November 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, February 13th, 2023, 9:53 pm

দেশে গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। তাতে বাড়ছে প্রাণহানি ও সম্পদহানির পরিমাণ। প্রতিদিন গড়ে দুটি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। আর তার বেশিরভাগই বাসা-বাড়িতে ঘটছে। মূলত ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশের কারণেই বেশিরভাগ সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। সেক্ষেত্রে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে আরো সতর্ক হওয়া জরুরি। গ্যাসের পাইপলাইনের ছিদ্র থেকেই রাজধানীতে প্রায় ৩০ ভাগই অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটছে। আর বিভিন্ন শহরে যে গ্যাস সরবরাহ লাইন সম্প্রসারিত হয়েছে তার ৭০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। খোদ রাজধানীতে অর্ধশত বছরের পুরনো লাইনও রয়েছে। অথচ গ্যাসের মতো অতি দাহ্য পদার্থের সঞ্চালন, সরবরাহ লাইন সংযোগ শতভাগ টেকসই, নিখুঁত ও ত্রুটিমুক্তভাবে করতে হয়। ফায়ার সার্ভিস এবং বিস্ফোরক পরিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০২১ সালে দেশে ৮৯৪টি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে দুর্ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ দিনে গড়ে দুটির বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনার পর সাধারণত তদন্ত করে বিস্ফোরক পরিদপ্তর। তাতে গতানুগতিক কিছু সুপারিশ থাকে বিশেষ কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্ষতি কমানো যায় কিনা সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা থাকে না। একটি গ্যাস সিলিন্ডার ন্যূনতম ২০ বছর ব্যবহার করার কথা। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী ওই সময়ের মধ্যে কয়েক দফায় রেগুলেটর ও ভালভ পরিবর্তন করতে হয়। ওই দুটি যন্ত্রাংশই মূলত গ্যাস লিকেজ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেশের সিলিন্ডারগুলোয় মানহীন রেগুলেটর ও ভালভ ব্যবহারের ফলে লিকেজ সৃষ্টি হয়। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের দায়িত্ব সিলিন্ডার ও তাতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের মান পরীক্ষার। কিন্তু যথাযথভাবে ওসব গ্যাস সিলিন্ডারের মান পরীক্ষা করা হয় না। আর ওই সুযোগে বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে মানহীন গ্যাস সিলিন্ডার ও তাতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ। সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে ৬০ লাখের বেশি গ্রাহক এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করে। আর গ্রাহকের একটি বড় অংশেরই গ্রামাঞ্চলে বাস। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩০টি কোম্পানির অন্তত দুই কোটি সিলিন্ডার বাজারে রয়েছে। আর গত এক বছরে এলপিজি সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে ৬ লাখের বেশি। এলপিজি ছাড়া অন্যান্য সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে ৩ লাখের বেশি। পাশাপাশি দেশেও সিলিন্ডার নির্মাণের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দেশে নির্মিত সিলিন্ডার বাজারজাত করেছে। কিন্তু ওসব সিলিন্ডারের মান পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত কোনো পরীক্ষা কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের বেশিরভাগ রোগীরই অবস্থা খুবই খারাপ থাকে। সূত্র আরো জানায়, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ নিয়ন্ত্রণে গ্যাস ডিটেক্টর যন্ত্র একটি সমাধান হতে পারে। কিন্তু প্রচারের অভাবে গ্যাস ডিটেক্টর যন্ত্রের কার্যকারীতা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন সময় সতর্কতার নির্দেশনা দেয়া হলেও গ্যাস শনাক্তকারী যন্ত্রের কথা বলা হয় না। আর সাধারণ মানুষের অনেকে জানেই না যে এমন যন্ত্র দেশেই আছে। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের জন্য প্রচার বাবদ অর্থ বরাদ্দ রাখা হলেও গুটিকয়েক লিফলেট ছাপানো ছাড়া আর কিছুই করতে দেখা যায় না। অথচ বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটেই যন্ত্রটি পাওয়া যায়। দাম ১২০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে। রান্নাঘর বা গ্যাসের লাইন রয়েছে এমন স্থানে যন্ত্রটি স্থাপন করা যেতে পারে। লিকেজ হলেই বেজে উঠবে অ্যালার্ম। যাতে বড় দুর্ঘটনার আগেই লোকজন নিরাপদে সরে যেতে পারবে। এটি স্মোক ডিটেক্টরের মতো ছোট একটি ডিভাইস। সর্বক্ষণিক বিদ্যুতের সঙ্গে যুক্ত রাখতে হয়। আবার ব্যাটারিতেও চলে। সাধারণত দুই ধরনের ডিটেক্টর পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটি যন্ত্র বাতাসে গ্যাসের ঘনত্ব মেপে অস্বাভাবিকতা ধরতে পারলেই সংকেত দেয়, আর অন্যটি স্থাপন করা হয় গ্যাসের চুলা ও গ্যাস লাইনের মাঝের ভালভে। লিকেজের সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই ডিটেক্টর স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। তবে মূল পাইপলাইনে লিকেজ হলে তা বন্ধ করতে পারে না ডিটেক্টর। কিন্তু সংকেত দিতে পারে। একেক ধরনের গ্যাস শনাক্ত করতে পারে একেক ধরনের ডিটেক্টর। তবে বাজারে মিথেন শনাক্তকারী যন্ত্রই বেশি পাওয়া যায়। এলপিজি বাতাসের তুলনায় ভারি। তাই সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে যন্ত্রটি সিলিন্ডারের আশপাশে বা মেঝের কাছাকাছি রাখতে হয়। পাইপলাইনের গ্যাস তুলনামূলক হালকা। তাই সেটি লিক হলে ঘরের উপরের দিকে জমা হয়। ওই কারণে পাইপলাইনের ডিটেক্টর থাকবে সিলিংয়ে। এদিকে এ বিষয়ে প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মোহা. নায়েব আলী জানান, যে কোনো বড় ঘটনার তদন্তে আমরা শতভাগ তৎপর। বাসা-বাড়িতে লিকেজ তো ব্যক্তি পর্যায়ে নজরদারি জরুরি। ব্যক্তির নিজের সচেতনতাও এমন বড় দুর্ঘটনা রুখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুর্ঘটনাগুলো মূলত গ্যাসের লিকেজ থেকে ঘটে। সিলিন্ডারের হোস পাইপ, রেগুলেটর, গ্যাস ভালভের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণে গ্যাস লিক হয়। ওই লিকেজ থেকে গ্যাস বেরিয়ে বাইরে কোথাও জমতে থাকে। তাকে সামান্য আগুন, এমনকি স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে জমে থাকা ওই গ্যাস ভয়াবহ বিস্ফোরণের সৃষ্টি করে।