November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, April 28th, 2023, 9:31 pm

দূষিত হয়ে পড়ছে ভূগর্ভস্থ পানি ৮ জেলায় ক্যান্সার ঝুঁকি বাড়ছে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দূষিত হয়ে পড়ছে দেশের ভূগর্ভস্থ পানি। ফলে নিরাপদ সুপেয় পানির সঙ্কটের পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। দেশের অন্তত ৮ জেলার ভূগর্ভস্থ পানিতে ক্ষতিকর লেড, ক্রোমিয়াম, নিকেলসহ বেশকিছু ভারি ধাতুর অস্তিত্ব মিলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ক্ষতিকর ভারি ধাতুযুক্ত পানি দীর্ঘদিন পান করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর, লক্ষ্মীপুর, ফরিদপুর ও মানিকগঞ্জ এ চিত্র উঠে এসেছে। ওসব জেলার ভূগর্ভস্থ পানিতে অন্তত চার ধরনের ভারি ধাতুর অস্তিত্ব মিলেছে। তা হলো লেড, ক্যাডমিয়াম, নিকেল ও ক্রোমিয়াম। একেক ধাতুর পরিমাণ এলাকাভেদে একেক রকম। কোথাও কোথাও একাধিক ধাতু বিপজ্জনক পরিমাণেও মিলেছে। ওসব ধাতু রয়েছে এমন পানি দীর্ঘদিন পান করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয়। আর দেশের ৮ জেলার ভূগর্ভস্থ পানিতে ভারি ধাতুর পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। পরিবেশবিদদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ভূউপরিস্থ পানিই ছিল বাংলাদেশের মানুষের পানীয়জলের প্রধান উৎস। কিন্তু অপরিকল্পিত শিল্পায়নের প্রভাবে মাটির উপরিভাগের পানির উৎস দূষিত ও ধ্বংস হওয়ায় ভূগর্ভস্থ উৎসের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ে। এখন ওই ভূগর্ভস্থ পানিও ক্রমেই দূষিত হয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে আসে, ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুরসহ আট জেলার ভূগর্ভস্থ পানিতে ক্ষতিকর ভারী পদার্থের উপস্থিতি জনস্বাস্থ্যের জন্য সহনশীল মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। দূষিত ওই পানি সংশ্লিষ্ট এলাকার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে উঠেছে।

ফলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্যান্সারের মতো অসংক্রামক মরণব্যাধির ঝুঁকিও বাড়ছে। বাংলাদেশে ভূউপরিস্থ পানি নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে গবেষণা অপ্রতুল। নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে সরকারকে অবশ্যই দেশের ভূগর্ভস্থ পানির বর্তমান কোয়ালিটি কেমন তা গবেষণা করে জানা জরুরি এবং তা হালনাগাদ করা প্রয়োজন। সূত্র জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্ধারিত মানমাত্রা অনুযায়ী প্রতি মিলিগ্রাম পানযোগ্য পানীতে সহনীয় মাত্রার লেড থাকতে পারে যথাক্রমে শূন্য দশমিক শূন্য ১ ও শূন্য দশমিক শূন্য ৫ পিপিএম।

কিন্তু দিনাজপুরের কয়লা খনির আশপাশ এলাকার প্রতি লিটার ভূগর্ভস্থ পানিতে শূন্য দশমিক শূন্য ৭ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লেড পাওয়া গেছে। রাজশাহী শহরের ভূগর্ভস্থ পানিতে প্রতি লিটারে ১ দশমিক ১৮ মিলিগ্রাম ও মানিকগঞ্জে শূন্য দশমিক শূন্য ২ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লেড পাওয়া গেছে। ডব্লিউএইচওর মানমাত্রা অনুযায়ী প্রতি মিলিগ্রাম পানিতে দশমিক শূন্য শূন্য ৩ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যাডমিয়াম থাকলে তা সহনীয় মাত্রা হিসেবে বিবেচিত হবে, পরিবেশ অধিদপ্তরের মানমাত্রায় যা দশমিক শূন্য শূন্য ৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু গবেষণার নমুনায় পাওয়া তথ্য মতে, রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গা শহরের ভূগর্ভস্থ পানিতে ক্যাডমিয়ামের উপস্থিতি যথাক্রমে দশমিক শূন্য ১৪ ও দশমিক শূন্য ৩৩ মিলিগ্রাম।

তাছাড়া দিনাজপুরের কয়লা খনি এলাকায় এবং চুয়াডাঙ্গার ভূগর্ভস্থ পানিতে একাধিক ভারি ধাতু পাওয়া গেছে। আর ঢাকায় হাজারীবাগের ভূগর্ভস্থ পানিতেও একাধিক ভারি ধাতু মিলেছে। দীর্ঘদিন চামড়া প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের অবস্থানের কারণে ওই এলাকার ভূউপরিস্থ পানির সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানিও দূষিত হয়ে পড়েছে। এদিকে এ বিষয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক এএসএম সাইফুল্লাহ জানান, ক্রোমিয়াম ও লেড এ দুটো ভারি ধাতু মানবদেহে ক্যান্সার তৈরিতে বড় ভূমিকা পালন করে।

হাজারীবাগের ভূগর্ভস্থ পানিতে ক্রোমিয়াম পাওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ চামড়া শিল্পে ক্রোমিয়াম ব্যবহার হয়। ফলে স্বভাবতই সেটা ভূউপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানিকেও দূষিত করবে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিল্পে যেসব ক্ষতিকর পদার্থ ব্যবহৃত হয়, সেগুলো ধীরে ধীরে ভূগর্ভস্থ পানিতেও ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, যেভাবে জমিতে রাসায়নিক ও কীটনাশক ছড়ানো হচ্ছে, যেভাবে শিল্পদূষণের মাধ্যমে ভূউপরিস্থ পানি ও মাটি দূষিত করা হচ্ছে, তাতে সন্দেহ থাকার কোনো কারণই নেই যে এসব ভূগর্ভস্থ পানিকেও প্রভাবিত করবে। সরকারের উচিত ভূউপরিস্থ পানির মানমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির মানমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা। ইতোমধ্যে ভূউপরিস্থ পানি দূষিত হয়েছে। এখন যদি ভূগর্ভস্থ পানিও নষ্ট হয়ে গেলে রক্ষা নেই।