নিজস্ব প্রতিবেদক:
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানা উদ্যোগে দেশে অবৈধ অস্ত্রের চোরাচালান ঠেকানো যাচ্ছে না। বরং সীমান্তের ৩০টির বেশি রুট দিয়ে দেশে প্রতিনিয়ত ছোট-বড় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে। অত্যাধুনিক অস্ত্র দেশি-বিদেশি কারবারি মাধ্যমে সীমান্তের ওপার থেকে এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাত দিয়ে ঢুকছে। অস্ত্রবাহক কিংবা চোরাকারবারি প্রায়ই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ধরা পড়ছে। কিন্তু পুলিশি তদন্তে দেখা যায় আটক হওয়া অস্ত্র কারবারি ও ব্যবহারকারী অনেকেই রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ত। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অবৈধ অস্ত্র আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, খুন-খারাবি, চুরি-ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহার হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও হামলা-পাল্টা হামলা ও খুনোখুনিতে অবৈধ অস্ত্রের অবাধ ব্যবহারের তথ্য মিলছে। ইউপি নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তারে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার রোধে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেশজুড়ে বিশেষ অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে ৪৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু তারপরও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ অস্ত্রের চোরাচালন।
সূত্র জানায়, দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো অর্থ জোগানের জন্য কিছু অস্ত্র দেশি সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে একে-৪৭সহ নানা অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তাছাড়া কক্সবাজারে মিয়ানমারের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র এনে দেশি সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি করে। সমুদ্রপথ ব্যবহার করে অস্ত্র নিয়ে আসার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, মোংলা, খুলনা, কুতুবদিয়া, সন্দ্রীপ দিয়ে চোরাচালানীরা অস্ত্র চোরাচালান করে। তাছাড়া বান্দরবান, রাঙামাটির সাজেক, খাগড়াছড়ির রামগড় ও সাবরুম, ফেনী, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, উখিয়া, রামু, টেকনাফ, মহেশখালী, বাঁশখালী, রাউজান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, হিলি, লালমনিরহাটের বুড়িমারী, সিলেটের তামাবিল, জৈয়ন্তিয়াসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র চোরাচালানের তথ্যও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে রয়েছে। আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, কক্সবাজারের চকোরিয়া, মুন্সীগঞ্জের দেশি অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ ও র্যাব। সীমান্তের কাছাকাছি একশ্রেণির বাসিন্দা অবৈধ অস্ত্র চোরাচালানে ব্যবহৃত হয়। সীমান্তের ওপার থেকে কেনা আগ্নেয়াস্ত্রের মূল্য পরিশোধের টাকা দুই সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় মোবাইল ব্যাংকিং, স্থানীয় এজেন্ট ও হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, অস্ত্রধারী কেউ গ্রেফতার হলে অস্ত্রের উৎস, কার হাত ঘুরে কোন পথে এসেছে, কার কাছে অস্ত্র যাচ্ছে ওসব বিষয়ে জেরা করা হয়। জেরায় প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর রুট ও অন্যান্য কারবারি চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাছাড়া দেশে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার রোধ এবং তাৎক্ষণিক তথ্য জানার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) দুটি আলাদা ডাটাবেজ তৈরির কাজ করছে। ডাটাবেজগুলো তৈরি হলে বৈধ-অবৈধ অস্ত্র চিহ্নিত করার কাজ সহজ হবে। সিআইডিতে অটোমেটেড ব্যালাস্টিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এবিআইএস) নামে বিশেষ সফটওয়্যারে দেশের সব বৈধ অস্ত্রের তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কারণ দেশের সব জেলার বৈধ অস্ত্রের তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে ও থানাগুলোয় বিচ্ছিন্নভাবে সংরক্ষিত আছে। এককভাবে কোথাও সংরক্ষণ করা নেই। সেজন্য ডাটা ব্যাংক তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি গত ১০ বছরে দেশে যত অস্ত্র বিক্রি হয়েছে তার যাবতীয় তথ্য অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছে চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ আর্মস ডিলার অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে- এখন থেকে অস্ত্র বিক্রির সময় যত টেস্ট করা হবে সব টেস্টের নমুনা সিআইডিকে দিতে হবে। সিআইডি তা তাদের সফটওয়্যারে সংরক্ষণ করবে। প্রতিটি অস্ত্রেরই একটি ইউনিট ফিচার আছে। ওই ফিচারকে সিআইডির ডাটাবেজে সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে। সিআইডি যখন কোনো ক্রাইম সিন সংগ্রহ করবে সেখানে গুলির ঘটনা ঘটলে প্রথমেই জানা যাবে অস্ত্রটি বৈধ না অবৈধ। একইভাবে দেশে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার রোধে অস্ত্র বিক্রয় ও লাইসেন্সিং পদ্ধতি একটি অটোমেশন সিস্টেমের অধীনে নিয়ে আসছে পুলিশের বিশেষ শাখাও (এসবি)। সংস্থাটি ইতিমধ্যে ফায়ার আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নামে একটি সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে। তার মাধ্যমে আমরা সারা দেশের লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্রের তথ্যগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সফটওয়্যারটি দিয়ে প্রতিটি বৈধ গুলি ও আগ্নেয়াস্ত্র চিহ্নিত করা যাবে। এটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ও বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার কমাবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন্স) হায়দার আলী খান জানান, সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযানের পরও অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলমান আছে। জেলা পুলিশ সুপার ও বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানরা নিজ নিজ ইউনিটে এ বিশেষ অভিযান পরিচালনা ও তদারকি করছেন। অবৈধ অস্ত্রের কারাবার ও মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম