April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, January 10th, 2023, 9:31 pm

নানা উদ্যোগেও কমানো যাচ্ছে না মাদক কারবার

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে নানামুখী উদ্যোগেও আশানুরূপ কাজে আসছে না। বরং দিন দিন বাড়ছেই মাদক মামলা, আসামি ও মাদক জব্দের পরিমাণ। মাদক নিয়ন্ত্রণে ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বছরে গড়ে ৬৫ হাজার ৭১৯টি অভিযান চালানো হয়েছে। সারাদেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩শ’ অভিযান পরিচালনা করছে। ওসব অভিযানে মাদকদ্রব্য জব্দের পাশাপাশি মামলা- গ্রেপ্তার হচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে সংস্থাটি তিন দশকের বেশি সময় ধরে নানামুখী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এমনকি সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকা-ও রয়েছে। বর্তমানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দেশজুড়ে তিন হাজার ৫৯ জন লোকবল নিয়ে কাজ করছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক কর্মসূচি আরো জোরদার এবং অভিযান আরো বাড়ানো জরুরি। বিগত ২০১৮ সালে ৪৭ হাজার ৪০৭টি অভিযান চালিয়ে ১৩ হাজার ৭৯৩টি মামলায় ১৫ হাজার ১১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। ২০১৯ সালে ৬৩ হাজার ৫৫টি অভিযানে ১৭ হাজার ৩০৫টি মামলায় ১৮ হাজার ৩৪৬ জনকে আসামি করা হয়। ২০২০ ও ২০২১ সালেও প্রায় একই চিত্র ছিল। ২০২০ সালে ৬৫ হাজার ১৩৯টি অভিযানে ১৭ হাজার ৩০৪টি মামলায় আসামি ১৮ হাজার ৩২১ জন, ২০২১ সালে ৮৪ হাজার ৫৬২টি অভিযানে ২০ হাজার ৫৯২টি মামলায় আসামি ২১ হাজার ৯৯২ জন। আর ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৯৪ হাজার ৫৬৭টি অভিযান চালিয়ে ২৩ হাজার ২৭০টি মামলায় ২৫ হাজার ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ২৮২টি অভিযান চালানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, অভিযান চালিয়ে প্রতি বছরই বিভিন্ন ধরনের মাদক জব্দ করা হচ্ছে। ২০২০ সালে জব্দ করা হয় ২০ লাখ পিস ইয়াবা। ২০২১ সালে সাড়ে ৩৪ লাখ ও ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জব্দ হয়েছে সাড়ে ৪৫ লাখ পিস ইয়াবা। ২০২০ সালে গাঁজা জব্দ করা হয় ২ হাজার ৭৪২ কেজি, ২০২১ সালে ৪ হাজার ৪১৭ কেজি ও ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জব্দ করা হয় ৮ হাজার ৮৪৬ কেজি। ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ২৯ হাজার ৯৭১টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৩ হাজার ৬০৮টি মামলা করা হয়েছে। তাতে ১৩ হাজার ৬৪৯ জনের সাজা হয়েছে। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪০টি বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও অনুদানের জন্য বরাদ্দ ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তাছাড়া মাদকবিরোধী পোস্টার, লিফলেট তৈরি, বিতরণ, সভা-সমাবেশ, সেমিনার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী শ্রেণি বক্তৃতাসহ নানান ধরনের সচেতনতার কাজ করা হয়। গত বছর সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। ওই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অধিদপ্তর কাজও শুরু করেছে। কিন্তু এত কিছুর পরও মাদক কারবার কমছে না।
এদিকে মাদকের ব্যাপক প্রসার প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞানদের মতে, মাদক শুধু দেশে নয়, সারাবিশ্বেই সমস্যা। তবে এদশে মাদকগুলো খুবই সহজলভ্য হয়ে পড়েছে। অলিগলিতেও ছড়িয়ে গেছে। মাদক নিলে অনেক কিছু থেকে নিরাময় হয় এমন ধারণার কারণেও অনেকে মাদক গ্রহণ করে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সহজলভ্যতা দূর করতে হবে বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যে কোনো ধরনের মাদক বেচাকেনায় বিধি-বিধান থাকা দরকার। আর পরিবার, স্কুল থেকে শুরু করে সব জায়গায় একটি সচেতনতা তৈরি করা জরুরি। সেক্ষেত্রে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করার পাশাপাশি সংশোধনের ব্যবস্থাও করা প্রয়োজন।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক তানভীর মমতাজ জানান, দেশে ৬৪টি জেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকায় অধিদপ্তরের ইউনিট রয়েছে। প্রতিদিন ১০টি করে অভিযান চালালেও আরো বেশি অভিযান হওয়ার কথা। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় দিনে ৩০ থেকে ৫০টি অভিযান করতে হয়। মাসে গড়ে ৫শর বেশি মামলা হয়। শুধু মাদক ধরা নয়, প্রতিরোধের জন্যও অভিযানগুলো চালানো হয়। মাদকের বিস্তার না কমার পেছনে কারণ হলো দেশে প্রচুর মাদক আসছে। তার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশও জড়িত। আমদানি দ্রব্য, খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে নানাভাবে মাদক দেশে আসছে।
সার্বিক বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আজিজুল ইসলাম জানান, সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা গেলে মাদক কারবার অনেকটা কমে যাবে। মাদক সরবরাহ কমানো, ক্ষতি হ্রাস ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। চাহিদা কমিয়ে আনা ও ক্ষতির দিক তুলে ধরাই মূলত এখন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাজ।