নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশজুড়ে সরকারি বোরো মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় কৃষকরা খাদ্যগুদামে ধান-চাল বিক্রি করতে আগ্রহী হচ্ছে না। তাছাড়া চালকল মালিকরাও নির্ধারিত দামে সরকারের কাছে চাল বিক্রি করতে চায় না। ফলে এ মৌসুমেও ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। যদিও আমনের পর এ বছর বোরো মৌসুমেও সন্তোষজনক ফলন হয়েছে। এবারের বোরো মৌসুমে আমনের চেয়ে দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা বাড়িয়ে ৩০ টাকা এবং চালের দাম ৩ টাকা বাড়িয়ে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।
চলতি বছর বোরো মৌসুমে ৪ লাখ টন ধান, সাড়ে ১২ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও এক লাখ টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। গত বোরো মৌসুমে ধান, চাল ও গমের দাম ছিল যথাক্রমে ২৭, ৪০ ও ২৮ টাকা। আর গত আমন মৌসুমে কেজিপ্রতি ধান ২৮ ও চাল ৪১ টাকায় কিনেছিল সরকার। খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বোরো মৌসুমে রংপুর বিভাগ থেকে সবচেয়ে বেশি ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। ওই অঞ্চলের জেলাগুলো থেকে ৬৫ হাজার ৯৮৪ টন ধান ও ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৩৪ টন চাল সংগ্রহ করা হবে। তাছাড়া রাজশাহী বিভাগ থেকে ৬৫ হাজার ৮১৭ টন ধান ও ২ লাখ ৩১ হাজার ৭৮৮ টন চাল, ঢাকা থেকে ৫৮ হাজার ৮৫০ টন ধান ও ১ লাখ ২৫ হাজার ১৪৮ টন চাল, খুলনা থেকে ৫১ হাজার ৬৮৪ টন ধান ও ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪০০ টন চাল, চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ৫০ হাজার ৭২ টন ধান ও ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৬৪ টন চাল, সিলেট থেকে ৩৫ হাজার ৫৩৬ টন ধান ও ৪৪ হাজার ৪৫৬ টন চাল, বরিশাল থেকে ১৬ হাজার ২৩১ টন ধান ও ২৮ হাজার ৫০০ টন চাল এবং ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে ৫৫ হাজার ৮২৬ টন ধান ও ২ লাখ ৮ হাজার ৯০০ টন চাল সংগ্রহ করা হবে। তবে ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে রংপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, বরিশাল, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলার প্রাপ্ত বরাদ্দের কমপক্ষে ৫ শতাংশ এবং ভোলা থেকে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ জিংকসমৃদ্ধ ধান (ব্রি-৭৪) সংগ্রহ করতে হবে।
তাছাড়া সংগৃহীত জিংকসমৃদ্ধ ধান পৃথকভাবে খামারজাত ও ক্রাশিংয়ের পর চাল সংরক্ষণ করতে হবে। সূত্র জানায়, বিভিন্ন জেলায় এরইমধ্যে ধান কাটা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শেষ হয়েছে। চলতি বছর ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮৭২ হেক্টর জমিতে বোরো মৌসুমে ধান আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাওরভুক্ত সাত জেলায় ৯ লাখ ৫৩ হাজার ১৩৭ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে, যার ৪ লাখ ৫২ হাজার হেক্টর হাওরে এবং পাঁচ লাখ হেক্টর হাওরের বাইরে রয়েছে। এরইমধ্যে হাওরের ৯২ শতাংশের বেশি ধান কাটা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের মোট আবাদকৃত জমির প্রায় ৩৩ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আর মোট ফলন হয়েছে ৭০ লাখ টন। কিন্তু বিভিন্ন জেলায় কৃষক সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে খোলাবাজারে ধান বিক্রি করছে। কারণ গুদামের চাহিদা অনুযায়ী ধান প্রস্তুত করতে গেলে প্রতি মণে আরো ৫-৭ কেজি কমে যায়।
এ ছাড়া সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে বাড়তি পরিবহন খরচ, বিক্রয়ে অনিশ্চয়তা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ নানা প্রক্রিয়াগত জটিলতায় পড়তে হয়। এদিকে চালকল সংশ্লিষ্টদের মতে, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আগের বছরগুলোর তুলনায় ধানের গুণগত মানও অনেক ভালো হয়েছে। তাই হু হু করে ধানের দাম বেড়ে চলেছে। চাষীরা তাদের কষ্টার্জিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে। সরকারকে চাল দিতে মিল মালিকরা এবারো চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। হাইব্রিড ধানের বর্তমান বাজারদর যদি এ অবস্থায়ই থাকে তাহলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিলাররা গুদামে চাল সরবরাহ করবে। প্রতি কেজিতে এবার এক-দেড় টাকা লাভ হবে। অন্যদিকে চলতি আমন মৌসুমে সরকারিভাবে তিন লাখ টন ধান ও পাঁচ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছিল সরকার। কিন্তু সময়সীমা শেষে চাল সংগ্রহ হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার ৮১ টন, আর ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৬৯৪ টন। গত বোরো মৌসুমেও ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৬ লাখ ৫০ হাজার টন নির্ধারণ করা হলেও এর ৫৯ শতাংশই পূরণ হয়নি। যদিও চালের ১১ লাখ টনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়।
২০১৮ সালে কেবল শতভাগ ধান-চাল সংগ্রহে সমর্থ হয় সরকার। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ২১ শতাংশ, ২০২০ সালে ৩৩ ও ২০২১ সালে ৫৪ শতাংশ ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়। এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রেজা মোহাম্মদ মহসিন জানান, ‘সবার সঙ্গে আলোচনা করেই ধান ও চালের দাম নির্ধারণ করা হয়। তবে কৃষকদের মধ্যে ধানের আর্দ্রতা ঠিক রাখা বা বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান কম থাকায় সেক্ষেত্রে একটু গ্যাপ থেকে যায়। সার্বিক বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন জানান, ‘ধান ও চালের দাম সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ধানের ক্ষেত্রে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন জায়গায় ৯০০-৯৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকের উৎপাদন খরচ হিসাব করেই একটি মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
আরও পড়ুন
বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র: বিশেষজ্ঞ
চুয়াডাঙ্গায় রাতে বৃষ্টি দিনে সূর্যের চোখ রাঙানি, রেকর্ড তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি