নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে একদিনে যেমন জনবল ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে, অন্যদিকে চিকিৎসকরা নিয়মিত কর্মস্থলে থাকে না। কোনো কোনো চিকিৎসক কর্মস্থলে যোগদান করেই ঢাকায় চলে আসে। আর যারা কর্মস্থলে অবস্থান করে তারাও ২/১ ঘন্টার বেশি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সময় দেয় না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনেরও যথাযথ মনিটরিং নেই। আবার অনেক উপজেলা হাসপাতালে এক্সরে, প্যাথলিজ ও অপারেশন থিয়েটার এবং জনবল থাকলেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেখানে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিংবা অপারেশন করানো হয় না। রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশাপাশে গড়ে ওঠা বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকরা ৫০ থেকে ৬০ ভাগ কমিশন পায়। আর ওই টাকার ভাগ যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সিভিল সার্জন ও তার উপরের মহল পর্যন্ত। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবার করুণ অবস্থা থাকলেও তার কোনো প্রতিকার নেই। স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা মহামারী মোকাবেলায় সরকার প্রয়োজনীয় সব কিছুই করছে। কিন্তু তারপরও ভেঙ্গে পড়েছে মাঠপর্যায়ের চিকিৎসা সেবা। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে সঠিকভাবে সিভিল সার্জনদের মনিটরিংয়ের অভাব। আর বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) দায়িত্ব সিভিল সার্জনরা ঠিক মতো কাজ করছে কিনা তা দেখা। কিন্তু তারাও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। সিভিল সার্জনরা জেলার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি সঠিকভাবে মনিটরিং না করার অন্যতম কারণ হচ্ছে অবৈধ অর্থের ভাগ। যদিও সিভিল সার্জনদেরই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর সার্বিক তদারকি করার দায়িত্ব। কিন্তু তারা চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে।
সূত্র জানায়, করোনা মহামারী দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। যদিও দীর্ঘদিন ধরেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা বিরাজ করছে। কিন্তু দেশে বড় কোনো বিপর্যয় না আসায় এতোদিন তা বোঝা যায়নি। প্রায় দেড় বছর ধরে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব চলছে। কিন্তু এতোদিনেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া নেয়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাধারণ অপারেশনের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এক শ্রেণীর চিকিৎসক সেখানে অপারেশন না করে বাইরের ক্লিনিকে রোগীদের অপারেশন করায়। তাছাড়া অধিকাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই করোনা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে। কিন্তু রোগীরা আসলেই তাদের চিকিৎসা সেবা না দিয়ে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ওই রোগীটি কোয়ারেন্টাইনে থাকছে কিনা তার কোনো খবর নেয়া হয় না। ফলে করোনা রোগীরা নিজের ইচ্ছামতো চলাফেরা করছে এবং অন্যান্য মানুষকে সংক্রমিত করছে। আর যখন শারীরিক অবস্থা খারাপ হয় তখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হতে ঘুরতে থাকে। সেখানে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে জেলাপর্যায়ে কিংবা ঢাকায় আসতে আসতে রাস্তায় মারা যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) শেখ মো. হাসান ইমাম জানান, ডাক্তারদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার জন্য ইতিমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রতি সোমবার জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে। যারা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকবে, দায়িত্ব পালনে অবহেলা করবে- খবর নিয়ে তাদের বিরদ্ধে অধিদপ্তর থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম