April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, July 4th, 2022, 12:49 pm

দৃশ্যমান হলো রূপসা রেল সেতু

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন ২৫ জুন রূপসা রেল সেতুর সপ্তম ও সর্বশেষ স্প্যানটি বসেছে। রূপসা নদীর ওপর সবগুলো স্প্যান বসানোতে মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের রেল সেতু। ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি হবে দেশের দীর্ঘতম রেল সেতু। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মোংলা-খুলনা রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। সেই সাথে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার সাথে খুলনা ও মোংলা বন্দরের রেল যোগাযোগের পথ সুগম হবে। ভারতের সঙ্গে মোংলা বন্দরের রেল যোগাযোগ স্থাপন হওয়ায় কম খরচে ভারত, নেপাল ও ভুটানে মালামাল পরিবহন করা যাবে।

খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ তিনটি ভাগে বিভক্ত। এর একটি রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। প্রকল্পের আওতায় লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। ইতোমধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ। রূপসা নদীর ওপরে যুক্ত হচ্ছে পাঁচ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেলসেতু। এছাড়া ২১টি ছোটখাটো ব্রিজ ও ১১০টি কালভার্ট নির্মাণ এবং খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত আটটি স্টেশন নির্মাণকাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ইতোমধ্যে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টুব্রো রূপসা নদীর ওপর রেলসেতুর নির্মাণ কাজ করছে। বাকি কাজ করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন ও রেলসেতু নির্মাণসহ সমগ্র প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণের এই প্রকল্পটি অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেলসেতুর পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ভারতীয় বহুজাতিক প্রযুক্তি, প্রকৌশলী, নির্মাণ, উৎপাদন ও আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান লার্সেন এ্যান্ড টার্বো (এলঅ্যান্ডটি)।

জমি অধিগ্রহণ, রেল লাইন ও রেল সেতু নির্মাণসহ সমগ্র প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরপর পাঁচবার সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যয় বেড়ে চার হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা হয়েছে ।

জানা গেছে, রূপসা রেল সেতুটি দুই দশমিক পাঁচ মিটার ব্যাসের এবং এর গড় গভীরতা ৭২ মিটার। রেলসেতুর ভায়াডাক্টের ৮৫৬টি পাইলের সবগুলোই বসানো হয়েছে। এর মোট পাইল বেস-গ্রাউটিং ৮৫৬টি, পাইল ক্যাপ ১৩৬টি, পিয়ার ১৩৬টি, স্প্যান ইর্যাকশান ১৩৬টি ও ব্যাক স্ল্যাব ১৩৬টির সবগুলোই সম্পন্ন হয়েছে। মূল সেতুর পাইল ৭২টি, পাইল ক্যাপ আটটি, বিয়ারিং ৩২টি সম্পন্ন হয়েছে। ব্রিজটির উপরিভাগ স্টিলের গার্ডার এবং আরসিসি ডেকের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। মূল সেতুর উপরিভাগে সাতটি স্প্যান বসানো হয়েছে। প্রধান সেতুর জন্য নেভিগেশনাল ক্লিয়ারেন্স স্ট্যান্ডার্ড হাই-ওয়াটার লেভেল (এসএইচডাব্লিউএল) থেকে ১৮ দশমিক ২৯ মিটার।

সেতুর অগ্রগতি সম্পর্কে রূপসা রেলসেতুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন ম্যানেজার সুব্রত জানা বলেন, রূপসা রেল সেতুর মেয়াদ ছিল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। ইতোমধ্যে রেল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সর্বশেষ স্প্যান বসেছে গত ২৫ জুন। নদীর ওপরে সাতটি স্প্যান বসানো হয়েছে। আর নদীর দুই পাশে রেল সেতুর সংযোগে ২ কিলোমিটার করে চার কিলোমিটার ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। ফলে এখন আর কোনো কাজ বাকি নেই। শুধুমাত্র পেন্টিংয়ের কাজ চলছে। এমন টুকটাক কাজ চলতে থাকবে।

তিনি বলেন, এখন যে কোনো দিন রেল সেতুর অংশের কাজ বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে বুঝিয়ে দিতে পারবো। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।

বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী সেপ্টেম্বরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেল সেতু আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে।

তিনি বলেন, রূপসা সেতুর ওপর দাঁড়ালে সম্পূর্ণ রেল সেতু দেখা যাচ্ছে। রেলপথ নির্মাণকাজ চলছে। রেলপথ বসাতে তেমন সময় লাগবে না। ছোটখাটো কিছু ব্রিজ এবং আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ চলছে। এগুলোও শেষ পর্যায়ে। আগামী চার মাসের মধ্যে এসব কাজ শেষ হয়ে যাবে। একইসঙ্গে টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিংয়ের কাজও সম্পন্ন করা হবে।

তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। এর মধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ট্রায়েল রান করার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগেও দু-একবার ট্রায়েল রান করানো হবে। সবশেষে আলোচনা সাপেক্ষে রেলপথ প্রকল্পের উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তনের আশাব্যক্ত করে রেল সচিব বলেন, খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মোংলা বন্দরের সঙ্গে খুলনা তথা সমগ্র বাংলাদেশের রেল সংযোগ তৈরি করবে। একইসঙ্গে পদ্মা রেল সেতু চালু হলে মোংলা থেকে মালামাল খুলনা-যশোর হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে সরাসরি ট্রেন ঢাকায় যাবে। সময় ও পথ কমে আসবে। এতে মোংলা বন্দরের কর্মকাণ্ড আরও গতিশীল হবে। মোংলায় নতুন জেটিরও নির্মাণ কাজ চলছে। জাহাজও আসবে। সব মিলিয়ে মোংলা বন্দরের চাহিদা বেড়ে যাবে-ইনশাআল্লাহ।

—ইউএনবি