May 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, March 18th, 2024, 9:10 pm

দেশে ফিরতে মুখিয়ে আছেন সানজিদা

অনলাইন ডেস্ক :

ইমামি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের জার্সি গায়ে ভারতের নারী ফুটবল লিগে খেলতে গেছেন সানজিদা আক্তার। দুই মাসও হয়নি, এরই মধ্যে তার মন ছুটে গেছে কবে দেশে ফিরবেন। দেশে ফেরার জন্য মন কাঁদছে সানজিদার। আরও দুই ম্যাচ বাকি আছে। খেলা শেষ হলেই ঘরে ফিরবেন কলকাতায় বসে জানিয়েছেন সানজিদা। কলকাতা শহর থেকে দুই ঘণ্টার পথ, শহরের বাইরে। রিসোর্টে অবস্থান করছে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের নারী ফুটবলাররা। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে রিসোর্টে গড়েছেন। সেখানে সুইমিংপুল থেকে শুরু করে আধুনিক সুবিধা রয়েছে। শুধু খাবারটা আসে অন্য জায়গা হতে। নীরব নির্জন স্থান।

সকালে অনুশীলন করে বাকি সময় রুমেই থাকতে হয়। বিভিন্ন স্টেটে খেলা হয়। দুই দিন আগে ভেন্যুতে চলে যেতে হয়। কোনো কারণে ক্যাম্প থেকে কলকাতায় আসতে হলে কোচ দিপঙ্কর কিংবা ম্যানেজার ইন্দ্রানী সরকারের সঙ্গে আসতে হয়। নিরাপত্তার কারণে কোচ কিংবা ম্যানেজার সানজিদাকে সঙ্গে করে দিয়ে যান, নিয়ে যান। ‘দিপঙ্কর আংকেল আমাকে ক্লাব পর্যন্ত দিয়ে গেছে-বললেন সানজিদা। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের গেটে অপেক্ষমাণ হলুদ ট্যাক্সি ড্রাইভারের সঙ্গে কথা ছিল ভিক্টোরিয়ার মেমোরিয়ালে যাবেন সানজিদা। মাঝ পথে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন। ট্যাক্সি ছুটল গড়িয়ারহাট। আবারও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন। আবারও ট্যাক্সি ঘোরানো হলো। ‘সকালে প্র্যাকটিস করেছি। খিদে লেগেছে।

আগে খাবো, বললেন সানজিদা। ট্যাক্সি ঘুরিয়ে সেভেন পয়েন্টের সামনে মুসলিম দোকান। বিরিয়ানি পাওয়া যায়। গরুর মাংস না পেয়ে মাটন বিরিয়ানি খেয়ে এবার অন্য ট্যাক্সিতে গড়িয়ারহাট। ট্যাক্সিতে বসে বাংলাদেশের নারী ফুটবলের পোস্টারগার্ল সানজিদার কণ্ঠে ফুটবল দেশে ফেরার আকুলতা। জাতীয় দলের হয়ে দেশের বাইরে জাপান, কোরিয়া, চীন, নেপাল সহ অনেক দেশে খেলতে গিয়েছেন সানজিদা। কিন্তু দুই তিন মাস থাকতে হয়নি। এবারই প্রথম একটানা প্রায় তিন মাস দেশের বাইরে। সানজিদা বললে, ‘বাফুফে ভবনের ক্যাম্পে থেকেছি, সেখানে আমার একটা পরিবারের মতো। দেশের ভেতরে ছিলাম। কিন্তু এটাতো ভারত। অন্য একটা দেশ। একা একা লাগে। ‘ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অধিনায়ক তৃষা, সুস্মিতা, সানজিদা, এক রুমে থাকেন।

অলস সময়ে নানা দুষ্টুমি আর দুই দেশের গল্পের আদান প্রদান নিয়ে সময় কাটে। নাচ শিখেছেন সানজিদা। বললেন, ‘নাচতে পারি। তারপরও ভালো লাগে না। দেশে ফিরতে মন চায়। ভালো লাগত যদি টিম রেজাল্ট পেতো। শুধু হারছি। একবার আমি গোলের বল বানিয়ে দিলাম। ওয়ান টাচেই গোল হবে। সেই বলটা রিসিভ করেছে, ধরে কন্ট্রোলে নিয়েছে। তারপর শট করতে গিয়ে আর পারেনি।’ গড়িয়ারহাট থেকে ফেরার পথে দুই বার ট্যাক্সি থেকে নেমেছিলেন সানজিদা। নেইলপলিশ কিনেছেন, বড় বোনের মেয়েকে দেবেন।

ময়মনসিংহের কলসুন্দর গ্রামে সানজিদাদের বাসা। বাবা মায়ের সঙ্গে প্রতিদিনই কথা হয়। কিন্তু বাড়ি থেকে কোনো কিছু কেনার অনুরোধ নেই। প্রায় ৩০ হাজার টাকায় নিজের জন্য একটা কেডস এবং বুট কিনেছেন কলকাতার মার্কেট হতে। শত বছরের পুরোনো ইতিহাস এবং ঐতিহ্যমন্ডিত শ্বেতপাথরে তৈরি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ঢুকে অন্য জগতের মানুষ হয়ে গেলেন এআইইউবির অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষার্থী সানজিদা। ৫০ রুপিতে টিকিট কিনে, কড়া নিরাপত্তা পেরিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে দেওয়ালে দেওয়ালে বাংলা, ইংরেজি এবং হিন্দিতে লেখা ইতিহাস।

উপমহাদেশে ভারতের মাটিতে ব্রিটিশদের সঙ্গে কী হয়েছিল, সেসব নিয়ে ভারী ভারী তথ্য ছোঁয়া দিয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় সানজিদাকে। একজন দর্শনার্থী নিজেই প্রজেক্টর মেশিনে সুইচ টিপে দেখতে পারবেন সেলুলয়েডের ফিতায় তুলে আনা ইতিহাসের গল্প। আগের ইতিহাস, যুদ্ধের অস্ত্র, রিভালভর, ডেগার, তাক করা কামানের পাশে লেখা রয়েছে নাম এবং কোথায় ব্যবহার হয়েছিল। দর্শনার্থীদের ভিড়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে এসব ইতিহাস পড়ে সানজিদা মুগ্ধ। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব থেকে ট্যাক্সি পাঠনো হলো। ট্যাক্সিতে উঠে যাওয়ার সময় সানজিদা বলে গেলেন, ‘মনটা ভালো হয়ে গেলো। কলকাতায় আসার পর প্রথম ঘুরলাম, ভালো লাগল।’