April 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, August 17th, 2021, 8:29 pm

ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে অবৈধ ভিওআইপি কারবারের মূল হোতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) কারবারে মোটা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু সিন্ডিকেট। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) অভিযানে ওই চক্রের মাঠপর্যায়ে থাকা কিছু কর্মী গ্রেফতার হলেও সরকারের প্রভাবশালীদের সহায়তায় মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। রহস্যজনক কারণে আইনের আওতায় আসছে না তারা। অথচ তারা অবৈধ ভিওআইপির কারবার করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের অবৈধ কারবারে সরকার বছরে রাজস্ব হারাচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশিও। আর ওসব টাকা যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে হুন্ডি, ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অবৈধ ভিওআইপির কারণে সরকারের দৈনিক কমপক্ষে সাড়ে ১২ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়। মাসে তার পরিমাণ ৩৭৫ কোটি টাকা। বার্ষিক হিসাবে ৪ হাজার ৫৬২ কোটি টাকারও বেশি। মোবাইল ফোন অপারেটরদের আন্তর্জাতিক কল অবৈধ ভিওআইপির কারণে উদ্বেগজনক হারে কমে গেছে। মূলত অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার মূল হোতারা সরকারের প্রভাবশালীদের আশ্রিত হওয়ায় বিটিআরসি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। অথচ ভিওআইপি শনাক্ত করার সব আধুনিক সরঞ্জাম বিটিআরসির রয়েছে। বিটিআরসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলে অবৈধ ভিওআইপি বন্ধ ও সরকারের রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব হতো।
সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী সরকার প্রতি মিনিট ইনকামিং আইএসডি কলে ৩ সেন্ট হিসেবে রাজস্ব পাবে। ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে সার্ভিস প্রোভাইডারসহ বিভিন্ন তথ্যানুযায়ী দেশে দৈনিক ১০ কোটি মিনিটের বেশি বৈদেশিক কল রিসিভ হয়। আর তার প্রায় ৭ কোটি মিনিটই চোরাপথে বা ভিওআইপির মাধ্যমে আসছে। ফলে দৈনিক প্রায় ২০ কোটি টাকার বিদেশি কল ভিওআইপির মাধ্যমে চুরি হয়। যা বন্ধ করা গেলে সরকার দৈনিক সাড়ে ১২ কোটি টাকা আর বার্ষিক ৪ হাজার ৫৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হতো। অবৈধ ভিওআইপি কারবারের শীর্ষে রয়েছে সরকারি মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর টেলিটক। অভিযোগ রয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির উচ্চপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশেই ভয়াবহ অবৈধ ভিওআইপি সিন্ডিকেট কার্যক্রম চালাচ্ছে। টেলিটকের কর্মকর্তাদের কেউ ওই চক্রের বাইরে গেলে তাদের চাকরিচ্যুতিসহ নির্যাতনেরও শিকার হতে হয়।
সূত্র আরো জানায়, অসাধু চক্রের অবৈধ ভিওআইপি কারবারে সরকারই শুধু রাজস্ব হারাচ্ছে না, লোকসান গুনছে বৈধভাবে দেশে ফোন কল প্রবেশের ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোও। লোকসান গুনতে গুনতে ওসব প্রতিষ্ঠান প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। অবৈধ ভিওআইপি কারবারের মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনা না গেলে টেলিকম খাতের বহু প্রতিষ্ঠান অচিরেই ধ্বংসের মুখে পড়বে। তাতে সরকার রাজস্ববঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বৈধ বহু ব্যবসায়ীকেও ব্যবসা বন্ধ করে পথে বসতে হবে।
এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার বিষয়ে একাধিক অভিযোগ জমা হয়েছে। ওসব অভিযোগের বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওসব অভিযোগ আমলযোগ্য হলে প্রশাসনিক তদন্ত ও অন্য যেসব করণীয় তা অবশ্যই করা হবে।