November 15, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, April 19th, 2022, 9:14 pm

দেশের বিপুলসংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয়েই নেই প্রধান শিক্ষক

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের বিপুলসংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষক নেই। অথচ বিদ্যালয়ে পাঠদানসহ শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রধান শিক্ষকই নেতৃত্ব দেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রেখেই বছরের পর বছর চলছে দেশের কয়েক হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক কার্যক্রমের নেতৃত্ব ও তদারকিতে বেশ স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিগত ২০১২ সালের পর দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আর সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। সহকারী শিক্ষকের পদোন্নতিও বিলম্বিত হয়েছে। আর স্কুলের প্রধান শিক্ষক না থাকায় প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা তৈরি হচ্ছে। আর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহকারী শিক্ষক না থাকায় পাঠদান কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। প্রাথমিক শিক্ষা খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, যেসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই সেখানে সিনিয়র সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে জোড়াতালির মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে আশানুরূপ গতি আসছে না। ফলে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা শিক্ষক শূন্যতাসহ নানাবিধ সংকটের কারণে জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের ভর্তি করাতে আগ্রহ হারাচ্ছে। আর নিম্নবিত্ত শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সরকারি প্রাথমিকে ভর্তি হলেও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও তত্ত্বাবধান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় দ্রুত শূন্য পদে প্রধান ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের প্রতি নিবিড় তত্ত্বাবধান বাড়াতে না পারলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংকট চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। প্রধান শিক্ষকের শূন্যতায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অনেকটা দায়সারাভাবে সহকারী শিক্ষকরা পাঠদানের নামে সময় পার করছেন। শিক্ষক সংকটে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পাচ্ছে না। পাঠ্যসূচি অনুযায়ী পড়ালেখা নিয়েও হতাশা রয়েছে। ফলে ওসব প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জনেও পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা তীব্র হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ফেনীর ৬টি উপজেলায় ৫৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫৩ জন প্রধান শিক্ষক ও ২২১ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সাতক্ষীরায়ও একই ধরনের পরিস্থিতি। ওই জেলার ৭টি উপজেলায় ১ হাজার ৯৫টি সরকারি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। তার মধ্যে ১১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। যা মোট স্কুলের ১০ শতাংশেরও বেশি। বগুড়া জেলায় ১ হাজার ৬০১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩০০টি পদ শূন্য রয়েছে। বরিশাল জেলার ১০ উপজেলার ১ হাজার ৫৯২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৪২টিতেই প্রধান শিক্ষক নেই। ২০১৯ সালের এপিএসসি অনুযায়ী ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মোট শূন্য পদ ৭ হাজার ১৮টি আর সহকারী শিক্ষকের মোট শূন্য পদ ২১ হাজার ৮১৪টি। প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদের মধ্যে পদোন্নতিযোগ্য ৪ হাজার ১৬৬ জন (৬৫ শতাংশ) ও সরাসরি নিয়োগযোগ্য ২ হাজার ৮৫২ জন (৩৫ শতাংশ)।
সূত্র আরো জানায়, সরকারি বিধি মোতাবেক ৬৫ ভাগ সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি পেয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পায় আর ৩৫ ভাগ নতুন নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে পদোন্নতি বন্ধ থাকায় দিন দিন প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর করোনা মহামারী শুরু হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রমের বাকি ধাপগুলো শুরু হয়েছে। করোনাকালে শ্রেণী কার্যক্রম নিয়মিত না থাকায় শিক্ষক কর্মচারী সংকট থাকলেও তেমন কোনো সমস্যা দেখা হয়নি। কিন্তু গত ১৪ মার্চ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি চালুর ঘোষণা করা হলে পরিপূর্ণ জনবল কাঠামো জরুরি হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদে জনবল কম থাকায় প্রশাসনিক ও শ্রেণী কার্যক্রমে প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়ছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞ এবং প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে শিক্ষিত নাগরিক গড়ে উঠবে না। সেজন্য দ্রুত শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দানের পাশাপাশি শিক্ষা খাতে সরকারের আরো বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি। বিদ্যালয়ে শিক্ষদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি স্কুল পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে। আর উচ্চ আদালতে এ-সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন থাকায় নতুন করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার পদমর্যাদায় উন্নীত হওয়ায় এখন পিএসসির মাধ্যমে সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদোন্নতি ও নিয়োগ দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। অথচ প্রতি বছরই অনেক শিক্ষক অবসরে যাচ্ছে। ফলে দিন দিন শিক্ষক সংকট বাড়ছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো কষ্টসাধ্য। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকায় তারা দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজ তেমন বোঝে না। অনেক ক্ষেত্রে উপজেলা ও জেলা কার্যালয় থেকে তাদের বারবার তাগাদা দেয়ার পরও সঠিকভাবে কাজ আদায় করা যায় না।