April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, March 12th, 2023, 9:54 pm

দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ায় কমে আসছে আমদানি নির্ভরতা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে পেঁয়াজের আশানুরূপ উৎপাদন বাড়ায় আমদানি নির্ভরতা কমে আসছে। আমদানি নির্ভরতার কারণে দেশের কৃষিপণ্যগুলোর মধ্যে পেঁয়াজের বাজারেই সবচেয়ে বেশি অস্থিতিশীলতা দেখা যায়। মূলত স্থানীয় উৎপাদন চাহিদা পূরণে অপর্যাপ্ত হওয়ায় নিয়মিতভাবেই প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে বছরে ৮-১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। ফলে ভারতে অনাবৃষ্টি-অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দেশটির সরকারের পেঁয়াজ বাণিজ্য-সংক্রান্ত নীতিগত সিদ্ধান্ত এদেশে পণ্যটির মূল্যে বড় প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি সুযোগসন্ধানীরাপও বাজারে পণ্যটির কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে সুযোগ নেয়। বিগত ২০১৯ সালে ভারত সরকারের পেঁয়াজ রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধের সিদ্ধান্তে এদেশে পেঁয়াজের মূল্য রেকর্ড সর্বোচ্চে ওঠেছিল। পরের বছরও একই ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। সেজন্য আবাদ সম্প্রসারণে নানামুখী পদক্ষেপের পাশাপাশি ভর্তুকি-প্রণোদনা ছাড়াও কৃষকের মধ্যে সহজ শর্তে ঋণ বিতরণ করা হয়। ইতোমধ্যে মিলতে শুরু করেছে সরকারের ওসব পদক্ষেপের সুফল। কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত তিন বছরে দেশে ৪০ শতাংশেরও বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন বেড়েছে। দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৫ লাখ টন। বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে পণ্যটি উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ ৪১ হাজার টন। একই সঙ্গে বেড়েছে পণ্যটির আবাদি জমির পরিমাণ ও উৎপাদনশীলতা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে ২ লাখ ১২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে তার পরিমাণ ২ লাখ ৫৯ হাজার হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। আর এ সময়ের মধ্যে কৃষিপণ্যটির উৎপাদনশীলতা হেক্টরপ্রতি ১১ টন থেকে বেড়ে ১৪ টনে দাঁড়িয়েছে। সূত্র জানায়, স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত উৎপাদন হওয়ায় বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিতিশীলতার ছাপ দেশে প্রভাব ফেলছে না। বর্তমানে কোনো কোনো দেশে পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও এদেশের তা কমছে। দেশের বাজারে বর্তমানে দেশী পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২৫-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক মাস আগেও দেশী পেঁয়াজ ৩০-৪০ ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত বছরের এ সময়ে পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫-৫৫ টাকা। অথচ কয়েক বছর ধরেই নির্দিষ্ট কিছু সময়ে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে অস্থিতিশীল হয়ে উঠতো। কিন্তু বর্তমানে দেশে ধারাবাহিকভাবে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াছে। উৎপাদনকারী জেলাগুলো থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ আসছে। ফলে অনেকটাই কমেছে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কৃষকরা দেশীয় পেঁয়াজে ভালো দাম পাচ্ছে। তবে উৎপাদনের ভরা মৌসুমে চাহিদার তুলনায় বাড়তি সরবরাহের কারণে এখন দেশী পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম। আসন্ন রমজান মাস ও কোরবানির ঈদেও দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ সংকটের সম্ভাবনা অনেক কম। সূত্র আরো জানায়, গুণগত মানের বিচারে দেশী পেঁয়াজ আমদানিকৃত পেঁয়াচের চেয়ে অনেক ভালো। তবে দেশীয় পেঁয়াজের বেশকিছু জাত দীর্ঘসময় সংরক্ষণ করা যায় না। যে কারণে দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদন সত্ত্বেও কিছু আমদানি করতে হয়। তবে উৎপাদনের এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে পেঁয়াজের সংকট বা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হবে না। হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ভারত থেকে আমদানীকৃত পেঁয়াজের বড় একটি অংশ আসে। দুই-তিন বছর আগেও সেখান দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০টি পেঁয়াজবাহী ট্রাক প্রবেশ করতো। এখন তা মাত্র ৮-১০টিতে নেমে এসেছে। এদিকে দেশে পাবনা জেলায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুমে সেখানে মোট ৫৩ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সর্বশেষ মৌসুমে আবাদকৃত কন্দ বা মূলকাটা পেঁয়াজের ৯০ শতাংশের কর্তন শেষ হয়েছে। জেলায় ৮ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৩৫৫ টন। ভারত থেকে আমদানি কমায় কৃষকরা এবার তুলনামূলক ভালো দাম পাচ্ছে। পেঁয়াজ উৎপাদনে এগিয়ে থাকা জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম রাজবাড়ী। এ বছর ওই জেলাটিতে মোট ৩৪ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। তাছাড়া দেশী পেঁয়াজের সংরক্ষণযোগ্যতা আমদানীকৃত পেঁয়াজের চেয়ে বেশি। আমদানি হওয়া পেঁয়াজের সংরক্ষণযোগ্যতা নেই বললেই চলে। দেশে উৎপাদিত প্রায় ৬০ শতাংশ পেঁয়াজের সংরক্ষণযোগ্যতা অনেক ভালো। এগুলোর ফলন সবসময় একই থাকে। বাকি পেঁয়াজ হলো গ্রীষ্মকালীন ও মুড়িকাটা পেঁয়াজ। অন্যদিকে সার্বিক বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার জানান, পেঁয়াজের আমদানি নির্ভরতা বেশি থাকায় একসময় বাজারে অস্থিতিশীলতা থাকতো। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও দেশের বাজারে তার প্রভাব একেবারেই নেই। কৃষকরাও সবসময় অনুরোধ করে আসছে যেন আমদানি না করা হয়। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন মৌসুমে যে ঘাটতি দেখা দিত, তা এখন হচ্ছে না। কৃষকরা এখন অনেক বেশি উৎপাদন করছেন। আশা করা যায় ভবিষ্যতে কখনই পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হবে না। এজন্য তাদের বিভিন্ন প্রণোদনাও দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া উৎপাদন ও সংরক্ষণে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়। আবার পেঁয়াজ সংরক্ষণ করলে শুকিয়ে এর ওজন কমে যায়। এ ব্যাপারে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকদের সংরক্ষণের উপায়গুলো নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।