নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের বিমানবন্দরগুলোতে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণে পাইলটরা পাখি আতঙ্কে ভুগে। কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরে উড়ন্ত উড়োজাহাজে পাখির আঘাত ঠেকাতে পারছে না। তাতে বাড়ছেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা। শুধুমাত্র শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই গত ৫ মাসে বিমানের সাথে ২৭ বার উড়ন্ত পাখির সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পাখির আঘাতজনিত কারণে বহু ফ্লাইট জরুরি অবতরণ করেছে। তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বার্ড স্ট্রাইকে কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়ছে। অথচ বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে নেই পাখি তাড়ানোর জন্য কোনো শটগান বা আধুনিক প্রযুক্তি। নেই প্রশিক্ষিত বার্ড শুটার ও পর্যাপ্ত বন্দুকও নেই। আর মান্ধাতার আমলের যে অস্ত্র আছে তার অধিকাংশই অকেজো। এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের ৮টি বিমানবন্দরের রানওয়ে এলাকায় প্রায়শই বিমানের সাথে পাখির সংঘর্ষসহ ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। ওসব দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত উড়োজাহাজ মেরামতে খরচ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। যদিও পাখি তাড়াতে কর্তৃপক্ষ গত কয়েক বছর ধরেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বললেও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। গত ২৬ ডিসেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ইঞ্জিনে পাখির আঘাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সর্বাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশ্য পাইলট বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হয়। বিমানটিতে প্রায় ৮৭ জন যাত্রী ছিলেন। পাখির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডেড করা হয়েছে। তার আগে ওই বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি গত বছরের ১৪ আগস্ট সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরে অবতরণের সময় পাখির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ওই সময়ও ৮৫ জন যাত্রী নিয়ে পাইলট বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করাতে সক্ষম হন।
সূত্র জানায়, বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় বার্ড হিট ও বন্যপ্রাণীর কারণে অগ্নিকা-সহ ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বাড়ছে। বিশেষ করে শাহজালাল ও সিলেট বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ প্রায়ই বার্ড হিটের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাতে উড়োজাহাজের যাত্রী ও নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ার পাশাপাশি গচ্চা যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বার্ড হিটের মতো ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বেবিচক বিমান বাহিনীর কাছে ৪টি শটগান (ডাবল ব্যারেল) ধার চেয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বিমানবন্দরের চারপাশের জলাশয়ে শীতকালে নতুন করে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসে। উড়োজাহাজ যখন আকাশে উড়ে তখন বিপরীত দিক থেকে পাখি আঘাত করে। পাখি কখনো কখনো এয়ারক্রাফটের ডানায় থাকা ইঞ্জিনের ভেতরে ঢুকে পড়ে। তাতে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। আবার ইঞ্জিনে আগুনও ধরে যেতে পারে। পাখি হিট করার কারণে এয়ারক্রাফট মেরামতে কমপক্ষে এক দিন, আবার কখনো দুই দিনও সময় লেগে যায়। তাতে একদিকে এয়ারক্রাফট অচল হয়ে শিডিউল বিপর্যয় হয়ম অন্যদিকে আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়তে হয়। এ ঘটনা শুধু বিমানে বা দেশীয় এয়ারক্রাফটে হচ্ছে না, বিদেশি উড়োজাহাজেও ঘটছে। বিমানের ইঞ্জিনে পাখি ঢুকলেই বেশি ক্ষতি হয়। বড় ধরনের দুর্ঘটনার পাশাপাশি পাইলটদেরও মানসিক চাপে থাকতে হয়। কারণ তাতে ইঞ্জিনের ফ্যান, ব্লেড ও স্পিনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বর্তমানে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের পাশের লেক লিজ দিয়ে মাছ চাষ করা হয়। তাছাড়াও বিমানবন্দরের পাশে রয়েছে পরিত্যক্ত ডোবা-নালা, আবর্জনা এবং রানওয়ের সবুজ ঘাস। যা পাখিদের আকৃষ্ট করে। প্রতিদিনই মাছ আর কীটপতঙ্গ খেতে সেখানে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি হাজির হয়। কয়েক বছর আগেই ‘পাখি তাড়ানোর কমিটি’ করা হলেও সমস্যার কোনো সমাধান মেলেনি।
এদিকে এ প্রসঙ্গে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম জানান, শীত মৌসুমে শাহজালাল বিমানবন্দরে পাখি বেশি আসে। ফলে অতিরিক্ত সতর্কতা বিবেচনায় বিমান বাহিনীর কাছে অস্ত্র চাওয়া হয়েছে। আগের চেয়ে বার্ড হিটের ঘটনা অনেক কমেছে। আরো লোকবল ও অস্ত্র কেনার বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক