March 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, March 20th, 2023, 8:12 pm

দেশে বাকিতে পণ্য আমদানি বাড়ছে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে বাকিতে আমদানি বাড়ছে। গত দেড় বছর ধরে বাকিতে পণ্য আমদানির প্রবণতা প্রায় ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই খাতে বকেয়া অর্থের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯৫৭ কোটি ডলার বা স্থানীয় মুদ্রায় ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। গত এক বছরে এর মাধ্যমে ১ হাজার ৯৭৬ কোটি ডলার বা স্থানীয় মুদ্রায় ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি করা হয়েছে। সেব ঋণ ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে পরিশোধের কথা থাকলেও মন্দায় সক্ষমতা কমায় তা পরিশোধের মেয়াদ ১ থেকে ২ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বিপরীতে ৬ থেকে ৮ শতাংশ সুদ দিতে হচ্ছে। তাতে বেড়ে যাচ্ছে আমদানির খরচ। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে সরাসরি ভোক্তার ওপর তার দায় এসে পড়ছে। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাকিতে পণ্য আমদানিতে সুদের হার বেশি। ফলে খরচও বেশি পড়ে। ২০২০ সালের আগে মোট আমদানির ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হতো বাকিতে হতো। করোনার কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের প্রথমদিক পর্যন্ত ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে আমদানিও কমে হয়েছে। পরবর্তীতে অর্থনৈতিক কর্মকা- বাড়তে থাকলে চাহিদা বাড়ায় বেড়ে যায় পণ্যের দামও। তার সঙ্গে যোগ হয় ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ। তাতে প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতির হার দ্রুত গতিতে বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক বাকিতে পণ্য বেচাকেনা বাড়িয়েছে। তার জেরে দেশেও বাকিতে পণ্য আমদানি বেড়েই চলেছে। আর বিদেশি ব্যবসায়ীরাও বাজার ধরে রাখতে এবং উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে বাকিতে বা ঋণ দিয়ে রপ্তানি করছে। সূত্র জানায়, মূলত মন্দায় আমদানিকারক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে চাহিদা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দেয়া সম্ভব না হওয়ার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি। বাকিতে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে অর্থায়ন বা ঋণ সুবিধা চালু রয়েছে। যা বায়ার্স ক্রেডিট বা ক্রেতার ঋণ নামে পরিচিত। বাকিতে পণ্য আমদানি করতে উদ্যোক্তারা এসব ঋণ দেয়া-নেয়া করে। এ ঋণ নিতে হলে রপ্তানিকারকের কাছে আমদানিকারককে বিশ্বস্ত হতে হয়। আমদানিকারকের ব্যক্তিগত, করপোরেট সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের গ্যারান্টি দিতে হয়। এর বিপরীতে আমদানিকারক রপ্তানিকারকের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য আনতে পারে। মেয়াদ শেষে সুদসহ অর্থ পরিশোধ করতে হয়। ঋণের মেয়াদ থাকে সাধারণত ৩ থেকে ৪ মাস। বৈশ্বিক মন্দার কারণে উদ্যোক্তাদের এবং বাণিজ্যিক ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী ডলারের জোগান দেয়ার সক্ষমতা না থাকায় এসব ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। বায়ার্স ক্রেডিট পরিশোধের মেয়াদ বেশ কয়েক দফায় বাড়িয়ে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। করোনার কারণে ২০২০ সালের জুন থেকে এর মেয়াদ বাড়ানো শুরু হয়। আগে এসব ঋণ পরিশোধের মেয়াদ সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাড়ানো হতো না। তবে আমদানিকারক, রপ্তানিকারক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সম্মতিতে বাড়ানো যেত। বাকিতে পণ্য আমদানি করে পরে দেনা শোধ করা হয় বলে এ প্রক্রিয়াকে বাকিতে পণ্য আমদানি হিসাবেও অভিহিত করা হয়। করোনার আগে এসব ঋণে পণ্য আমদানি খুব বেশি হতো না। ২০২১ সালে জুনে বায়ার্স ক্রেডিটের স্থিতি ছিল ৫৭৭ কোটি ডলার। একই বছরের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৮৮ কোটি ডলারে। ওই সময়ে ঋণ বেড়েছে ১০ কোটি ডলার বা ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ওই বছরের ডিসেম্বরে তা আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৮২১ কোটি ডলারে। ওই সময়ে বেড়েছে ২৩৩ কোটি ডলার বা ৩৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অর্থাৎ ২০২১ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর সময়ে বায়ার্স ক্রেডিট বেড়েছে ২৪৪ কোটি ডলার বা ৪২ দশমিক ২৯ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় উদ্যোক্তাদের পক্ষে চাহিদা অনুযায়ী ডলারের জোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। যে কারণে তারা বায়ার্স ক্রেডিটে পণ্য আমদানি বাড়াতে থাকে। ২০২২ সালের মার্চে বায়ার্স ক্রেডিটের স্থিতি আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬৫ কোটি ডলারে। আগের বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় বেড়েছিল ১৪৪ কোটি ডলার বা ১৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। একই বছরের জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৭৮ কোটি ডলারে। আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় বেড়েছিল ১৩ কোটি ডলার বা ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে বায়ার্স ক্রেডিট আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৯ কোটি ডলারে। জুনের তুলনায় বেড়েছিল ৪১ কোটি ডলার বা ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। ওই বছরের শেষ প্রান্তিক ডিসেম্বরে ঋণের স্থিতি কমে দাঁড়ায় ৯৫৭ কোটি ডলারে। সেপ্টেম্বরের তুলনায় কমেছিল ৬২ কোটি ডলার বা ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে ডলারের হিসাবে ঋণ সামান্য কমলেও টাকার হিসাবে বেড়েছে। কারণ, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে প্রায় ২৬ শতাংশ। ফলে কম ডলার ঋণ নিয়েও বেশি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। কারণ ডলারের ঋণ নিয়ে পণ্য আমদানির পর সেগুলো অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাকে টাকায় ব্যাংক ঋণের কিস্তি জমা দিতে হয়। ব্যাংক সে টাকা দিয়ে ডলার কিনে তা পরিশোধ করে। সূত্র আরো জানায়, ডিসেম্বর পর্যন্ত বায়ার্স ক্রেডিটের মোট স্থিতি ১ হাজার ৯৭৬ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে বায়ার্স ক্রেডিটের মাধ্যমে বাকিতে পণ্য আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৩৩১ কোটি ডলার বা স্থানীয় মুদ্রায় ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকার। আগের বছরের তুলনায় ডলারের হিসাবে বৃদ্ধির হার ৪২ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং টাকার হিসাবে ৪৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ওই অর্থবছরে মোট আমদানি হয়েছিল ৭ হাজার ৫৭৭ কোটি ডলারের পণ্য। এর মধ্যে বায়ার্স ক্রেডিটের মাধ্যমে এসেছে মোট আমদানির ৩০ দশমিক ৭৬ শতাংশ পণ্য। আগের অর্থবছরের তুলনায় এর মাধ্যমে আমদানি বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট আমদানি হয়েছিল ৫ হাজার ১০৬ ডলার। এর মধ্যে বায়ার্স ক্রেডিটে আমদানি হয়েছিল ১ হাজার ৬৩৩ কোটি ডলার, যা মোট আমদানির ৩১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট আমদানি হয়েছিল ৪ হাজার ৫৬৭ কোটি ডলার। এর মধ্যে বায়ার্স ক্রেডিটে হয়েছিল ১ হাজার ৪২৪ কোটি ডলার, যা মোট আমদানির ৩১ দশমিক ১৮ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট আমদানি ছিল ৫ হাজার ২৩৯ কোটি ডলার। এর মধ্যে বায়ার্স ক্রেডিটে আমদানি হয়েছিল ১ হাজার ৫১৬ কোটি ডলার, যা মোট আমদানির ২৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট আমদানি হয়েছিল ৪ হাজার ৯৩৮ কোটি ডলার। এর মধ্যে বায়ার্স ক্রেডিটে আমদানি হয়েছিল ৯০০ কোটি ডলার। মোট আমদানির ১৬ দশমিক ২২ শতাংশ। আগে বায়ার্স ক্রেডিটের মাধ্যমে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি করা হতো। এখন এসব পণ্যের পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যও আমদানি হচ্ছে। যে কারণে চাপ বেড়েছে বায়ার্স ক্রেডিটের ওপর।