November 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, September 14th, 2022, 8:16 pm

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। একই বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে রোডম্যাপ ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল উপস্থিত ছিলেন না। তিনি অসুস্থ বলে জানা গেছে। তবে, অন্যান্য কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রোডম্যাপ অনুযায়ী, চলতি মাস থেকে নির্বাচন পর্যন্ত কী কী কার্যক্রম চলবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হবে। এ জন্য আগের নীতিমালা পর্যালোচনা করে আগামী বছরের জানুয়ারিতে নতুন নীতিমালা তৈরি করা হবে। ইসি কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ও অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপের সময় সংবিধানের আলোকে যেসব সুপারিশ এসেছে সেগুলো নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সবার সহায়তা দরকার।
চ্যালেঞ্জসমূহ: নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা সৃষ্টি, নির্বাচনের দায়িত্বে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা বিশেষ করে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন, ব্যবহৃত ইভিএমের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টি, অর্থ ও পেশীশক্তির নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, সকল রাজনৈতিক দল কর্তৃক নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ, নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপক্ষ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-সমর্থক-পুলিশ-প্রশাসন কর্তৃক কোনো রকম বাধার সম্মুখীন না হওয়া, জালভোট, ভোটকেন্দ্র দখল ব্যালট ছিনতাই রোধ, প্রার্থী-এজেন্ট-ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে অবাধ আগমন, ভোটারদের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীকে ভোট প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তাকর্মচারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান, পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিতকরণ, পর্যাপ্ত সংখ্যক নির্বাহী-জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিতকরণ, নিরপেক্ষ দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োজিতকরণ।
চ্যালেঞ্জসমূহ উত্তরণের উপায়: বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী যে সুপারিশগুলো অধিকাংশ জন করেছেন তা বাস্তবায়ন, সকল রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনী প্রচারকার্য নির্বিঘেœ করতে পারে সে বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা, সরকারের কোনো সংস্থা কর্তৃক হয়রানিমূলক মামলা না করা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-সমর্থক দ্বারা প্রার্থী, সমর্থক ও তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ না করা। এমন হলে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, নির্বাচনের পূর্বে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন, জননিরাপত্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, আনসার ও ভিডিপির প্রধানদের সঙ্গে সভা করে তাদের অধিনস্থ কর্মকর্তা যারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন তারা যেন আন্তরিকতা ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন সে বিষয়ে অধিনস্তদের নির্দেশ দেওয়া, প্রত্যেক ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, ভোট কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন, ইভিএমের ব্যবহার সবোর্চ্চ ১৫০ আসনে সীমাবদ্ধ রাখা। শুধুমাত্র মেট্রোপলিটন ও জেলা সদরের আসনগুলোতে ব্যবহার করা, নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পরদিন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ, নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ, ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক সঙ্গে সঙ্গে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ, আরপিও ও নির্বাচনী আচরণ বিধিতে কতিপয় প্রয়োজনীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার যতদূর সম্ভব নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের একটি তালিকা তৈরি করে তাদের প্রশিক্ষণ নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পূর্বেই শুরু করা যাতে যথাযথভাবে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা সম্ভব হয়, যে সকল প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের বিষয়ে প্রার্থীর যুক্তিসংগত আপত্তি থাকবে তাদের নিয়োগ না দেওয়া, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ ও তাদের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে ব্রিফিং করা, গণমাধ্যম কর্মী নিয়োগ ও তাদের জন্যও ব্রিফিং-এর ব্যবস্থা করা, নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে অনীহা, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা, প্রার্থীদের জনসভা করার জন্য স্থান, তারিখ, সময় সিডিউল করে দেওয়া। ইসি বলছে, এ পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে ইভিএমে কারচুপির প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি। আর এই মেশিনে কারচুপি সম্ভব নয়। কেবল মনস্তাত্বিক ধারণা থেকে ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ করা হয়। ইভিএম নিয়ে সংলাপে ১২ দল সরাসরি ও ১১টি শর্ত সাপেক্ষে ইভিএম চেয়েছে, আর ৬টি দল সরাসরি বিপক্ষে অবস্থা নিয়েছে বলে রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংসদীয় আসনের সীমানা: কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে- ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে নতুন একটি নীতিমালা করা হবে। যার ভিত্তিতে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে ২০২৩ সালের মার্চে আসনগুলোর সীমানা বিন্যাসের খসড়া প্রকাশ করা হবে। এপ্রিলে সেই খসড়ার ওপর দাবি আপত্তি নিয়ে মে মাসে সেগুলো নিষ্পত্তির পর জুন মাসে ৩০০ আসনের পরিবর্তিত সীমানার গেজেট প্রকাশ করা হবে।
ভোটার তালিকা: বর্তমানে হালনাগাদের কাজ চলমান রয়েছে। ২০২৩ সালের ২ মার্চ হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করা হবে। আর সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে প্রকাশ করা হবে ৩০০ আসনের ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা।
ভোটকেন্দ্র: ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। এ ক্ষেত্রে ২০২৩ সালের জুনে কাজ হাতে নেওয়া হবে। জুলাইয়ে খসড়া প্রকাশ, আগস্টে সেই খসড়ার ওপর দাবি আপত্তি নিয়ে তা নিষ্পত্তি করা হবে। এরপর ভোটগ্রহণের ২৫ দিন পূর্বে ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
দলগুলোর নীরিক্ষা: নিবন্ধিত দলগুলো কার্যক্রম খতিয়ে দেখার কার্যক্রম শুরু হবে চলতি সেপ্টেম্বরেই। এ ক্ষেত্রে সব তথ্য পর্যালোচনা করে ২০২৩ সালের মে মাসে কোন কোন দলের নিবন্ধন বহাল থাকবে সেই সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। আর একই বছর জুনে প্রকাশ করা হবে নিবন্ধিত দলগুলোর চূড়ান্ত তালিকা। এর আগে মে মাসে দেওয়ার হবে নতুন দলের নিবন্ধন। এছাড়া ২০২৩ সাল থেকেই নেওয়া হবে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ, সফটওয়্যার প্রণয়ন, প্রচার কার্যক্রম ও পর্যবেক্ষক যাচাই-বাছাইকরণ কার্যক্রম। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনারদের নেতৃত্বে বিষয়ভিত্তিক আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। সবার মতামতের আলোকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করে তোলা সম্ভব হবে বলেও রোডম্যাপে উল্লেখ করেছে ইসি। একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, সেই সময় ধরে পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়াদ ধরলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ডিসেম্বরে শেষ থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। আর নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রসঙ্গত গত সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়রি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সেক্ষেত্রে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে পরের বছর জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।