March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, October 26th, 2022, 9:11 pm

দেশে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে শস্যবীজ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে শস্যবীজ অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। আর শস্যবীজের অস্বাভাবিক দাম কৃষকের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ধান, গম, ভুট্টা, সরিষাসহ বিভিন্ন শস্যবীজের নতুন দাম বেঁধে দিয়ে নির্দেশনা জারি করেছে। তাতে ডিলার ও কৃষকদের আগের চেয়ে কোনো কোনো বীজ প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। প্রকারভেদে ১০ কেজি বস্তার ধানবীজ ৫৭০ থেকে ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায় বিক্রি করছে। তাছাড়া সবজি বীজের দামও বেড়েছে। আর এখন লাগামছাড়া আমদানি করা বীজের দাম। কৃষক, বীজ ব্যবসায়ী এবং বিএডিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অতিসম্প্রতি বিএডিসির ভাড়া ও মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভায় ২০২২-২৩ বিতরণ বর্ষের জন্য বোরো ধান, গম ও ভুট্টাবীজের বিক্রয় দর নির্ধারণ করা হয়। তাতে ধানবীজের দাম প্রকারভেদে (১০ কেজির বস্তা) ৫৭০ থেকে ৭৫০ টাকা নির্ধারণ হয়। গত বছর চাষি পর্যায়ে ওই দর ছিল ৫২০ থেকে ৬৩০ টাকা। ২০২০ সালে দাম ছিল ৪১০ থেকে ৫৮০ টাকা। দাম বেড়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। এসএল-৮এইচসহ অন্য সুপার হাইব্রিড জাতের ধান (১০ কেজির বস্তা) ডিলার পর্যায়ে ২ হাজার ৩০০ টাকা ও কৃষক পর্যায়ে ৩ হাজার টাকা। আমদানি করা এসএল-৮ ধানবীজ ডিলার পর্যায়ে ৫ হাজার ৬০০ টাকা ও কৃষক পর্যায়ে ৬ হাজার ২০০ টাকা। গত বছর এসএল-৮এইচসহ অন্য হাইব্রিড জাতের ১০ কেজি ধানবীজের দাম ছিল ডিলার পর্যায়ে ১ হাজার ৯৬০ টাকা ও চাষি পর্যায়ে ২ হাজার ৩০০ টাকা। ২০২০ সালে এসএল-৮এইচসহ অন্য হাইব্রিড জাতের ১০ কেজি ধানবীজের দাম ছিল ডিলার পর্যায়ে ১ হাজার ৯২০ টাকা ও চাষি পর্যায়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা। তাছাড়া সব ধরনের গম বীজেরও দাম বেড়েছে। এ বছর প্রতি কেজি গম বীজের দাম ৫১ থেকে ৬৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২০ ও ২০২১ সালে দাম ছিল ৪১ থেকে ৫৫ টাকা। তাছাড়া মসুর ডাল প্রতি কেজি ৮০ থেকে বেড়ে ১১২ টাকা, সরিষা ৯৩ থেকে বেড়ে ১৩২ টাকা ও ভুট্টা ১২৫ থেকে বেড়ে ১৬০ টাকা করা হয়েছে। ২০২১ সালে দেশে শাকসবজি, ধান, গম, ভুট্টা, পাট, চা, তামাকসহ বিভিন্ন বীজ ৮ হাজার ৯২৪ কোটি টাকার বিক্রি হয়েছে। বাজারে আমদানি করা সব বীজের দাম ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা বেড়েছে।
সূত্র জানায়, এমনিতেই ডিজেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে সেচ দেয়া, মাড়াই করা, ফসল ঘরে তোলা, শ্রমিকের মজুরি সব ক্ষেত্রেই কৃষককে বাড়তি খরচের বোঝা টানতে হচ্ছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে অনাবৃষ্টি ও লোডশেডিং। এমন অবস্থার মধ্যেই সব শস্যবীজের দাম বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের মতে, ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানিকৃত বীজের দাম বেড়েছে। শীতকালীন সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে টমেটোবীজের দাম। গত বছর জাপানি হাইব্রিড টমেটো বীজ প্রতি কেজি ৩ লাখ টাকা বিক্রি হলেও এ বছর তা বেড়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপির বীজ কেজিতে ১০ হাজার টাকা বেড়ে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর মুলাবীজের কেজি ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা আর এ বছর তা ২ হাজার টাকা হয়েছে। বাঁধাকপিবীজের দাম কেজিতে ২ হাজার টাকা বেড়েছে। লালশাক ও পালংশাকের বীজের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। ৯০ টাকার ২ গ্রাম বেগুনবীজ এখন ১২০ টাকা, ২ হাজার ৫০০ টাকার ১ কেজি পেঁয়াজবীজ এখন ৪ হাজার টাকা, ৩০০ টাকার ৫ গ্রাম মরিচবীজ এখন ৩৮০ টাকা, ১৫০ টাকার ১০ গ্রাম করলাবীজ এখন ১৯০ টাকা, ২৮০ টাকার ১০ গ্রাম শসাবীজ এখন ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে সব ধরনের বীজের দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। শীতের সবজিবীজের ক্ষেত্রেই দাম বাড়ার ওই প্রবণতা বেশি।
সূত্র আরো জানায়, অপ্রতুল সরবরাহের কারণে বীজের বাজার লাগামহীন হয়ে উঠছে। ডলার ও তেলের দাম বাড়ার কারণে বীজ বিপণনে খরচ বেড়েছে। সেজন্যই অতিরিক্ত দামে বীজ বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজবীজের দাম গতবারের চেয়ে কেজিতে মানভেদে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা বেড়েছে। লাল তীর কোম্পানির হাইব্রিড জাতের এক কেজি পেঁয়াজবীজের দাম গত বছর ছিল ২০ হাজার টাকা, এবার ২৫ হাজার টাকা। লাল তীর কিং জাতের এক কেজির প্যাকেট ১১ হাজার টাকা বাড়িয়ে ১৫ হাজার করা হয়েছে। এসিআই কিং ৫ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা হয়েছে। ভুট্টাবীজের দামও বেড়েছে কেজিতে প্রকারভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। আর বিএডিসির সব ধরনের বীজ কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত বছর জাপান থেকে আমদানি করা ফুলকপির বীজ ৫০ হাজার টাকা কেজি বিক্রি হলেও এবার কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। বাঁধাকপি বীজ ২ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২০০ টাকা বেড়েছে। লালশাকের বীজ ৫ হাজার ৫০০ টাকা মণ বিক্রি হলেও গত কয়েক দিনে ৪০০ টাকা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকের শস্য উৎপাদন খরচ অনেক বাড়বে।
এদিকে বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সাধারণ সাম্পাদক মো. ইমরান হোসেন ইমন জানান, দ্রব্যমূল্য যেভাবে বেড়েছে সে হিসাবে বীজের দাম বাড়েনি। সাম্প্রতিক সময়ে পরিবহন খরচের কারণে গ্রামাঞ্চলের কৃষককে একটু বেশি দাম দিয়ে বীজ কিনতে হচ্ছে। গ্রামের বীজ কোম্পানিগুলো ঢাকা থেকে কিনে অল্প অল্প করে বিক্রি করে। ফলে তারা কিছু টাকা বেশি নিতেই পারে।
অন্যদিকে শস্যবীজ প্রসঙ্গে বিএডিসির মহাব্যবস্থাপক (বীজ) প্রদীপ চন্দ্র দে জানান, চুক্তিবদ্ধ কৃষকের কাছ থেকে বেশি দামে বীজ কিনতে হয়েছে। ধান ও গম ৫ থেকে ৭ টাকা বেশিতে কেনা হয়েছে। তারপর প্রসেসিং থেকে শুরু করে প্যাকেজিং পর্যন্ত শ্রমিকের মজুরি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। পাশাপাশি পরিবহন খরচও বেড়েছে। সব ক্ষেত্রেই খরচ বাড়ার কারণে বীজের দাম কিছুটা বাড়াতে বিএডিসি বাধ্য হয়েছে। তবে বর্ধিত দামের বীজ এখনো বাজারে যায়নি। ধানবীজের যে দর নির্ধারণ হয়েছে তাতে সরকার ৫-১০ টাকা প্রণোদনা দিতে পারে। সরকার অধিকাংশ বীজই বিনামূল্যে কৃষককে দিচ্ছে। গম ৬ হাজার টন, বোরো ধান ৫ হাজার টন, সবজিবীজ ৩৫ টন, সরিষার বীজ ১ হাজার টন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে দেয়া হবে।