November 24, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, March 13th, 2023, 9:16 pm

দেশে ধান-চালের উৎপাদন বাড়লেও সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ সরকার

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে ধান-চালের উৎপাদন বাড়লেও সংগ্রহে ব্যর্থ সরকার। ফলে সরকারি শস্যভা-ারে ধান-চালের মজুদ কমতে শুরু করেছে। চলতি আমন মৌসুমে সরকারিভাবে ৮ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও বর্ধিত সময় শেষে মাত্র ৪ লাখ ৩৪ টন সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ ধান আর ৮৬ শতাংশ চাল সংগ্রহ হয়েছে। ফলে সরকারি মজুদেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সরকারিভাবে ৩ লাখ টন ধান ৫ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রায় ধানের প্রতি কেজির ক্রয়মূল্য ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয় আর চালের ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি কেজি ৪২ টাকা। গত ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহের নির্ধারিত সময়সীমা ছিল। ওই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ৭ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু বর্ধিত সময় শেষে চাল সংগ্রহ হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার ৮১ টন আর ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৬৯৪ টন। মূলত শুরু থেকেই বাজারমূল্যের চেয়ে সরকারি দর কম হওয়ায় স্থানীয় বাজারেই ধান বিক্রি করে কৃষকরা। কৃষক এবং খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এ বছর আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৭ লাখ টন বেশি চাল উৎপাদন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর বোনা ও রোপা আমন মিলিয়ে মোট ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৭০ লাখ ২৯ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে। যদিও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৫ হাজার টন। গড় ফলন হয়েছে প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৮৮ টন। আর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এক গবেষণায় বলা হয়, দেশে বছরে চাহিদার চেয়ে প্রায় ৪২ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকে। কিন্তু সরকারের সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সরকারের ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থতা, পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করা এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতেই সরকারকে চাল আমদানি করতে হয়। সূত্র জানায়, সরকারিভাবে বিগত বোরো মৌসুমেও ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তখন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৬ লাখ ৫০ হাজার টন নির্ধারণ করা হলেও তার ৫৯ ভাগই পূরণ হয়নি। তবে চালের ১১ লাখ টন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছিল। ব্রির প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী বিগত ২০১৮ সালেই শুধু সরকার শতভাগ ধান-চাল সংগ্রহ করতে পেরেছিল। তাছাড়া ২০১৯ সালে ২১ শতাংশ, ২০২০ সালে ৩৩ ও ২০২১ সালে ৫৪ শতাংশ ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। তাছাড়া চলতি মৌসুমে চাল সংগ্রহের জন্য ৭ হাজার ১০১টি মিলকে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৭০ টনের বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে মিলগুলো থেকেও বরাদ্দের সমপরিমাণ চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক মূল্য পর্যালোচনাসংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত নভেম্বরের পর এই প্রথম দেশে চালের সরকারি মজুদ কমছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারির চেয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাংশ মজুদ কমেছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি মজুদ কমে প্রায় ১৫ লাখ ৩৭ হাজার টনে দাঁড়ায়। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বর্তমানে চালের সরকারি মজুদ রয়েছে ১৫ লাখ ২৭ হাজার ৪২৪ টন। যদিও গত বছরের মার্চে চালের মজুদ ১৮ লাখ টনের কাছাকাছি ছিল। অন্যদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সরকারের ওএমএস কার্যক্রমের ব্যাপ্তি বাড়ানো এবং খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি পরিচালনা করায় মজুদ কিছুটা কমছে। তবে উৎপাদন ভালো হওয়ায় আপাতত আমদানির প্রয়োজন হবে না। এ প্রসঙ্গে খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হয়েছে। কিছু মিল চুক্তি করেনি। আবার কিছু মিল চুক্তি করেও বরাদ্দকৃত চালের সমপরিমাণ জমা দেয়নি। তাদের বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।