May 12, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, July 27th, 2023, 7:36 pm

নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অব্যাহতি পেলেন কক্সবাজারের দায়রা জজ

ফাইল ছবি

মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়া আসামিদের আইনভঙ্গ করে আদেশে মিথ্যা তথ্য লিখে একইদিনে জামিন দেওয়ার ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় কক্সবাজারের জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলকে অব্যাহতি দিয়েছেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে আইন লঙ্ঘন করো জামিন দেওয়া ৯ আসামির জামিন কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) এ আদেশ দেন।

আদেশের আগে কক্সবাজারের দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, ‘বিচারে কেন তাড়াহুড়া করবেন? বিচার তাড়াহুড়া করার বিষয় নয়। যা হয়ে গেল, তা কারও জন্যই কাম্য নয়।’

আজও হাইকোর্টে হাজির হন জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। তার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ। আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন; সঙ্গে ছিলেন মো. আবুল কাশেম ও আরিফ চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

জমি দখল নিয়ে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে কক্সবাজারের মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ভুট্টোসহ নয়জনের বিরুদ্ধে একই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম রিনা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-১ ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী দ্রুত বিচার আদালতে নালিশি মামলা করেন।

এ মামলায় আসামিরা হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইলে হাইকোর্ট ১১ এপ্রিল তাদের ৬ সপ্তাহের জামিন দিয়ে কক্সবাজারের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন।

হাইকোর্টের সেই আদেশ মোতাবেক গত ২১ মে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে হাকিম আদালতে জামিন চান। আদালত ৯ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

কিন্তু একই দিন আসামিরা কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। তখন জেলা ও দায়রা জজ তাদের জামিন দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন রিনা।

এই আবেদনের শুনানিকালে গত ২১ জুন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ ব্যাখ্যা জানাতে কক্সবাজারের দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।

আইনজীবী বলেন, ২১ মে দুপুর ১২টার দিকে ৯ আসামি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন। এর আগেই মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত আদেশের কপি পাননি উল্লেখ করে সকাল ১০টার দিকে আদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জামিনের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হলফনামাসহ আবেদন করেন।

এক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জামিন নামঞ্জুরের আদেশসহ অন্য কাগজপত্রের প্রত্যায়িত অনুলিপি বা প্রত্যায়িত অনুলিপির ফটোকপি দাখিল করা হয়নি। আসামির হাজতবাসের মেয়াদসহ সার্বিক বিবেচনায় তাদের জামিন মঞ্জুর করা হয়- আদেশে উল্লেখ করেছেন জেলা জজ।

অথচ ৯ আসামি এক মুহূর্তও হাজতে ছিলেন না। শুনানিতে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলে জেলা ও দায়রা জজ আসামিদের কীভাবে জামিন দিলেন- এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মামলার যাবতীয় নথি নিয়ে আসতে বলেন আদালত।

পরে গত ২০ জুলাই আদালতে হাজির হয়ে নিঃর্শত ক্ষমা প্রার্থনা করেন কক্সবাজারের দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। শুনানি নিয়ে আদালত আজ আদেশের জন্য দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ তাকে ক্ষমা করে জামিন বাতিল প্রশ্নে রুল জারির এ আদেশ হয়।

আদেশের পর আইনজীবী আলতাফ হোসেন বলেন, নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার পর কক্সবাজারের দায়রা জজকে অব্যাহতি দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই মামলায় দায়রা জজের দেওয়া জামিন আদেশ কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন। প্রতিপক্ষকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

শুনানির বিষয়ে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, দায়রা জজ মন থেকে ক্ষমা চেয়েছেন কি না, তা জানতে চান আদালত। তখন দায়রা জজ বলেন, তিনি মন থেকেই ক্ষমা চেয়েছেন। যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা সবার জন্য লজ্জার বলে শুনানিতে মন্তব্য করেন আদালত।

—-ইউএনবি