April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, September 4th, 2022, 9:50 pm

দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে পেট্রোবাংলা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা। সংস্থাটি আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খননের মাধ্যমে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৬২ কোটি ঘনফুট বাড়াতে চায়। তার মধ্যে ১৭টি অনুসন্ধান, ১২টি উন্নয়ন এবং ১৭টি ওয়ার্কওভার (সংস্কার) কূপ খনন করা হবে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ চালানোর উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও শক্তিশালী খনন যন্ত্রসহ (রিগ) আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি না থাকায় পেট্রোবাংলা আশানুরূপভাবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান সক্ষমতা দেখাতে পারছে না। জ¦ালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাজারে জ¦ালানির মূল্যবৃদ্ধি ও দেশের ভেতরে নিজস্ব গ্যাস সরবরাহে ঘাটতির ফলে দেশীয় খনিজসম্পদ অনুসন্ধানে জোর দেয়া হচ্ছে। সেজন্যই স্থলভাগে গ্যাসের খোঁজ ও উত্তোলনে বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন সময়ের জরিপের তথ্যই বলে দিচ্ছে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম গ্যাসপ্রবণ এলাকা। দেশে তিনটি কূপ খুঁড়লেই একটিতে গ্যাস পাওয়া যায়। যেখানে বিশ্বের অন্য অঞ্চলে ওই হার ৫:১। তারপরও দেশে পর্যাপ্ত অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো হয়নি। বাংলাদেশে গত ১১২ বছরে মাত্র ৯৬টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে। আর স্বাধীনতার পর ৫২ বছরে খনন করা হয়েছে ৪১টি। মূলত সুরমা বেসিনের বৃহত্তর সিলেট, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী অঞ্চলেই গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছে। ওই তুলনায় বেঙ্গল বেসিনে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান তেমন হয়নি। অথচ ওই বেসিনের বরিশাল, ফরিদপুর, ভোলাসহ আশপাশের দ্বীপাঞ্চল, মেঘনা নদীবক্ষ প্রভৃতি এলাকা তেল-গ্যাসের অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।
সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে ২১টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে দিনে ২৩২ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। দেশীয় ৩টি কোম্পানির ১৭টি ক্ষেত্র থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৮৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস। আর বিদেশি দুই কোম্পানি শেভরন ও তাল্লোর মালিকানাধীন ৪টি ক্ষেত্র থেকে মিলছে ১৪৯ কোটি ঘনফুট গ্যাস। তার বাইরে আমদানি করা এলএনজি থেকে ৫৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। চলতি বছরের মধ্যে বাপেক্সের গ্যাসক্ষেত্রে ৫টি আর সিলেট গ্যাসফিল্ডস কোম্পানির (এসজিএফএল) ফিল্ডে একটি কূপ খনন করা হবে। তাতে বছর শেষে দিনে ৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী বছর বাপেক্সের ৫টি, এসজিএফএলের ৬টি এবং বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ডস কোম্পানির (বিজিএফসিএল) ৪টি কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে। পেট্রোবাংলা ওই ১৫ কূপে দৈনিক ২১.৭ কোটি ঘনফুট উৎপাদন বাড়ার আশা করছে। ২০২৪ সালে বাপেক্স ৬টি, বিজিএফসিএল ৪টি এবং এসজিএফএল ৪টি কূপ খনন করতে পারে। তাতে ওই বছর দিনে ১৭.৬ কোটি ঘনফুট উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর ২০২৫ সালে বাপেক্স ৪টি, বিজিএফসিএল ৪টি এবং সিলেট গ্যাস ৩টি কূপ খনন করবে। তাতে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ১৬.৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়তে পারে। তার বাইরে বিদেশি কোম্পানি শেভরন বিবিয়ানার অনাবিস্কৃত অংশে একটি অনুসন্ধানী কূপ চলতি বছরের শেষে খনন করতে পারে। ফল ইতিবাচক হলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানিটি সেখানে ৩টি উন্নয়ন কূপ খনন করবে। বিবিয়ানা দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র। সেখানে ২৬টি কূপ থেকে দিনে ১২৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস তোলা হয়। তাছাড়া ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসির আগামী বছর অগভীর সমুদ্রের ৪ ও ৯ নম্বর ব্লকে দুটো অনুসন্ধান কূপ খনন করার কথা রয়েছে। সিলেট গ্যাসক্ষেত্রের ১০ নম্বর কূপ চীনের কোম্পানি সিনোপ্যাকের খোঁড়ার কথা রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, পরিকল্পনা অনুসারে ভোলায় বাপেক্সের গ্যাসক্ষেত্রে টগবি-১ নামে একটি অনুসন্ধান কূপ খনন শুরু করেছে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রম। তাছাড়া বাপেক্সের শ্রিকাইল গ্যাসক্ষেত্রে উত্তর-পূর্ব-১ কূপ খননের প্রস্তুতি চলছে। বিজয়-১২ রিগ দিয়ে ওই অনুসন্ধান কূপটি খোঁড়া হবে। বর্তমানে বিজয়-১৮ রিগ দিয়ে বাপেক্সের সেমুতাং ৫ কূপের ওয়ার্কওভার চলছে। সেটি শেষ হলে একই রিগ সেমুতাং-৬ কূপে ওয়ার্কওভার শুরু করবে। ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে বিজয়-১০ রিগটি এ বছর শরীয়তপুরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে শরীয়তপুর-১ নামে একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হবে। তাছাড়া সেপ্টেম্বরে বিজয়-১১ রিগ দিয়ে বিয়ানীবাজারে ওয়ার্কওভারের কাজ শুরু হবে। পেট্রোবাংলা গত এক বছরে একটি অনুসন্ধান এবং একটি উন্নয়ন ও ৫ ওয়ার্কওভার কূপের মাধ্যমে ৩-৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়েছে। তার মধ্যে সিলেট ৯ নম্বর কূপে নতুন গ্যাস মিলেছে। সেখান থেকে ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মিলছে। ফেঞ্চুগঞ্জ ৩ ও ৪ নম্বর কূপে ওয়ার্কওভারে ১.৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে। কৈলাসটিলা ৭ নম্বর কূপ থেকে এক কোটি ঘনফুট গ্যাস তোলা হচ্ছে। শ্রিকাইল ৪ নম্বর কূপ থেকে দুই কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কার, বিদ্যমান ক্ষেত্রের মজুত ও নতুন স্তরে গ্যাস অনুসন্ধানে দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ কার্যক্রম চালাচ্ছে বাপেক্স। বর্তমানে ব্লক ১৫ ও ২২-এর আওতায় ফেনী ও চট্টগ্রামে টুডি সাইসমিক সার্ভের কাজ চলছে। নভেম্বরে ব্লক ৬বি ও ১০ এর আওতায় বরিশাল-চাঁদপুর অঞ্চলে গ্যাসের খোঁজে টুডি ভূকম্পন জরিপ চলবে। সিলেটের জকিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের পাথারিয়ায় এ বছর ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ কার্যক্রম চালাবে বাপেক্স।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী জানান, দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রে নতুন কূপ খনন এবং ওয়ার্কওভারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বছর অনুসারে পরিকল্পনা করা হয়েছে। ওই অনুসারে সারাবছর কাজ হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জানান, দেশের গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করা যায় খুব কম সময়ে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। তাতে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতা কমবে। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।