May 17, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, February 12th, 2024, 6:58 pm

দেদারছে বিক্রি হচ্ছে উচ্চ মাত্রায় লবণযুক্ত খাদ্যপণ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির সুস্থ থাকতে দৈনিক ৫ গ্রাম লবণ গ্রহণের প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি গড়ে ৯ গ্রাম লবণ গ্রহণ করে, যা গ্রহণীয় মাত্রার প্রায় দ্বিগুণ। বিষয়টি উদ্বেগের হলেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন নেই। যদিও দেশে আয়োডিন যুক্ত লবণ ও নিরাপদ খাদ্য সংশ্লিষ্ট আইন রয়েছে কিন্তু খাবরে লবণের মাত্রা নিয়ে সেগুলোতে কিছু বলা নেই। ফলে খাবারের স্বাদ বাড়াতে পণ্যে ইচ্ছেমতো লবণ ব্যবহার করছে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলো। এছাড়া প্যাকেটজাত খাদ্য লেবেলিং প্রবিধানমালা ২০১৭ অনুসারে, প্রক্রিয়াজাত খাবারে বিদ্যমান লবণের পরিমাণ মোড়কের লেবেলে উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কেবল এক প্যাকেট চিপস খেলেই এক দিনের প্রয়োজনীয় লবণের অর্ধেক পেটে চলে যায়। অপর দিকে জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এক সমীক্ষার পর বলেছে, বাজারে প্রচলিত অধিকাংশ বিস্কুট, চিপস, চানাচুর, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ, ঝালমুড়ি, আচার, চাটনি ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারে নিরাপদ মাত্রার চেয়ে বেশি লবণ রয়েছে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ সপ্তাহে অন্তত একবার প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবার গ্রহণ করে।

প্রতি ১০০ গ্রাম খাবারে সর্বোচ্চ ৭৫০ মিলিগ্রাম লবণকে নিরাপদ মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারে উচ্চ মাত্রায় লবণ রয়েছে। হার্ট ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, দেশের বাজারে বিদ্যমান প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে লবণের উপস্থিতি নির্ণয়ে ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত আট বিভাগীয় শহর থেকে এক হাজার ৩৯৭ ধরনের প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

এর মধ্যে ১০৫ ধরনের প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবার ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেখানে ৬২ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারে অধিক (উচ্চ) মাত্রায় লবণ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ খাবারে অত্যধিক এবং ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ খাবারে বেশি লবণের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারে সঠিক মাত্রায় লবণ রয়েছে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন বলছে, বাজারে বিক্রি হয় এমন বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত খাবারগুলোতে স্বাদ বাড়ানোর জন্য বেশি লবণ দেয়া হয়। এসব খাবার যত কম খাওয়া যাবে তত স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর। তারা বলছেন, বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত খাবারে লবণ কমিয়ে আনলে তখন তা খেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্যাকেটজাত খাবার থেকে এখনই অতিরিক্ত লবণ কমিয়ে আনতে না পারলে স্ট্রোক, উচ্চরক্তচাপ এবং হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা কেবল বাড়তেই থাকবে। কেবল উচ্চরক্তচাপ বাড়লে নষ্ট হতে পারে চোখ, কিডনিসহ শরীরের বেশ কিছু প্রয়োজনীয় অঙ্গ। একই সাথে হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকিও বাড়বে খাবারে লবণ কমাতে না পারলে। লবণের মাত্রা কমিয়ে আনার ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, লবণ বয়স্ক মানুষের জন্য খুব বেশি উপকারী নয়। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের কাজে লাগে। তাই যথাসম্ভব লবণ পরিহার করা উচিত। এটা কেবল খাবারের স্বাদ বাড়ায় কিন্তু লবণ পরিহার করলে স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হবে না। সরকারই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে।

এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করে লবণ খাওয়ার মাত্রা কমিয়ে আনতে পারে। প্রতিবছর অতিরিক্ত লবণ শরীরে যাওয়ার ফলে গড়ে ১৮ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ তথ্যের আলোকে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঝুঁকি এড়াতে লবণ খাওয়ার পরিমাণ যতটা সম্ভব কমাতে হবে। এজন্য যেহেতু রান্নার উপকরণ বাজার বা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে কেনা হয়, তাই সতর্কতার প্রথম ধাপ সেখান থেকে শুরু করা দরকার। বিভিন্ন কেনার সময় অবশ্যই প্যাকেটের গায়ে ‘লো সোডিয়াম কনটেন্ট’ লেখা আছে কি না তা যাচাই করতে হবে। আসলে প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেজ হয়ে আসা খাবারে সোডিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে। ক্যানড স্যুপ থেকে ইনস্ট্যান্ট নুডলস, সব কিছুতেই সোডিয়ামের মাত্রা সাধারণভাবে বেশি থাকে। তাই এই ধরনের খাবার যথাসম্ভব কমিয়ে ফেলা দরকার। রান্নায় লবণের বদলে বিভিন্ন ধরনের মশলা, হার্বস ব্যবহার করতে হবে। আর রেস্টুরেন্টে গেলেও সতর্ক থাকা দরকার।

ভাজাভুজি জাতীয় পদের পরিবর্তে বেকড, গ্রিলড বা স্টিমড খাবার খেতে হবে। খাদ্যে লবণ ব্যবহারের পরিমাণ নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো আইন নেই। তাই সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ক্ষতিকর দিক জানাতে হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারে লবণের সঠিক ব্যবহারের জন্য সরকারকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এরমধ্যে রয়েছে, সর্বোচ্চ কী পরিমাণ লবণ ব্যবহার করা যাবে, সেটি নির্ধারণ করে দেওয়া। প্যাকেটের সামনে লেবেল ঠিক করে দেওয়া। খাবারে অতিরিক্ত লবণ ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার না করার বিষয়ে সতর্ক করা।