নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে আর থাকবে না ম্যানুয়াল ইঞ্জিনচালিত যানবাহন। তার পরিবর্তে পরিবেশ দূষণ রোধে দেশে ম্যানুয়াল ইঞ্জিনবিহীন বিদ্যুতচালিত মোটারযান (ই-ভেহিক্যাল) চালু করা হচ্ছে। বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে ঢাকার বাতাসে কার্বন ডাই অক্সসাইড বেড়ে পরিবেশ বিপর্যয় মারাত্মক পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। যার ক্ষতিকর বিরূপ প্রভাব পড়ছে মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে জ্বালানি সাশ্রয়ী বিদ্যুতচালিত মোটরযান চালুর সরকারি পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটিকে (বিআরটিএ) মোটরযানের মতো ইলেকট্রিক মোটরযানের অনুমোদন, ফিটনেস, রুট পারমিট, রেজিস্ট্রেশন, লাইফ, সড়ক অপরাধের শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো ইঞ্জিনচালিত মোটরযান রাস্তায় বের করা যাবে না। এমনকি কোন অবস্থায় পুরাতন ইলেকট্রিক মোটরযানও আমদানি করা যাবে না। আর ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর বিদ্যমান ইঞ্জিনচালিত মোটরযান ব্যবহার করা যাবে না। ওই লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সম্প্রতি ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত খসড়া নীতিমাল ২০২২ প্রণয়ন করেছে।
সূত্র জানায়, খসড়া নীতিমালা অনুসারে বাণিজ্যিকভাবে চলাচলের জন্য রেজিস্ট্রেশন করা ইলেকট্রিক মোটরযান লাইফ পাবে ১২ বছর, থ্রিহুইলার পাবে ১০ বছর, হাল্কা, মাধ্যম ও ভারি মোটরযান পাবে ২০ বছর। তবে সেক্ষেত্রে এখনো অনেক কাজ বাকি। কারণ চাইলেই রাতারাতি পুরাতন গাড়ি অপসারণ করা যাবে না। নীতিমালায় বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মূল কারণ হচ্ছে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। আর কার্বন ডাই অক্সাইডের অন্যতম উৎস হচ্ছে ইঞ্জিনচালিত মোটরযান। ইঞ্জিনচালিত মোটরযান দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারও বাড়ছে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্বময় ইঞ্জিনবিহীন ইলেকট্রিক যানবাহন ব্যবহারে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। ইলেকট্রিক মোটরযানে জ্বালানি ব্যবহার হয় না। ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণেরও সুযোগ নেই। তাছাড়া ইলেকট্রিক যানবাহনে শব্দ দূষণের বালাই নেই এবং পরিবেশবান্ধব। চলতি বছর শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রণীত অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালায় দেশে উৎপাদিত যানবাহনের মধ্যে ইলেকট্রিক মোটরযান বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ওই নীতিমালায় প্রয়োজনে ইলেকট্রিক মোটরযানে রূপান্তরের কথাও বলা হয়েছে। তাছাড়া সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে পরিবহন খাত থেকে ৩.৪ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ শর্তহীনভাবে হ্রাস করার অঙ্গীকার করেছে। ওই ক্ষেত্রে সরকার ইলেকট্রিক যানবাহন চালু করলে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে সহায়ক হবে।
সূত্র জানায়, ইলেকট্রিক মোটরযানের বৈশিষ্ট্যের বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, যানবাহনের বডি বা ফ্রেমে ইন্টারন্যাশনাল ভেহিক্যাল আইডেটিফিকেশন নম্বর (আইভিআইএন) অনুযায়ী তৈরি ও নির্ধারিত ডিজিটের চেসিস নম্বর থাকতে হবে। ইলেকট্রিক মোটরযানের চার্জিং সিস্টেম বাংলাদেশে প্রচলিত বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। ইলেকট্রিক মোটরযানের ব্রেকিং, স্টিয়ারিং, লাইটিং, সাসপেনশন সিস্টেম ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের মতো হবে। যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ধারণ ক্ষমতা, খালি ও ভরা অবস্থায় গতিসীমা ইলেকট্রিক মোটরযান আইনে থাকবে। মোটরযানের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতাসহ যাবতীয় বিদ্যমান আইনে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আর রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতির বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রচলিত রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিতে ইলেকট্রিক যানবাহন ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হবে। প্রস্তুত, আমদানি ও সংযোজন সব ক্ষেত্রেই মডেলভিত্তিক টাইপ বিআরটিএ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। বিআরটিএ’র রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোন ডিলার, এজেন্ট, আমদানিকারক ও প্রস্তুতকারকরা কোন ইলেকট্রিক খিথ্র হুইলার বা মোটরসাইকেল ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করতে পারবে না। বিক্রেতারা এখন ইঞ্জিনচালিত মোটরযান বিআরটিএ’এর রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই ক্রেতার হাতে তুলে দিচ্ছেন। ইলেকট্রিক মোটরযানের ক্ষেত্রে সিলিন্ডার সংখ্যা, কিউবিক ক্যাপাসিটি, অশ্বশক্তি, ইঞ্জিন নম্বর, জ্বালানির পরিবর্তে ব্যাটারির সংখ্যা, মোটরের ক্ষমতা, ব্যাটারির ক্যাপাসিটি, মোটরের নম্বর এবং ইলেকট্রিসিটি প্রযোজ্য হবে।
এদিকে নীতিমালা প্রণয়ন বিষয়ে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, নীতিমালা প্রণয়ন হচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া অংশীজনদের মতামত নেয়া হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত রিক্সা কোন অবস্থাতেই ইলেকট্রিক যানবাহন হতে পারে না। বিআরটিএ’র টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশে কোনটি যানবাহন আর কোনটি যানবাহন নয় তা নির্ধারণ করা হয়। ব্যাটারিচালিত হোক আর ইঞ্জিনচালিত হোক রিক্সা ঝুঁকিপূর্ণ। তাতে নিরাপত্তা নেই। ব্যাটারিচালিত রিক্সা কখনোই ইলেকট্রিক যানবাহন হবে না।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ