November 23, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, November 20th, 2021, 8:26 pm

ধারণক্ষমতার চেয়ে রাজধানীর সড়কে যানবাহন বেশি

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানী ঢাকায় দুর্বিষহ যানজট সমস্যা প্রতিদিন তীব্রতর হচ্ছে। বিশেষ করে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, বিপণি বিতান প্রভৃতি জায়গায় যাতায়াত করা এক দুঃস্বপ্নের যন্ত্রণার মতো। যানজটের কারণে কেবল রাজধানীতে প্রতিদিন বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আয় নষ্ট হচ্ছে। সবমিলিয়ে যানজটের কারণে দিনে আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, ঢাকায় নিবন্ধিত মোটরযানের সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ। এর মধ্যে গত ১০ বছরে নিবন্ধন হয়েছে কম-বেশি ১১ লাখ। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ির মতো অযান্ত্রিক বাহনের সংখ্যা অন্তত ১০ লাখ। এগুলোর সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে চলছে আরো কয়েক লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এ বিপুলসংখ্যক যানবাহনের বিপরীতে চলাচল উপযোগী সড়ক রয়েছে মাত্র ৩৬০ কিলোমিটার। বর্তমানে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যানবাহন চলছে ঢাকার প্রায় সব সড়কেই। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, রাজধানীর সড়কগুলোয় এখন ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে যানবাহন চলাচল করছে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোয় চলাচলকারী যানবাহনের সক্ষমতা দ্বিগুণেও উঠে যাচ্ছে।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) তথ্যানুযায়ী, ২৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রাজধানী ঢাকা শহরে বর্তমানে খাতা-কলমে বাস রুটের সংখ্যা ২৯১টি। এই সংখ্যক রুটে আড়াই হাজার কোম্পানির ৩০ হাজার গাড়ি চলাচল করে। জানা গেছে, এসব রুটের মধ্যে কিছু বর্তমানে অকার্যকর। আবার অনেক জায়গায় রুট থাকলেও নামমাত্র বাস চলাচল করে। আবার এমন অনেক রুট আছে সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় বাসের সংখ্যা অনেক বেশি।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালে ঢাকার রাস্তায় তিন হাজার ৬৪৩টি বাস-মিনিবাস নামানো হলেও ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নামানো হয় ২ হাজার ১০৭টি। আর চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে নিবন্ধিত হয়েছে ২২০টি বাস-মিনিবাস। এর মধ্যে ৯৭টিই ঢাকাতে। তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে ঢাকা শহরে মোট নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭টি। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখেরও বেশি।
বিজ্ঞাপন
সুত্র মতে, ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীতে নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ১৭ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি আট লাখ ৪৯ হাজার ৩৩৫টি, যা মোট গাড়ির ৪৯ শতাংশ। প্রাইভেটকার নিবন্ধিত হয়েছে তিন লাখ ৮ হাজার ৮৬০টি, যা মোট গাড়ির ১৮ শতাংশ। আর বাসের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৯৭৮টি, যা মোট গাড়ির ২ শতাংশ।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে ঢাকার সড়কে সক্ষমতার দ্বিগুণের চেয়েও অনেক বেশি যানবাহন চলাচল করছে। এতে করে ঢাকার উন্নয়নে একের পর এক ফ্লাইওভার, ওভারপাসের মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করার পরও যানজট কমছে না। বরং দিন দিন যানবাহনের গড় গতি মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কমে যাচ্ছে।
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো নিয়ে ডিটিসিএর করা এক প্রতিবেদনেও ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি গাড়ি চলাচলের তথ্য উঠে এসেছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার ২৬টি মোড় পরিদর্শন করে প্রায় সবক’টিতেই কোনো না কোনো ত্রুটি ও অব্যবস্থাপনা খুঁজে পেয়েছে ডিটিসিএর পরিদর্শক দল। সেসব ত্রুটি ও অব্যবস্থাপনার কারণে একদিকে যেমন মোড়গুলোর সক্ষমতা কমেছে, তেমনি ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যানবাহন চলাচল করায় দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট।
গোলাপ শাহ মাজার, জিরো পয়েন্ট, নয়াপল্টন, দৈনিক বাংলা মোড়, ফকিরাপুল, টিঅ্যান্ডটি কলোনি, শহীদবাগ, মালিবাগ, শান্তিনগর, পল্টন, গুলশান-১, মতিঝিল পেট্রল পাম্প, আউটার সার্কুলার রোড, কমলাপুর, সিটি সেন্টার, শাপলা চত্বর, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, কাঁটাবন, বাংলামোটরসহ আরো কয়েকটি ইন্টারসেকশনে এ ধরনের সমস্যার কথা উল্লেখ করেছে ডিটিসিএ। এর বাইরে বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মিরপুর-১০, কাকরাইলের মতো ইন্টারসেকশনগুলোয় ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি যানবাহন চলাচল করার কথা জানিয়েছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
একদিকে যেমন অতিরিক্ত গাড়ির কারণে ঢাকার সড়কের সক্ষমতা কমছে, তেমনি আরেকদিকে অবৈধ দখল, অবৈধ পার্কিং, রাস্তার ওপর নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা, বাস বা অন্য গণপরিবহন দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামাসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার কারণেও কমছে সড়কের সক্ষমতা। একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত বুয়েটের তিন শিক্ষার্থীর সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, নানা অব্যবস্থাপনার কারণে ঢাকার আউটার সার্কুলার সড়কের ২৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ, তোপখানা সড়কের ৭ দশমিক ৫৪, মতিঝিল সড়কের ২৫ দশমিক ১৪, পান্থপথ সড়কের ১১ দশমিক ৩৬, কাঁটাবন সড়কের ৬ দশমিক ৬৯, শাহবাগ সড়কের ৩ দশমিক ৯২ ও গ্রীন রোডের ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ সক্ষমতা কমেছে।
একদিকে যেমন অতিরিক্ত গাড়ির কারণে ঢাকার সড়কের সক্ষমতা কমছে, তেমনি আরেকদিকে অবৈধ দখল, অবৈধ পার্কিং, রাস্তার ওপর নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা, বাস বা অন্য গণপরিবহন দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামাসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার কারণেও কমছে সড়কের সক্ষমতা। একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত বুয়েটের তিন শিক্ষার্থীর সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, নানা অব্যবস্থাপনার কারণে ঢাকার আউটার সার্কুলার সড়কের ২৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ, তোপখানা সড়কের ৭ দশমিক ৫৪, মতিঝিল সড়কের ২৫ দশমিক ১৪, পান্থপথ সড়কের ১১ দশমিক ৩৬, কাঁটাবন সড়কের ৬ দশমিক ৬৯, শাহবাগ সড়কের ৩ দশমিক ৯২ ও গ্রীন রোডের ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ সক্ষমতা কমেছে।
রাজধানীর পার্কিং-এর চরিত্রটি আরও ভয়ানক। মতিঝিলে সাধারণ বীমা অফিসের উল্টোদিকে একটি বহুতল ভবনে ৩৭০টি গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থা আছে। এর পাশাপাশি ৩৭ তলা সিটি সেন্টারেও প্রায় সাড়ে ৫০০টি গাড়ি পার্ক করার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া বসতবাড়ি এবং কিছুকিছু অফিসে নিজস্ব গাড়ি রাখার ব্যবস্থা আছে ঢাকায়। এর বাইরে পুরো রাজধানীতে আর কোনো সুনির্দিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা নেই। তাই অফিস এবং ব্যবসা-বাণিজ্য চলাকালীন সময়ে ৮০ ভাগ গাড়ি রাস্তায় যত্রতত্র পার্কিং করা হয়।শুধু তাই নয়, সেগুলো থেকে নিয়মিত টোলও আদায় করা হয়।
ঢাকা শহরের মধ্য দিয়ে এখনো রেলগাড়ি চলাচল করে। ঢাকা শহরের ভেতর দিয়ে রেল লাইন যাওয়ার ফলে ১৭টি পয়েন্টে রাস্তা বন্ধ করে ট্রেন যাওয়ার ব্যবস্থা করায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এসব পয়েন্টে দিনে কমপক্ষে ১০ বার যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এরসঙ্গে আছে ভিআইপি মুভমেন্টো। দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি, রাজনীতিবিদদের মুভমেন্টের সময় দীর্ঘক্ষণ কিছুকিছু সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে শুধু তাঁদের চলাচলের সুযোগ করে দেয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই তখন পার্শ্ববর্তী সরকগুলোতে সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজট।