নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারে দেশের প্রথম বাণিজ্যিক বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এর কাজ গত বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কেন্দ্রটি পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে যেতে কিছুটা বাড়তি সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোদমে উৎপাদনে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব (নবায়নযোগ্য জ্বালানি) নিরোদ চন্দ্র মন্ডল জানান, বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটি প্রায় শেষের পথে।
অন্যদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে পুরোদমে উৎপাদনে যাবে ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ‘খুরুশকুল বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প’। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির আওতায় কক্সবাজার সদরের চার ইউনিয়নের উপকূল রেখাজুড়ে ১৯টি টার্বাইন বা পাখা বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী একটি টার্বাইন বসানো হলেই পুরোদমে উৎপাদনে যাবে দেশের বৃহত্তম ও প্রথম বাণিজ্যিক এ বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পটি। এর ফলে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। প্রায় ১১৬ দশমিক ৫১ মিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ‘খুরুশকুল বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটির কাজ ২০২২ সালের ৩১ মার্চ শুরু হয়। একই বছরের ৩১ অক্টোবর প্রকল্পের প্রথম টারবাইন (পাখা) উত্তোলনের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
এরপর গত বছরের ২৬ মে ১০টি টার্বাইন বসানোর কাজ সম্পন্ন হলে জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলকভাবে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। জানা গেছে, চীনা কোম্পানি এসপিআইসি উইলিং পাওয়ার করপোরেশনের আর্থিক সহায়তায় ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি বিডি লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল, চৌফলদন্ডি ও ভারুয়াখালী- এ চার ইউনিয়নের উপকূল রেখাজুড়ে ২২টি টার্বাইন বা পাখা বসানো হচ্ছে। প্রতিটি টার্বাইন থেকে ৩ মেগাওয়াট করে প্রায় ৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।
ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ ৯২ শতাংশ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি বিডি লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুকিত আলম খান। তিনি জানান, প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ১৯টি টার্বাইন বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী একটি টার্বাইন বসানো হলেই আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পুরোদমে উৎপাদনে যাবে দেশের প্রথম ও বৃহত্তম এই বাণিজ্যিক বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পটি। আর এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কক্সবাজারের চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে। বর্তমানে এ কেন্দ্র থেকে ৩৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। তিনি জানান, প্রকল্পের আওতায় ২২টি টার্বাইন বসানোর কথা থাকলেও কেন্দ্রটি পুরোদমে উৎপাদনে যেতে ২০টি টার্বাইন লাগবে। তাই পরে বাকী দু’টি টার্বাইন বসানো হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, কেন্দ্রটি ১ লাখ পরিবারের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের সময় দেড় হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এ বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোদমে চালু হওয়ার পর বছরে প্রায় ১৪ কোটি ৫০ লক্ষ কিলোওয়াট পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ৪৪ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন কয়লা। আর এ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হয় প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার ২০০ মে. টন। এই কেন্দ্রটির কাজ শেষ হওয়ার পর প্রকল্পের তত্ত্বাবধানকারী সংস্থাটি ১৯ বছরের ব্যবস্থাপনা চুক্তির অধীনে সরকারের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করবে।
এদিকে কক্সবাজারের বাইরে সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১০২ মেগাওয়াট সক্ষমতার আরও কয়েকটি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে। চাঁদপুর সদরে ৫০ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং ফেনীর সোনাগাজীতে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিকল্পনাও পাইপলাইনে রয়েছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বাগেরহাটের মোংলায় একটি ৫৫ মেগাওয়াটের বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য মোংলা গ্রিন পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি