নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের সড়ক-মহাসড়কে প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে বিপুলসংখ্যক নতুন গাড়ি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) প্রতিদিন গড়ে ৫৩০টি নতুন যানবাহনকে লাইসেন্স দিচ্ছে। আর ধারা অব্যাহত থাকলে সড়কে বিশৃঙ্খলা বাড়ার পাশাপাশি বসবাসের জন্য আরো অনুপযোগী হয়ে পড়বে রাজধানী ঢাকা। বর্তমানে সারা দেশের বিভিন্ন সড়কে বিআরটিএর রেজিস্ট্রেশন পাওয়া বৈধ ৫৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৬০টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। তার মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৪ হাজার ২৫২টি যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়। ওই হিসেবে গত ৭ মাসে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ৫৬২টি করে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারা দেশে ২২ হাজার ৪৭৬ দশমিক ২৮ কিলোমিটার জাতীয়, আঞ্চলিক, জেলা সড়ক-মহাসড়ক রয়েছে। তার মধ্যে জাতীয় ৩৯৭৯.২৪৮ কিলোমিটার, আঞ্চলিক ৪৮৯৭.৭০৮ এবং জেলায় ১৩৫৪১. ৪৯৮ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। আর রাজধানীর ঢাকা ও তার আশপাশে ২৭৬.৬১ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। আর ওসব সড়কে চলাচলকারী বিআরটিএ’র রেজিস্ট্রেশন পাওয়া বিভিন্ন যানবাহনের মধ্যে রয়েছে এ্যাম্বুলেন্স, অটোরিক্সা, অটো টেম্পু, বাস, কার্গো ভ্যান, কাভার্ড ভ্যান, হিউম্যান হলার, মাইক্রোবাস, জিপ, মিনিবাস, মোটরসাইকেল, পিকআপ, প্রাইভেট কার, স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল, টেক্সি ক্যাব, ট্রাক্টর, ট্রাক। বিআরটিএ মোট ১৩টি ক্রাইটেরিয়ায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকে। তার মধ্যে মোটরসাইকেল সবচেয়ে বেশি রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত দেশব্যাপী ৩৭ লাখ ৯০ হাজার ১৪২টি মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। আর রেজিস্ট্রেশন দেয়ার দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে প্রাইভেটকার। দেশব্যাপী ৩ লাখ ৯২ হাজার ৬২৯টি প্রাইভেটকারের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। পরের তালিকায় রয়েছে অটোরিক্সা। ৩ লাখ ৯ হাজার ৪৫৭টি বৈধ অটোরিক্সা দেশব্যাপী চলাচল করছে। দেশব্যাপী বৈধ রেজিস্ট্রেশনকৃত ট্রাক চলাচল করছে এক লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৬টি। বৈধ বাস চলাচল করছে ৫০ হাজার ৯৩৪টি। মিনিবাস ১ লাখ ১২ হাজার ৯১৬টি এবং পিকআপ ১ লাখ ৫০ হাজার ২৬২টি। চলতি বছরের শুরু থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত দেশব্যাপী বিভিন্ন বিআরটিএ’র কার্যালয় থেকে ২ লাখ ৮৯ হাজার ২৩৭টি মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ৩৪৭টি করে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়। আর ১০ হাজার ৬৩৯টি প্রাইভেটকারের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০টিরও বেশি প্রাইভেটকারের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া ৩ হাজার ৯৪৯টি অটোরিক্সা, ১ হাজার ৫৭৬টি বাস, ২২৩টি মিনিবাস, ৪ হাজার ৫৪৭টি মাইক্রোবাস, ৬ হাজার ৪০১টি জিপ, ৩ হাজার ৩৪৮টি ট্রাক, ৬ হাজার ৪০৯টি পিকআপসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৫৩৪টি বৈধ রেজিস্ট্রেশন করা বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। তার মধ্যে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত নতুন রেজিস্ট্রেশন দেয়া বিভিন্ন ধরনের গাড়ির সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজার ৯৩৭টি। প্রতিদিন গড়ে ৫৩০টি যানবাহনের নতুন লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন সড়কে যুক্ত হচ্ছে ওসব নতুন গাড়ি। রাজধানীতে ৯ লাখ ৭২ হাজার ৭৮০টি রেজিস্ট্রেশনকৃত মোটরসাইকেল চলাচল করছে। রেজিস্ট্রেশন দেয়া বিভিন্ন যানবাহনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত নতুন ৭৭ হাজার ৭৭৪টি মোটরসাইকেলকে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ৫০টির বেশি মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। তাছাড়া রাজধানীতে রেজিস্ট্রেশনকৃত বৈধ চলাচলকারী বাসের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৬২৬টি। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ২৮৪টি বাসকে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। রাজধানীতে বৈধ রেজিস্ট্রেশনকৃত চলাচলকারী মিনিবাসের সংখ্যা ৮৮ হাজার ৭১৬টি। গত ৭ মাসে নতুন রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ১৫৫টি। রাজধানীতে রেজিস্ট্রেশনকৃত চলাচলকারী বৈধ পিকআপের সংখ্যা ১ লাখ ৯ হাজার ৩৮২টি। গত ৭ মাসে নতুন ৫ হাজার ২৮৫টি পিকআপের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। ৮৮ হাজার ৭১৬টি রেজিস্ট্রেশনকৃত মাইক্রোবাসের মধ্যে জুলাই পর্যন্ত গত ৭ মাসে ৪ হাজার ১৫৫টির নতুন রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। আর রাজধানীতে ২০১০ সালে বিভিন্ন ধরনের রেজিস্ট্রেশন গাড়ির সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫০১টি। কিন্তু এক যুগে রাজধানীতে সড়কের সংখ্যা তেমন না বাড়লেও সর্বমোট ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৫৩৪টি গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। বিগত ২০১০ সালে সারা দেশে বৈধ রেজিস্ট্রেশন করা গাড়ির সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ২৭ হাজার ৩৬৮টি। প্রায় ১২ বছর পর সাড়ে গাড়ির সংখ্যা ৫৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৬০টিতে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, দেশে কী পরিমাণ সড়ক রয়েছে, এমনকি রাজধানীর সড়কের বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে সড়কের ব্যবস্থাপনা এবং যানবাহনের ব্যবস্থাপনা নির্ণয় করা খুবই জরুরি। এ দুটি বিষয় সমন্বয় করতে না পারলে যানজটের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। এমনকি দুর্ঘটনার কবল থেকেও মুক্তি পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। ঢাকা শহরে কী পরিমাণ যানবাহনের ক্যাপাসিটি রয়েছে তা নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। পাশাপাশি ক্যাপাসিটির বাইরে যানবাহন যেন রেজিস্ট্রেশন পেতে না পারে তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করাও জরুরির। যদি তা না হয় তাহলে ঢাকা শহরকে একটা পরিত্যক্ত শহর হিসেবে পরিণত হতে যাচ্ছে। ঢাকা একদিন অচল হড়ে পড়বে। তবে রাজধানীতে যে পরিমাণ গণপরিবহনের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে, তার থেকে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া চলাচলরত গাড়ির সংখ্যাই বেশি।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ