নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে খাদ্য মজুত ও সংরক্ষণ বাড়াতে সরকার বিপুলসংখ্যক খাদ্য গুদাম নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের ৫৩টি জেলার ১২৮টি উপজেলা এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় সব গুদাম নির্মিত হবে। ওই গুদামগুলো নির্মাণের মাধ্যমে সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে খাদ্য সংরক্ষণ সক্ষমতার লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাবে। ওই লক্ষ্যে খাদ্য অধিদপ্তর জানুয়ারি ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ মেয়াদে দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে নতুন খাদ্য গুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটির মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ৭৯২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ১৯৬ খাদ্যগুদাম নির্মাণের পাশাপাশি ৭২৫টি সিসি ক্যামেরা, গুদামে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের জন্য ডানেজ সংগ্রহ, ৫০টি ময়েশ্চার স্ট্যাবিলাইজার স্থাপন করা হবে। তাছাড়া ১০টি যানবাহনও সংগ্রহ করা হবে। খাদ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। সরকার দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সরবরাহ ও পুষ্টি নিশ্চিতে কাজ করছে। তারই অংশ হিসেবে খাদ্যশস্য ধান, চাল ও গম সংগ্রহ করে সংরক্ষণ এবং পরে প্রয়োজনীয় সময়ে বিতরণ করা হচ্ছে। খাদ্য মজুত ও সংরক্ষণ বাড়াতে গুদাম নির্মাণে দেশের খাদ্য চাহিদা সামলানো সহজ হবে। সারাদেশে খাদ্যশস্য সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়বে। আর গুদাম বাড়লে কৃষকরা সরাসরি সেখানে ধান বিক্রি করতে পারবে। বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য অধিদপ্তরের অধীন ৬টি সাইলো, ১২টি সিএসডি (কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম), ৬৩৫টি এলএসডিতে (আঞ্চলিক খাদ্যগুদাম) খাদ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ওই গুদামসমূহে খাদ্যশস্যের মোট ধারণক্ষমতা ২১ দশমিক ৮০ লাখ মেট্রিক টন। ভবিষ্যতের প্রয়োজন চিন্তা করে সরকার ওই ধারণক্ষমতাকে ৩৭ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। সেজন্য নতুন ১৯৬টি খাদ্যগুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ নানা কারণে সরকার প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে। এর কৃষকদের উৎপাদিত খাদ্যশস্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, নতুন গুদাম নির্মাণের মাধ্যমে সংরক্ষণ ক্ষমতা ৩৭ লাখে উন্নীতকরণ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিভিন্ন চ্যানেলে (ওএমএস, ভিজিডি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি) জনগণের কাছে খাদ্যশস্য যথাসময়ে পৌঁছানো এবং সর্বোপরী টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণের ফলে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণ, কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য করা সম্ভব হবে। তাছাড়া খাদ্যশস্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থাপনাও সহজতর হবে। পাশাপাশি বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প ও জলোচ্ছ্বাসের সময় দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী জনগণের জন্য খাদ্যসহায়তা দেয়া দ্রুত ও সহজতর হবে। তাছাড়া নতুন গুদাম নির্মাণ হলে একদিকে যেমন খাদ্যশস্য সংরক্ষণের ধারণক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে, অন্যদিকে প্রয়োজনে গুদাম ভাড়া দিয়ে সরকারের রাজস্বও বাড়ানো যাবে।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে খাদ্য সংরক্ষণ বাড়াতেই হবে। সংরক্ষণ সক্ষমতা না বাড়লে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বাড়ায় চাহিদাও বাড়ছে। খাদ্যনিরাপত্তার জন্য খাদ্যগুদাম জরুরি। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়সহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। ওই সময়ে সবচেয়ে বেশি মজুত করা খাবারের দরকার পড়ে। খাদ্য ধারণক্ষমতা বাড়াতে পারলে এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। তাছাড়া চলমান করোনা পরিস্থিতিতে গরিব ও নিম্নআয়ের মানুষের ন্যূনতম খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি (এফএফপি) নিয়েছে। ওই কর্মসূচির মাধ্যমে ৫০ লাখ গরিব পরিবারকে প্রতি মাসে ১০ টাকা মূল্যে ৩০ কেজি চাল (পাঁচ মাস) দেয়া হয়েছে। ফলে দুই কোটি মানুষের (প্রতি পরিবারে চার সদস্য হিসাবে) ন্যূনতম খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। আর এমন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে খাদ্য সংরক্ষণ সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণ নিঃসন্দেহ সরকারের ভালো পদক্ষেপ।
অন্যদিকে এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিদর্শন, উন্নয়ন ও কারিগরী সেবা বিভাগ) এফ এম মিজানুর রহমান জানান, খাদ্য মজুত ও সংরক্ষণ বাড়াতেই গুদাম নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এর ফলে খাদ্য চাহিদা সামলানো যাবে। সারাদেশে খাদ্যশস্য সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়বে। গুদাম বাড়লে কৃষকরা ধান সরাসরি সেখানে বিক্রি করতে পারবেন। তাতে সরকারের পাশাপাশি কৃষকরাও লাভবান হবেন।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ