May 2, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, November 14th, 2023, 7:17 pm

নড়াইলের অরুণিমায় অতিথি পাখি দেখতে পর্যটকদের ভিড়

পঞ্জিকার পাতায় চলছে হেমন্তকাল। তবে প্রকৃতিতে বইছে শীতের হাওয়া। আর শীতকাল এলেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা মেলে অতিথি পাখির। দেশের যে কয়েকটি স্থানে বৃহৎ পরিসরে অতিথি পাখির উপস্থিতি দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পানিপাড়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব।

জেলা শহর থেকে প্রায় ৩১ কিলোমিটার দূরে নিভৃত পল্লীতে ৫০ একর জমির উপর গড়ে উঠা এই রিসোর্টটি যেন পাখিদের এক আপন রাজ্য। বছরের ১২ মাস এখানে দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি পাখির। আর ৯ মাস থাকে বিদেশি পাখিরা। শীতের হাওয়া বইতেই তাই ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখিরা ছুটে আসছে অরুণিমায়।

দিন যত যাচ্ছে শীতের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাখির সংখ্যা। সেই সঙ্গে থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা থাকায় প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী ভিড় করছেন অরুণিমায়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কার্তিকের সকালে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়া নানান প্রজাতির অতিথি পাখিরা সন্ধ্যার আগেই রিসোর্টে ফিরতে শুরু করেছে। পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে এসে বসছে রিসোর্টের লেকের পাড়ে অবস্থিত ছোট-বড় গাছের ডালে। পাখিদের ডালে বসার নয়নাভিরাম দৃশ্য, ডানা ঝাপটানি ও কিচিরমিচির শব্দের টানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। পাখি দেখতে নৌকা করে ছুটছেন কেউ কেউ। পড়ন্ত বিকালে লেকের পানিতে পড়া সূর্যের লাল আভা বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে দর্শনার্থীদের। অনেকেই মুঠোফোনে বন্দী করছেন প্রাকৃতিক এসব দৃশ্য। অরুণিমার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ সবাই।

ঢাকা থেকে সপরিবারে অরুণিমায় পাখি দেখতে আসা আফসানা জানান, দু’দিন হলো তারা এখানে এসেছেন। এখানকার প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ খুব ভালো লাগছে। কিছুটা গ্রাম্য পরিবেশ ও কিছুটা শহুরে আদলসহ সবকিছুই আছে এখানে। আর আছে অনেক অনেক গাছপালা ও ফুল।

তিনি বলেন, বিশেষ করে এত পাখি আমি আসলে বাংলাদেশের কোথাও দেখিনি। লাখ লাখ পাখি দেখা যাচ্ছে। পাখির কিচির-মিচির আওয়াজ খুবই ভালো লাগছে। নৌকায় ঘুরে পাখি দেখা, রাতের বেলা ব্যাঙ, ঝিঁঝি ও জোনাকি পোকা; সব মিলিয়ে ভালোই লাগছে।

ঢাকা থেকে আসা মো. তাফসির বলেন, ঢাকা শহরে আমরা যারা বড় হচ্ছি বা জীবন-যাপন করছি, তারা আসলে যান্ত্রিকতার মধ্য দিয়ে বড় হচ্ছি। মনোরম পরিবেশ বলতে যা বোঝায়, তা ঢাকার মধ্যে পাওয়া যায় না। ঢাকার অদূরে নড়াইলের এত সুন্দর একটা জায়গা, যেখানে আমরা লাখ লাখ পাখি দেখতে পাচ্ছি।

বাগেরহাট থেকে আসা শিক্ষক এফ.এম আজগর আলী বলেন, টিভির পর্দায় দেখেছি এখানে অনেক পাখি দেখা যায়। তাই আমি এখানে এসে অসংখ্য পাখির বিচরণ উপভোগ করছি। বক ও পানকৌড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখে আমার মনে হয় যতবারই এখানে এসেছি যেন প্রথমবার এসেছি।

তিনি বলেন, বিভিন্ন দিক থেকে যখন এখানে পাখিরা আসে, তখন পাখির ডানা ঝাপটানি ও কিচিরমিচির কলরব মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে। এছাড়া এখানকার থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাও আমার কাছে চমৎকার লেগেছে।

অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের ম্যানেজার মুনিব খন্দকার বলেন, এটি প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা একটি পূর্ণাঙ্গ রিসোর্ট। একটা রিসোর্টে যা যা থাকা প্রয়োজন তার সব সুযোগ-সুবিধা এখানে রয়েছে। সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য এখানকার পাখি। প্রায় ৯ থেকে ১০ মাস এখানে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পাখির সমারোহ ঘটে। এখানে নৌকায় করে পাখির খুব কাছে যাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, এখানে থাকার জন্য বৈচিত্র্যপূর্ণ বিভিন্ন কটেজ রয়েছে। এর সঙ্গে এখানে যেসব খাবার পাওয়া যায়, তার অধিকাংশ এখানেই উৎপাদিত। এছাড়াও আউটডোর-ইনডোর বিভিন্ন গেমস, সুইমিংপুল ও লাইসেন্সকৃত বার রয়েছে। এখানে হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সাবেক সদস্য ও অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের চেয়ারম্যান খবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে আর কোনো রিসোর্ট নেই যেখানে এরকম পাখি দেখা যায়। পাখিকে ঘর দিতে হয়, নিরাপত্তা দিতে হয়। তারা এখানে নিরাপদ। তাই তারা এখানে এসে খেলাধূলা করছে,অবস্থান করছে। ফলে অত্র এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান এমনকি দেশের বাইরে থেকেও লোক আসছে,এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে। যারাই আসে তারাই বলে এত সুন্দর প্রকৃতি কোথাও নেই।

—-ইউএনবি