April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, May 21st, 2022, 1:20 pm

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সু-সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ছবি: পি আই ডি

ইউক্রেন যুদ্ধ ইতোমধ্যে মহামারি-বিধ্বস্ত ভঙ্গুর বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও ভয়াবহ চাপে ফেলেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বৈশ্বিক রসদ ও সরবরাহ শৃঙ্খলের সমস্যা মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবার তিনি জাতিসংঘ কর্তৃক আয়োজিত খাদ্য, শক্তি ও অর্থবিষয়ক গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের (জিসিআরজি) প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বলেন, ‘এটি পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে’।

ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপক প্রভাবের বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া সমন্বয়ের জন্য জাতিসংঘ জিসিআরজি প্রতিষ্ঠিত করেছে।

এই গ্রুপে আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মোটলি, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো এবং সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সাল।

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

এসময় তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এমন এক সময়ে শুরু হয়েছে, যখন আগে থেকেই করোনা মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে ধুঁকছে বিশ্ববাসী।

তিনি বলেন, খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্যের সরবরাহের স্বল্পতা এবং অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে ইতোমধ্যেই সাধারণ মানুষের জীবনে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি এই সঙ্কটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত লক্ষাধিক মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছেন।

বাংলাদেশের খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে অত্যন্ত অস্থিতিশীল করে তুলেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি) এবং ক্ষুদ্র উন্নয়নশীল দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো (এসআইডি) সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

তিনি ফোরামকে বলেন, ‘এই পরিস্থিতি কাটাতে অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট সহায়তার প্রয়োজন তাদের।’

শেখ হাসিনা বলেন, উন্নত অর্থনীতি ও বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকারসহ সহজলভ্য অর্থায়ন সহযোগিতা করতে হবে।

তিনি বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করার এবং একটি সু-সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেন। এরমধ্যে জি-৭, জি-২০, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী কৃষি খাতে, কার্যকর খাদ্য সঞ্চয় ও বিতরণ ব্যবস্থার জন্য প্রযুক্তি সহায়তা এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়াও নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে আরও বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার সুযোগ রয়েছে।’

তিনি বলেন, অনেক এসআইডি এবং নিম্ন জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশে কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা গুরুতর চাপের মধ্যে রয়েছে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা অনেক উদ্ভাবনী জলবায়ু কর্মের নেতৃত্ব দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমরা অন্যদের সুবিধার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন, জীব-বৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের জ্ঞান, বোঝাপড়া এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চাই’।

তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে বাংলাদেশ বহুপাক্ষিকতায় দৃঢ় বিশ্বাসী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সর্বদা বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়েছি।’

তিনি বলেন, জাতি হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহনশীলতার জন্য পরিচিত। করোনা মহামারি তার সর্বশেষ উদাহরণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার মহামারি পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ লোকদের অগ্রাধিকার দিয়েছিল।

তিনি ফোরামকে বলেন,‘সময়মত টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা আমাদের একটি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে এবং জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছিল’।

তিনি বলেন, সরকার তার রপ্তানি খাত এবং এসএমইকে সমর্থন করার জন্য বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিয়েছে। ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উদ্দীপনা প্যাকেজগুলো রোল আউট করা হয়েছিল।

এই পদক্ষেপগুলো দেশকে গত অর্থবছরে ছয় দশমিক ৯৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অর্জনে সহায়তা করেছে বলেন তিনি।

জাতিসংঘ মহাসচিবের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার বিরূপ প্রভাব এড়াতে কঠোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, তার সরকার নিয়মিতভাবে ১০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের কাছে খাদ্য এবং নগদ অর্থ সহায়তা পৌঁছানোর জন্য সামাজিক-নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রসারিত করেছে।

তিনি আরও বলেন,‘কার্ড ইস্যু করার মাধ্যমে ১০ মিলিয়ন প্রান্তিক মানুষের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে (৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য হ্রাসসহ) ভোজ্যতেল, ডাল, চিনির মতো ভোগ্যপণ্য বিক্রি করার কর্মসূচি নেয়া হয়েছে’।

—ইউএনবি