March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, February 12th, 2022, 8:40 pm

দেশের সকল জলমহাল ইজারায় নেয়া হবে অনলাইনে আবেদন

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জলমহাল ইজারার ক্ষেত্রে স্থানীয় ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের প্রভাব এড়াতে অনলাইনে আবেদন গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারি হিসাবে বর্তমানে বিভিন্ন আকারের ৩৮ হাজার ৪৪টি জলমহাল রয়েছে। কিন্তু নানা কারণে জলমহাল ইজারা পদ্ধতি প্রতিযোগিতামূলক না হওয়ায় রাজস্ববঞ্চিত হয় সরকার। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ৫ বছরের জন্য জলমহালের ইজারা পেতে অনলাইনে আবেদনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের ৩০ জেলা থেকে ৪৬৮টি আবেদন এসেছে। তার মধ্যে ১০ জেলার ৫৫টি জলমহাল ইজারা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জেলা ও উপজেলায় সাধারণ আবেদনে জলমহাল ইজারার আবেদন দাখিলের বিধান প্রবর্তন করা হলে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন এবং মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিসহ সবাই উপকৃত হবে। আর অনলাইনে জলমহাল ইজারার আবেদন দাখিল করার কারণে মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যরা ইজারা প্রক্রিয়ার নানাবিধ জটিলতা এড়াতে পারছে। তাছাড়া এ সম্পর্কিত যাতায়াত কমে যাওয়ায় সমিতির সদস্য মৎস্যজীবীদের অনেক অর্থ সাশ্রয় হবে। সেজন্যই উন্নয়ন প্রকল্পের মতো জেলা ও উপজেলায় আবেদনে অনলাইনে জলমহাল ইজারার আবেদন দাখিলের বিধান প্রবর্তনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিল, হাওর, বাঁওড়, নিম্ন জলাভূমি ও নদ-নদীর মৎস্য আহরণের এলাকাকে জলমহাল বলা হয়। ছোট-বড় মিলিয়ে দেশের জলমহালের সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার ৪৪টি। একটি পাইলট কার্যক্রমে উন্নয়ন প্রকল্পে জলমহাল অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে ইজারা দেয়া হয়েছিল। এখন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সব ধরনের জলমহাল ইজারার ক্ষেত্রে অনলাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তার মাধ্যমে একদিকে যেমন ইজারা নিতে আগ্রহীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে, অন্যদিকে হয়রানিও বন্ধ হবে। পাশাপাশি সরকারও বেশি রাজস্ব আদায় করতে পারবে। ওসব জলমহাল ইজারা দিয়ে বছরে শতকোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সাধারণত ২০ একরের ঊর্ধ্বে সরকারি জলমহাল ইজারার অনুমোদন মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দেয়া হয়ে থাকে। তবে মন্ত্রণালয় বিশেষ ও দর্শনীয় ঐতিহ্যবাহী জলমহালগুলো ইজারা দেয় না। ওসব জলমহাল থেকে গত ৫ অর্থবছরে প্রায় ৪৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। তার মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জলমহাল ইজারার মাধ্যমে ৯২ কোটি ৫৩ লাখ, পরের অর্থবছরে ৮৪ কোটি ২৪ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আয় হয়। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ১০১ কোটি ১১ লাখ টাকায় উন্নীত হলেও ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ৮২ কোটি টাকায় নেমে আসে। নতুন আবেদনের প্রক্রিয়া চালুর মাধ্যমে চলতি অর্থবছরে আয় শতকোটি টাকায় উন্নীত করতে চায় মন্ত্রণালয়।
সূত্র আরো জানায়, ১৪২৯-১৪৩৪ বঙ্গাব্দ মেয়াদে উন্নয়ন প্রকল্পে জলমহাল ইজারার জন্য বিভিন্ন জেলার ৪৬৮টি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড অনলাইনে আবেদন দাখিল করে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে রাজশাহী, পাবনা, নাটোর, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, গাইবান্ধা, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ ও কিশোরগঞ্জ জেলার মোট ৫৫টি প্রস্তাব এবং বিবিধ ৩টি প্রস্তাব সরকারি জলমহাল ইজারা প্রদান-সংক্রান্ত কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয়। যাচাই-বাছাই করে জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদন ও অন্যান্য সার্বিক দিক বিবেচনা করে সরকারি জলমহাল ইজারা-সংক্রান্ত কমিটি ইজারার অনুমোদন দেয়। আর উপস্থাপিত ইজারা আবেদনের শতভাগই অনলাইনের মাধ্যমে দাখিল করা হয়েছে। তবে প্রাকৃতিকভাবে মাছের বংশবৃদ্ধি এবং মা মাছ সংরক্ষণের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় জলমহাল অভয়াশ্রম ঘোষণা এবং নির্বাহী আদেশে ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় স্থান হিসেবে চিহ্নিত করায় বেশকিছু জলমহাল ইজারাবিহীন রাখা হয়েছে। বেশ কয়েকটি জলমহাল ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় স্থান যেমন দিনাজপুরের রামসাগর, সিরাজগঞ্জের হুরাসাগর। মাছ সংগ্রহের অভয়াশ্রম ঘোষিত জলমহালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর ও মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর।
এদিকে গত ১৫ নভেম্বর জারি করা এক পরিপত্রের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয় অনলাইনে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে জলমহাল ইজারার আবেদন দাখিলের সুবিধা চালু করে। বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের অধীন সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে ২২টি জলমহাল এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৭৮৩টি খাস পুকুর হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল পদক্ষেপ হিসেবে সায়রাত মহালসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অনলাইনে ডাটাবেজ (ভূমি তথ্য ব্যাংক) তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। জলমহাল ইজারার আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়া অনলাইনে চালু হলে জলমহাল ইজারার আবেদন করাসহ ইজারা প্রক্রিয়ার জটিলতা নিরসন সম্ভব হবে। সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি, ২০০৯ অনুযায়ী নিবন্ধিত ও প্রকৃত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি জলমহাল ইজারা পেতে সাধারণভাবে জেলা ও উপজেলায় এবং উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। কিন্তু চলমান পদ্ধতিতে আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজ জমা না দেয়ায় আবেদন বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু অনেকেই সব কাগজ জমা দিয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ করে আবেদন বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানায়। তাছাড়া জলমহাল ইজারা গ্রহণের জন্য প্রতিযোগিতা, একাধিক সমিতির আবেদন দাখিলে অনেক ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়।