে বন্যায় এবার ব্যাপক ফসলের ঘাটতি হয়েছে। আফ্রিকা, ইউরোপজুড়ে খরায় ফসলহানি ঘটেছে। অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারতসহ বিশে^র আরো অনেক দেশে এবার আশানুরূপ ফলন হয়নি। সব মিলে বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন এবার অনেক কম হয়েছে। ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আগামী বছর তার প্রভাব আরো বাড়বে আশঙ্কা রয়েছে। তখন অনেক দেশেই খাদ্য ঘাটতি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সরকার খাদ্য আমদানিতে জোর দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম থেকে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। সরকারিভাবে আরো ৫ লাখ টন চাল কেনা হবে। পাশাপাশি বেসরকারিভাবে চাল আমদানি অব্যাহত থাকবে। বেসরকারিভাবে চাল আমদানির মেয়াদ ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছে। তাছাড়া রাশিয়া থেকে আমদানি করা হচ্ছে ৫ লাখ টন গম। তার মধ্যে ২ লাখ টন ইতোমধ্যে দেশে এসে পৌঁছেছে। আর বুলগেরিয়া, আর্জেন্টিনা থেকে বেসরকারিভাবে দেড় লাখ টন গম আমদানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া সবকিছু ঠিক থাকলে এবং আগামী বোরো ফলন ভালো হলে বাংলাদেশই চাল রপ্তানি করতে পারবে।
সূত্র আরো জানায়, দেশে এবার আমন ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। প্রথম দিকে অনাবৃষ্টির কারণে ফসলহানির আশঙ্কা সৃষ্টি হলেও সরকারি তৎপরতায় সেচ দিয়ে তা অনেকটা পুষিয়ে নেয়া হয়েছে। আর শেষদিকে বৃষ্টিতে ফসল ভালো হয়েছে। পাশাপাশি এবার নিচু এলাকায় যেখানে আমন ফলে না তেমন অনেক স্থানেও আমনের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা ঝুঁকি নিয়ে সেখানে আমন লাগিয়েছে। আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমনের ফলন ভালো হবে। লক্ষ্য পূরণ না হলেও কাছাকাছি থাকবে। সরকার এখন আগামী বোরো ফলনের দিকে তাকিয়ে আছে। বোরোর ফলন ভালো হলে বাংলাদেশে বিশ^ খাদ্য সঙ্কটের প্রভাব তেমন পড়বে না। বোরো ফলন যাতে ভালো হয় ওই লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত সার আমদানি করে রেখেছে। দেশের সারের কোনো সঙ্কট নেই। তারপরও সরকার খাদ্য নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। যে কারণে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে খাদ্য শস্য আমাদনির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতিতে আগামী বছর হয়তো টাকা দিয়েও খাদ্য আমদানি সম্ভব হবে না। ওই কারণেই আগেভাগে খাদ্য আমদানি করে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সরকার খাদ্যশস্য আমাদনির পাশাপাশি আগামী বোরো ফলনের ওপর জোর দিয়েছে।
এদিকে, সরকারের এখন খাদ্যশস্য মজুতের সক্ষমতা ২০ লাখ টনের মতো। তার মধ্যে এখন গুদামগুলোতে পৌনে ১৬ লাখ টনের মতো ধান-গম রয়েছে। গুদামে খুব বেশি জায়গা নেই। ফলে সরকার চাইলেই ইচ্ছামতো খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে পারছে না। সকল দিক বিবেচনায়র রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার চাল আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)গত ২৩ জুন চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। চালের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য করা হয়েছে। পাশাপাশি ২৫ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে নিয়ন্ত্রক শুল্ক। ফলে চাল আমদানিতে মোট করভার ৬২ শতাংশ থেকে কমে ২৫ শতাংশে নেমেছে। নতুন শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ ছিল গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। ওই শুল্ক ছাড়ের অনুমোদন পেতে আমদানিকারকদের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেয়ার শর্ত জুড়ে দেয় এনবিআর। পরে ২৮ আগস্ট চাল আমদানিতে আরো ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমানো হয়। এখন চাল আমদানির ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের মাত্র ১৫ শতাংশের কিছু বেশি শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে। আমদানিকারকরা ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর এবং মাত্র ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রক শুল্ক পরিশোধ করেই চাল আনতে পারছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ অনুবিভাগ) মো. মজিবর রহমান জানান, সাধারণত ভিয়েতনাম, ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানি করা হয়। কম্বোডিয়া থেকে আনার বিষয়টিও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তার বাইরে অন্যান্য জায়গা থেকেও চাল-গম আনার চেষ্টা রয়েছে। নতুন নতুন উৎসের সন্ধান করা হচ্ছে। তবে চাল-গম পাওয়া গেলেও মূল্যের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হয়। পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। চাহিদার সঙ্গে জোগান সমন্বয় করাই হচ্ছে মূল কাজ। বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য ইতোমধ্যে ১৪ লাখ টনের মতো অনুমতি দেয়া হয়েছে। সেখানেও চাল আসছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে চাল আসার কথা। পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনে সময় বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এখন পর্যন্ত মজুত ভালো। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলমান থাকায় মজুতের একটা অংশ চলে যাবে। তাছাড়া ওএমএসও চলছে। সরকার চাল আনছে আবার বিতরণও হচ্ছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া।