নিজস্ব প্রতিবেদক :
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার নানা চিত্র গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তবে পরিস্থিতি আসলে কতটা নাজুক, তার চিত্র আরও ভালোভাবে উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি জরিপ প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, দেশের সরকারি হাসপাতালে প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য শয্যা সংখ্যা প্রায় ০.৩২টি। বেসরকারি হাসপাতালে প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য শয্যা সংখ্যা প্রায় ০.৬৪টি। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা মাত্র ০.৯৬টি। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ অনুযায়ী প্রতি ১ হাজার মানুষের বিপরীতে সাড়ে তিনটি শয্যা থাকতে হবে। সেই হিসেবে, আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় শয্যা সংখ্যা অনেক কম। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর বিবিএস ভবনে প্রকাশিত ‘বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান জরিপ ২০১৯’-এ এমন চিত্র উঠে এসেছে। জরিপটির প্রকল্প পরিচালক ছিলেন আবদুল খালেক। সাংবাদিকদের সামনে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন। জরিপ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রতি একজন চিকিৎসকের (ডেন্টাল সার্জন বাদে) বিপরীতে মাত্র ০.৮৫ জন সেবিকা রয়েছে। ডেন্টাল সার্জনদের অন্তর্ভুক্ত করলে প্রতি একজন চিকিৎসকের বিপরীতে সেবিকার সংখ্যা দাঁড়ায় ০.৮৩ জন। প্রতি ৩.৪৭টি শয্যার জন্য একজন সেবিকা দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। দেশজ মোট উৎপাদন প্রাক্কলনে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর হালনাগাদ ও নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ২১ মে থেকে ২০২১ সালের ১৩ মে পর্যন্ত এ-সংক্রান্ত একটি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে বলেও জরিপে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বেসরকারি খাতে নিবন্ধিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জরিপের তথ্য বলছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে বাংলাদেশে মোট ১৬ হাজার ৯৭৯টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ছিল। তার মধ্যে রোগ নির্ণয় কেন্দ্র ১০ হাজার ২৯১টি (৬০.৬১ শতাংশ), হাসপাতাল ৪ হাজার ৪৫২টি (২৬.২২ শতাংশ) এবং মেডিকেল ক্লিনিক ১ হাজার ৩৯৭টি (৮.২৩ শতাংশ)। অন্যদিকে ডেন্টাল ক্লিনিকের সংখ্যা ৮৩৯টি (৪.৯৯ শতাংশ)। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের আকার তুলে ধরে জরিপে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ৩০ জুনে ১৬ হাজার ৯৭৯টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে মোট ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮০ জন কর্মী নিয়োজিত ছিলেন। তার মধ্যে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৯৪১ জন (৮৫.৭২ শতাংশ) পূর্ণকালীন এবং ৫২ হাজার ৬৩৯ জন (১৪.২৮ শতাংশ) খ-কালীন। মোট নিয়োজিত জনবলের মধ্যে হাসপাতালে ৫৬ দশমিক ৩২ শতাংশ, রোগনির্ণয় কেন্দ্রে ৩৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং ক্লিনিকে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ জনবল নিয়োজিত ছিলেন। ডেন্টাল ক্লিনিকে নিয়োজিত জনবল ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেসরকারি হাসপাতালের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ, মেডিকেল ক্লিনিকগুলোয় কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ, রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং ডেন্টাল ক্লিনিকগুলোয় ০.৮২ শতাংশ। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান সৃষ্টির তথ্য তুলে ধরে জরিপে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের জুনে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় মোট ২ লাখ ৮৯ হাজার ১২৬ জন কাজ করতেন, বিপরীতে ২০১৮ সালের জুনে সেখানে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৯৪১ জন কাজ করতেন। পূর্ণকালীন কর্মসংস্থানের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় এককভাবে ৭৭.৩৩ শতাংশ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তারপর যথাক্রমে রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে ১৯.৮৫ শতাংশ এবং ক্লিনিকগুলোয় ৩.৭০ শতাংশ কর্মসংস্থার তৈরি হয়েছে। নতুন পূর্ণকালীন কর্মসংস্থানের মধ্যে ডেন্টাল ক্লিনিকের আওতায় কর্মসংস্থানের প্রাক্কলিত হিসাব ছিল ০.১২ শতাংশ। মোট পূর্ণকালীন নতুন কর্মসংস্থানের মধ্যে চিকিৎসকের ৪ হাজার ৫৯০টি, সেবিকার ৪ হাজার ৭২১টি এবং ডেন্টাল সার্জনের ৪৯টি পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বলেও জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম