April 23, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, October 23rd, 2021, 4:23 am

নানা ধরনের প্রতারণা হচ্ছে ফেসবুককেন্দ্রিক ব্যবসায়

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ফেসবুককেন্দ্রিক ব্যবসায় নানা ধরনের প্রতারণা হচ্ছে। তার মধ্যে এক ধরনের প্রতারক যাদের কোনো পণ্য কিংবা ব্যবসাই নেই। অথচ ভুয়া পেজ খুলে অন্য কোন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পণ্যের ছবি আপলোড করে ক্রেতা আকৃষ্ট করছে। ওসব প্রতারক ক্রেতার কাছ থেকে পণ্যের অর্ডার নিয়ে অর্থ হাতিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে। পেজ ডিজএ্যাবল করে দিচ্ছে। ক্রেতারা ওই পেজ কিংবা তাদের ফোন নম্বরে খুঁজে না পেয়ে প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারে। ওই প্রতারকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নজরদারি ও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ফেসবুকে কেনাকাটা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগও তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এবং ই-ক্যাব সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনার প্রাদুর্ভাবে ফেসবুককেন্দ্রিক কেনাবেচার জোয়ার আসে। ফেসবুকে অন্তত ১০ লাখ ছোটবড় উদ্যোক্তা রয়েছেন যারা পেজ খুলে ইলেকট্রনিক পণ্য, গেজেটস, ফ্যাশনসামগ্রী, কসমেটিকসসহ নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করছে। কিন্তু ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ফেসবুকে কেনাকাটা নিয়ে অভিযোগ দিলেও গুরুত্ব দেয় না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেজন্যই অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতারকরা নজরদারি ও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্যানুযায়ী দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ৬৩ লাখেরও বেশি। তার মধ্যে মোবাইল ফোন থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে ১০ কোটি ৫৪ লাখ মানুষ। আর ওই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর বড় অংশই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আছে। সর্বশেষ আগস্ট মাসের হিসাবে দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী ৪ কোটি ৮২ লাখ ৩০ হাজার। আর যার ৪০ ভাগ নারী। বিপুলসংখ্যক ওই ব্যবহারকারীর কাছে পণ্য বিক্রির সহজ মাধ্যম ফেসবুক। কিন্তু প্রতারকের নানা কৌশলে ক্রেতা ঠকাচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশে ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তার সংখ্যা ১০ লাখের কম নয়। ই-কমার্স ভিত্তিক কুরিয়ার সেবা ই-কুরিয়ার গড়ে দিনে প্রায় ২৫ হাজার অর্ডার ডেলিভারি দেয়। যার অধিকাংশই ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তাদের অর্ডার। অনলাইন ব্যবসায় ঠকলে প্রতিকারের একমাত্র জায়গা এখন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সংস্থাটিতে সারাদিনই ওই ব্যবসা নিয়ে অভিযোগ জমা পড়ছে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পণ্য না পাওয়ার কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে ৪ হাজার ৯৮২টি অভিযোগ জমা পড়ে। ফেসবুক পেজে পণ্য দেয়ার কথা বলে আর দেয়া হয়নি, অথবা পেজে যে পণ্যের ছবি দেয়া হয় ওই পণ্য না পাওয়ায় অভিযোগ করা হয়। তার মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ৪ হাজার ২৮৮টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছে। তবে অনেক অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণ পেজে পণ্য বা সেবা সরবরাহকারীর ঠিকানা এবং ফোন নম্বরের অনুপস্থিতি। ফলে ভোক্তা প্রতারিত হলেও সরকারের ওই সংস্থাটি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল জানান, ফেসবুকভিত্তিক কেনাকাটায় প্রতারণার ঘটনা নিয়ে ই-ক্যাবে কাছে প্রচুর অভিযোগ আসছে। অনেক উদ্যোক্তারই কোন ট্রেড লাইসেন্স নেই, ডকুমেন্ট নেই। ফলে তারা প্রতারণা করলে ধরা কঠিন। সেজন্য ই-ক্যাব প্রস্তাব দিয়েছে এফ-কমার্স উদ্যোক্তাদের এনআইডির মতো ডকুমেন্ট নিয়ে যেন তাদের ব্যবসায়ের অনুমতিপত্র দেয়া হয়। তাতে যেমন এফ-কমার্স উদ্যোক্তাদের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে, তেমনি প্রয়োজনে সহযোগিতাও করা সম্ভব হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা জানান, ফেসবুকভিত্তিক এফ-কমার্স কর্মকা-ে ক্রেতা ঠকছেন। পণ্য বিক্রি এবং মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এখনো দুর্বলতা আছে। সেক্ষেত্রে বড় সমস্যা পেজগুলোতে উৎপাদনকারীর নাম, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর দেয়া থাকে না। ফলে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিলেও ব্যবস্থা নেয়া যায় না।