March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, August 7th, 2021, 9:15 pm

দেশে টিকা উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে হবে: জাফরুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

আগামী ৬ মাসের মধ্যে করোনার টিকা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে রাশিয়ার সহায়তা নিয়ে দেশে টিকা উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। আমরা যদি স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদন করি তাহলে রয়্যালটি দিয়েও দাম পড়বে আধা ডলার বলে উল্লেখ করেন তিনি। শনিবার (৭ আগষ্ট) দুপুরে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের বীর উত্তম মেজর হায়দার মিলনায়তনে করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে এক ওয়েবিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন। ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ভ্যাকসিন তৈরি নিউক্লিয়াস সাইন্সের বিষয় নয়। আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে কিন্তু বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। আজকে কিউবা ও ইরান নিজেরা নিজেদের ভ্যাকসিন তৈরি করে। তাদের সাহায্য করেছে রাশিয়া। তিনি বলেন, আমি দেড় বছর আগে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, অন্যের স্তুতিতে না নেচে এদেশের সব নাগরিককে দলমত নির্বিশেষে ব্যবহারের চেষ্টা করেন। ট্রিপসের আইনানুসারে কোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্র যদি জনস্বার্থে কোনো টেকনোলজি চায় সে কোম্পানি তা দিতে বাধ্য। এর বিনিময়ে তারা একটি রয়্যালটি পাবেন। ডা. জাফরুল্লাহ আরও বলেন, আমাদের ভ্যাকসিন উৎপাদন করার প্রয়োজন রয়েছে। আগেও বলেছি প্রফেসর ডা. আজাদ চৌধুরী, ডা. নজরুল ইসলামের মতো আরো যে দুই-চারজন মানুষ রয়েছেন, তাদের নিয়ে দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বক্তৃতা না দিয়ে প্রকৃত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী যদি এ কাজটা করেন তাহলে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি বলেন, আকাশ-কুসুম চিন্তা না করে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত আগামী ৬ মাসের মধ্যে আমরা নিজস্ব ভ্যাকসিন তৈরি করবো। এ ক্ষেত্রে চীন বা রাশিয়ার সহায়তায় কিউবা ও ইরানের মতো আমাদেরও উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, ভ্যাকসিনের দাম চীনেরটা ১০ ডলার, মডার্না ও ফাইজারের দাম ২০ থেকে ৫০ ডলার পর্যন্ত। সে কারণে নতুন গবেষণায় বলা হচ্ছে, আমরা যে টিকা দেই সেটা শূন্য দশমিক ৫ এমএলের পরিবর্তে যদি শূন্য দশমিক ১ এমএল বা বর্তমানে যতটুকু দেই তার ৫ শতাংশের ১ শংতাংশ দিয়েও সমপরিমাণ লাভ হতে পারে। এটা যদি হয়, তাহলে ১০ ডলারের ভ্যাকসিন ২ ডলারে চলে আসবে। আর আমরা যদি ভ্যাকসিন উৎপাদন করি তাহলে রয়্যালটি দিয়েও দাম পড়বে আধা ডলার। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারকে টিকা নিয়ে জনগণকে ‘ধাপ্পাবাজি’ না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন আপনারা বক্তৃতা দিতে থাকেন কোনো সপ্তাহে এক কোটি, কোনো সপ্তাহে ৭ কোটি টিকা দেবেন। এ বিষয়ে জণগণের আওয়াজ তোলা দরকার। এই ধাপ্পাবাজি আর কতদিন? ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, টিকা নিয়ে অনুগ্রহ করে জনগণকে ধাপ্পাবাজি দেবেন না। এই যে ৩২ লাখ টিকা ৬ দিনে দেবেন তার মানেটা কী? অর্থাৎ একটি ইউনিয়নে ৬৪০ জন পাবে। একটি ইউনিয়নে জনসংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার। যখন প্রতিদিন একটি ইউনিয়নে ১০০ জনকে টিকা দেবেন বাকিদের কী হবে? আপনারা নিজেরাই বলেছেন, দেশে ২৬ কোটি টিকা দরকার। সে জায়গায় প্রতিদিন আপনারা বক্তৃতা দিতে থাকেন কোনো সপ্তাহে এক কোটি, কোনো সপ্তাহে ৭ কোটি। এটা না করে অন্তত কিছু তথ্য দেন। সম্প্রতি বলেছেন সাড়ে ৭ কোটি টিকা চীন থেকে কিনবেন। এজন্য দেড় কোটি টিকা কিনতে অগ্রিম টাকা দিয়েছেন কত করে দিয়েছেন সেটা কী জানার আমাদের অধিকার নেই? তিনি বলেন, মস্কো থেকে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রস্তাব দিয়েছিলো স্পুটনিক ভি টিকা সাড়ে ৭ ডলার করে দেবে। এখন যতটুকু জানি চীনেরটা কিনছি আমরা ১০ ডলার করে। আজকে তিন মাস হয়েছে সরকার সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। কম টাকায় বা দাম কম হলে কেন তাদের মন খারাপ হয়। কারণ এখানে লেনদেন কম হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম আপনি তাদের সঙ্গে বসেন তাহলে দর আরো কমে যাবে। হয় ৭ ডলারেও যেতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে হবে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সপ্তাহে মাত্র ৩২ লাখ বাকিদের কী হবে? এখনও আমরা স্কুল, কলেজ, দোকানপাট খুলছি না। এজন্য আমাদের তিনটা জিনিস মানতে হবে, এক নিজের মঙ্গলের জন্য মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত টিকা পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং সব জণগণ, ছাত্র, শ্রমিক, গর্ভবতীকে টিকার আওতায় আনতে হলে আমাদের কোটি কোটি টিকা কিনতে হবে। সেটা আগামী বছর না এখন থেকে সরকারকে বলতে হবে প্রতি সপ্তাহে কোনো দেশে কত করে টিকা পাঠাবে, তার থেকেও বড় কথা নিজেদেরকে টিকা বানাতে হবে। নিজেদেরকে স্বাবলম্বী হতে হবে অন্যের দয়ার ওপর বেঁচে থাকা যাবে না। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গণবি) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. লায়লা পারভীন বানুর সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম, বিএসএমএমইউ ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা অংশ নেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন প্রফেসর ড. বিজন কুমার শীল।