November 15, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, August 15th, 2021, 8:05 pm

দেশে বেড়েই চলেছে নিষিদ্ধ পলিথিনের রমরমা বাণিজ্য

ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :

সারাদেশে বেড়েই চলছে নিষিদ্ধ পলিথিনের রমরমা বাণিজ্য। অল্প পুঁজিতে পলিথিনের কারখানা করে অনেক লাভবান হওয়া যায় বলে অনেকেই ওই অবৈধ ব্যবসায় ঝুঁকছে। পলিথিন উৎপাদনের মেশিন দেশেই পাওয়া যায়। আর ফুলসেট মেশিনের দাম সর্বোচ্চ ১৪ লাখ। অধিকাংশ পলিথিন কারখানাতেই ৪৪০ ভোল্ট বিদ্যুতের চোরাই লাইন রয়েছে। সব মিলিয়ে ১৫ লাখ টাকায় একটি পলিথিন উৎপাদনের কারখানা করে মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করা যায়। সেজন্য দিনে দিনে পলিথিন কারখানা বাড়ছে। পরিবশ অধিদফতর এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, খোদ রাজধানীতেই গড়ে উঠেছে ৭ শতাধিক পলিথিনের কারখানা। আর পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন স্থান করে নিয়েছে হাটে-মাঠে-ঘাটে, এমনকি সবার রান্না ঘরেও। নিষিদ্ধ পলিথিনের কারখানা দেয়া থেকে শুরু করে তার উৎপাদন ও বিপণনকে ঘিরে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সক্রিয়। মূলত ম্যানেজ করেই কারখানাগুলো পলিথিন উৎপাদন করছে। প্রতিটি কারখানাই ম্যানেজ খাতে মাসে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দেয়। তাতে মাসে প্রায় কোটি টাকার চাঁদা সিন্ডিকেটের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। চাঁদা না দিলে ওই কারখানায় অভিযান চলে। বর্তমানে খোদ রাজধানীতেই ৭ শতাধিক পলিথিন কারখানা রয়েছে। অথচ গতবছর ঢাকায় ৫০০ শতাধিক কারখানা ছিল। আর এক বছরের ব্যবধানে ওই সংখ্যা বেড়ে ৭ শতাধিকে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র জানায়, প্যাকেজিংয়ের ব্যবসার আড়ালে অনেকেই দেশে নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি করছেন। ওসব কারখানায় দিনে নামমাত্র প্যাকেজিংয়ের কাজ হলেও মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলে নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন। পরে ‘জরুরি রফতানি কাজে নিয়োজিত’ স্টিকারযুক্ত কাভার্ডভ্যানে করে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকি লকডাউনের সময়ও ওসব কারখানা খোলা ছিল। বরং তখন অনেকটা নির্ভাবনায় সারারাত কাজ চলেছে এবং গাড়িতে করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়েছে। রাজধানীর বেশিরভাগ পলিথিন কারখানাই পুরান ঢাকায় গড়ে উঠেছে। আর লালবাগ, কামালবাগ, শহীদনগর, দেবীদাসঘাট, খাজে দেওয়ান, কিল্লারমোড়, বেগমবাজার, চকবাজার, কামরাঙ্গীরচর, বড়কাটারা, ছোটকাটারা, রহমতগঞ্জ, ফরিদাবাদ, মিটফোর্ড এলাকার বিভিন্ন আবাসিক ভবনেও অবৈধভাবে অনেক পলিথিনের কারখানা গড়ে উঠেছে। তাছাড়াও কেরানীগঞ্জ, জিঞ্জিরা, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, কাওরান বাজার, তেজগাঁও এবং টঙ্গীতে ছোট-বড় বেশকিছু কারখানা রয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে কয়েকশ’ নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানা।
সূত্র আরো জানায়, পুরনো ঢাকা এলাকার ৭০ ভাগ বাড়িতেই কারখানা রয়েছে। আর বেশিরভাগ কারখানাতেই পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য তৈরি হয়। প্রতিটি কারখানা থেকে রাতে ইমামগঞ্জে পলিথিন যায়। সেখান থেকে তা সারা দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ইমামগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি কাভার্ডভ্যান নিষিদ্ধ পলিথিন নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) গতবছর প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরির প্রায় ১২০০ কারখানা রয়েছে। যার বেশির ভাগই পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক। তার মধ্যে ঢাকার অলিগলিতে আছে ৫ শতাধিক কারখানা। সম্প্রতি পবার প্রকাশিত এক তথ্যে বলা হয়, সারাদেশে অবৈধ পলিথিন তৈরির কারখানা রয়েছে কমপক্ষে ১৫০০। তার মধ্যে পুরান ঢাকা এবং বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে রয়েছে ৭ শতাধিক কারখানা।
এদিকে পরিবেশ অধিদফতর বিগত ২০০২ সালে এক প্রজ্ঞাপনে পলিথিনের সব ধরনের শপিং ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাত, বিক্রি, প্রদর্শন, মজুদ ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে। প্রথমদিকে ওই আইনের সফল প্রয়োগের ফলে পলিথিন বাজার থেকে প্রায় উঠেই গিয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে আইন প্রয়োগে শিথিলতার কারণে গত কয়েক বছর ধরে পলিথিনের ব্যাগে বাজার ভরে গেছে। অবাধে চলছে পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়া। দৈনন্দিন জীবনের সব কাজে পলিথিনের ব্যবহার চলছে। নিত্যদিনের বাজার সদাই থেকে শুরু করে এক টাকা দামের চকলেট হোক বা লাখ টাকার সোফা সব কিছুর সঙ্গে দেয়া হচ্ছে পলিথিন। আর ওসব পলিথিন ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে দেয়া হচ্ছে। ফলে অপচনশীল পলিথিনে ভরাট হচ্ছে পয়োনিষ্কাশনের নালা-নর্দমা। আর তাতে নগরীতে তৈরি হচ্ছে পানিবদ্ধতা। ধূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তাছাড়া চাপা পড়া পলিথিন নষ্ট মাটির গুণাগুণ করছে। পলিথিন বা প্লাস্টিক বর্জ্যে নদী থেকে সাগরের পানি পর্যন্ত দূষিত হচ্ছে। ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশে নিষিদ্ধ ওই পলিথিনের উৎপাদন অনেকটা নির্বিঘেœই চলছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল জানান, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধে আইন থাকলেও তার কার্যকারিতা একেবারেই নেই। সরকার এ ব্যাপারে আন্তরিক নয়। পলিথিন বন্ধ করতে হলে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ প্রয়োজন। শুধু পরিবেশ অধিদফতর একা পলিথিন বন্ধ করতে পারবে না। তার সাথে শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। পলিথিন দেশের ভূমি, নদী সব কিছু গিলে খাচ্ছে, সাগর বিষাক্ত করছে। ঢাকা শহরেই প্রতিদিন ১ কোটি ৫০ লাখের বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেয়া হয়। রাস্তা এবং গলি থেকে পলিথিন বাতাসে উড়ে এক পর্যায়ে ড্রেনে-নর্দমায় জমা হয়। রাস্তার মধ্যে থাকা ড্রেনের মুখে পলিথিনের স্তূপ সব সময়ই চোখে পড়ে। পলিথিন ৪০০ বছরেও পচে না। অর্থাৎ আজ কাজ শেষে যে পলিথিন গলিতে বা রাস্তায় ফেলা হচ্ছে তা পরিবেশ ধ্বংস করার হাতিয়ার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পলিথিন একদিকে জলাবদ্ধতা বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে মাটির উর্বরতা কমাচ্ছে। আবার তলদেশে জমা হয়ে নদী ভরাট হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে।