April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, January 9th, 2023, 7:36 pm

দেশের আকাশপথকে বিমান চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে লেজার রশ্মি

ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :

বিমান চলাচলে দেশের আকাশপথকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলছে লেজার রশ্মি। ঢাকায় রাতের আকাশে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় প্রতিনিয়ত এলোমেলো লেজার রশ্মির কবলে পড়ছে পাইলটরা। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সৈয়দপুরসহ কয়েকটি বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকাও বিমান অবতরণের সময় প্রায়ই লেজার লাইট পাইলটদের চোখে পড়ছে। অথচ ফ্লাইট অবতরণের সময় পাইলটকে প্রতিটি সেকেন্ড কাউন্ট করতে হয়। সামান্য হেরফের হলেই বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা থাকা। কিন্তু দেশের আকাশে ওই সময়ই মাঝে মাঝে পাইলটদের চোখে লেজারের নীল আলো পড়ে। তখন কিছু সময়ের জন্য তারা কিছুই দেখতে পায় না। তাতে যে কোনো ফ্লাইটই বড় ধরনের বিপদে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। কারণ প্রতিটি বিমানই অবতরণের সময় পাইলটকে নানা চার্ট ফলো করতে হয়। কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রাখতে হয়। ওই সময় লেজার নিক্ষেপ করলে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে। চোখে ধাঁধাঁ লাগায় চার্ট ও ইনস্ট্রুমেন্ট দেখতেও সমস্যা হয়। ফলে উড়োজাহাজকে রানওয়ের বাইরে নিয়ে যেতে পারে। ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশের ২১টি এলাকায় লেজার রশ্মি নিক্ষেপের ঘটনা বেশি ঘটছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, উড্ডয়নরত উড়োজাহাজে লেজার রশ্মি নিক্ষেপকে বিশ্বে আক্রমণাত্মক অস্ত্র হিসাবে গণ্য করা হয়। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশী-বিদেশী পাইলটরা ঢাকার বিমানবন্দরসংলগ্ন আকাশে লেজার রশ্মি আতঙ্কে ভুগছে। ইতোমধ্যে লেজার রশ্মির বিষয়ে আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অরগানাইজেশন (আইকাও) থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে অবিলম্বে এই ভয়ংকর লেজার রশ্মি নিক্ষেপ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়। এমনকি বিষয়টি আইকাও’র আগামী অধিবেশনে বিশেষ এজেন্ডায়ও রাখা হয়েছে। কারণ ঢাকার আকাশে উড়োজাহাজের ককপিট লক্ষ্য করে লেজার রশ্মি নিক্ষেপের ঘটনা ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। লেজার নিক্ষেপের ঘটনায় ঢাকার আকাশ অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এ ভয়ংকর কাজটি করছে খোদ ট্রাফিক পুলিশে কোনো কোনো কর্মকর্তা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেবিচকের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে মোবাইল ফোনে গণ মেসেজ পাঠানো হচ্ছে। তাছাড়া র‌্যাবসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা একই সঙ্গে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসংলগ্ন ২১টি স্থানে বিশেষ মনিটরিং করলেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বেবিচক চেয়ারম্যানকে ফের চিঠি দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে অবিলম্বে লেজার রশ্মি নিক্ষেপ বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়।
সূত্র জানায়, লেজার রশ্মির কারণে ঢাকা আকাশে বিমান চালনায় পাইলটরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশি পাইলটরা বাংলাদেশের বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনায় নিরুৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। তাছাড়া হ্রাস পেতে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোর গ্রহণযোগ্যতাও। লেজার হচ্ছে লাইট অ্যামপ্লিফিকেশন বাই স্টিমুলেটেড এমিশন অব রেডিয়েশন, যার সংক্ষিপ্ত রূপ লেজার। এক ধরনের আলোক রশ্মি। বিশেষ উদ্দীপনায় বিকিরণ ঘটিয়ে সাধারণ আলোর ক্ষমতা ও শক্তি বহুগুণ বাড়িয়ে লেজার তৈরি করা হয়। ঢাকায় রাতের বেলায় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের হাতে হাতে লেজার লাইট দেখা যাচ্ছে। ওই লাইট ছুড়ে তারা ট্রাফিক কর্তারা যানবাহনকে সংকেত দেয়। যদিও ইতোমধ্যে পুলিশ বিভাগ ওই লাইট ব্যবহার আইনসম্মত নয় বলে স্বীকার করেছে। তারপরও পুলিশের অনেক সদস্য লেজার লাইট ব্যবহার করছে। আর অভিযোগ আছে তাদের ব্যবহার করা লেজার লাইটের রশ্মিও অসাবধানতাবশত পাইলটের চোখে গিয়ে পড়ছে। তাছাড়া বিমানবন্দরের আশপাশের বাসিন্দাদের অনেকে মজা করে খেলার ছলে রাতের আকাশে উড়োজাহাজের দিকে লেজার রশ্মি নিক্ষেপ করে।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল আইন ২০১৭ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত বা বেপরোয়াভাবে বিমান পরিচালনায় অসুবিধা সৃষ্টি করলে যাবজ্জীবন কারাদ- কিংবা ৫ কোটি টাকা জরিমানা হতে পারে। কিন্তু প্রকাশ্যে হরহামেশা এমন ধরনের ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কারো কিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে সিভিল এভিয়েশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কেও অবহিত করা হয়েছে। উড্ডয়নরত বিমানের দিকে লেজার নিক্ষেপ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকতে সরকারের তরফ থেকে জনগণকে অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানান, লেজার লাইট নিক্ষেপের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এসএমএস পাঠানো, টিভি স্ক্রল দেয়া, মতবিনিময় সভাসহ পুলিশকেও বিশেষভাবে নজর রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। যেসব এলাকায় দেশের বিমানবন্দরগুলো আছে সেখানে সংশ্লিষ্ট থানাকেও পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। উড়োজাহাজে কেউ লেজার নিক্ষেপ করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।